AnneFrank1940

অ্যানা ফ্র্যাঙ্ক (Anne Frank), এক হতভাগ্য কিশোরীর স্মৃতিগাথা

অ্যানা ফ্র্যাঙ্ক (Anne Frank) এর জন্ম ১৯২৯ সালের ১২ জুন। ১৯৩৩ সালে অ্যানে ফ্র্যাঙ্ক, তার বোন এবং বাবা-মাসহ জার্মানি থেকে নেদারল্যান্ডসে চলে এসেছিল। এটা ছিল এমন একটা সময়, যখন হিটলার সদ্য জার্মানির ক্ষমতায় এসেছিলেন, এবং ইহুদীদের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলেছিলেন।

সে ছিল এমন একজন ইহুদী কিশোরী, যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯৪২ সালের দিকে) নাৎসি-অধিষ্ঠিত নেদারল্যান্ডস এর আমস্টারডামে তার বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পিছনে একটি গোপন অ্যাপার্টমেন্টে আত্মগোপন করে দু’বছর কাটিয়েছিল। মাত্র ১৫ বছর বয়সে, ১৯৪৪ সালে অ্যানে সহ তার পরিবারের সদস্যদেরকে নাৎসিরা ধরে নিয়ে যায়, এবং কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে প্রেরণ করে।

১৯৪৫ সালের মার্চ মাসে বার্গেন-বেলসেন (Bergen-Belsen) কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে  অ্যানা ফ্র্যাঙ্ক (Anne Frank) মারা যায়। তবে তার বাবা সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন এবং ডায়েরীটি খুঁজে পেয়েছিলেন এবং তা প্রকাশ করেছিলেন। এটি ছিল এমন একটি ডায়েরী, যেটি অ্যানে ফ্র্যাঙ্ক আত্মগোপনে থাকা কালীন সময়ে লিখেছিল।

১৯৪৪  তার ডায়েরিটি প্রকাশের পর থেকে এটি ৭০ টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে এবং কয়েক মিলিয়ন মানুষ পড়েছে। হলোকাস্টের (Holocaust) সময়কালে সর্বাধিক বহুল পঠিত রচনাগুলির মধ্যে এটি ছিল  একটি। মর্মস্পর্শী লেখনি অ্যান ফ্র্যাঙ্ককে হলোকাস্টের সময় হত্যা করা শিশুদের প্রতীক হিসাবে পরিণত করেছিল সারা বিশ্বের কাছে।

অ্যানে ফ্র্যাঙ্ক (Anne Frank) কে ছিল?

Anne_Frank
Anne_Frank

অ্যানা ফ্র্যাঙ্ক (Anne Frank) ১৯২৯ সালের ১২ জুন তারিখে অ্যানেলিস মেরি ফ্রাঙ্ক, জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে জন্মগ্রহণ করেছিল । এডিথ হল্যান্ডার ফ্র্যাঙ্ক এবং অট্ট ফ্র্যাঙ্কের আদুরে কন্যা সন্তান ছিল সে। 

চার বছর বয়সে ১৯৩৩ সালের জানুয়ারিতে অ্যাডলফ হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলর নির্বাচিত হন। জার্মানির ক্ষমতায় আসার পরে তিনি এবং তাঁর নাৎসি সরকার জার্মানির ইহুদী নাগরিকদের অত্যাচারের লক্ষ্যে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।

১৯৩৩ সালের শেষের দিকে অটো ফ্রাঙ্ক আমস্টারডামে চলে আসেন, সেখানে তিনি একটি ছোট কিন্তু সফল ব্যাবসা (জ্যাম/জেলি তৈরি) শুরু করেছিলেন। বেশ কয়েকদিন জার্মানিতে দাদির কাছে থাকার পড়ে অ্যানা ফ্র্যাঙ্ক (Anne Frank) ১৯৩৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডাচ রাজধানীতে তার বাবা-মা এবং বোন মারগোট (১৯২৬-১৯৪৫) এর সাথে যোগ দেন।

ফ্রাঙ্করা দ্রুত আমস্টারডামে বসতি স্থাপন করেছিল। অটো ফ্র্যাঙ্ক তার ব্যবসা প্রসারের দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন। অ্যানে এবং মারগট তাদের নতুন বিদ্যালয়ে যাওয়া শুরু করেছিল। ইহুদী এবং অ-ইহুদীরা একত্রে মিলে বন্ধুদের একটি বিশাল বৃত্ত তৈরি করেছিল সে সময়। ১৯৩৯ সালে, অ্যানের দাদি জার্মানি ছেড়ে অ্যামস্টারডামে তাদের কাছে চলে যায় এবং ১৯৪২ সালে তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ফ্রাঙ্কদের সাথেই ছিলেন।

আরও পড়ুনঃ- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (second world war) পরের ইহুদী মাইগ্রেশন

নাৎসিদের আমস্টারডাম দখল

১৯৪০ সালের ১০ মে জার্মানি নেদারল্যান্ডসে আক্রমণ করে। আক্রান্ত হওয়ার পাঁচ দিন পরে, দেশটি সরকারীভাবে জার্মানদের নিকট আত্মসমর্পণ করে। নেদারল্যান্ডস জার্মানদের নিয়ন্ত্রণে আসার সাথে সাথে, নাৎসিরা দ্রুত ইহুদী-বিরোধী আইন ও নির্দেশনা জারি করে এবং তা বাস্তবায়ন করতে শুরু করে।

স্বাভাবিক চলাফেরা ছাড়াও, ইহুদীদের পার্কের বেঞ্চে বসতে, পাবলিক সুইমিং পুল ব্যাবহার করতে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় এমন অনেক নির্দেশনা জারী করা হয়। এমনকি ইহুদীদের স্কুলে যাওয়ার উপরও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিলো। স্বাভাবিকভাবেই অ্যানের এরপর থেকে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। 

জার্মানদের নিপীড়ন বৃদ্ধি এবং ফ্রাঙ্ক পরিবারের লুকিয়ে পড়া

The_Diary_of_Anne_Frank_1959_মুভি
The_Diary_of_Anne_Frank_1959_ মুভি

১৯৪১ সালের সেপ্টেম্বরে, অ্যানা ফ্র্যাঙ্ক (Anne Frank) কে ইহুদী লাইসিয়ামে (ইহুদীদের জন্য নির্দিষ্ট বিদ্যালয়) যোগ দিতে তার মন্টেসরি স্কুল ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল। ১৯৪২ সালের মে মাসে, জার্মান সরকার একটি নতুন আদেশ জারী করে, যেখানে ৬ বছর বয়সের সমস্ত ইহুদীদের তাদের পোশাকের উপর ডেভিডের একটি হলুদ তারা পরতে বলা হয় (বলা যায় বাধ্য করা হয়েছিলো)।

নেদারল্যান্ডসে বসবাসরত ইহুদীদের উপর জার্মান অত্যাচারের ধরন প্রথম দিকে অনেকটা জার্মানির ইহুদী অত্যাচারের সাথে অত্যন্ত মিল ছিল। তাই ফ্রাঙ্করা বুঝতে পেরেছিল যে, আগামী দিনগুলোতে তাদের জন্য এখানকার জীবনযাত্রা আরও খারাপ হতে চলেছে। ফ্রাঙ্করা এও বুঝতে পেরেছিল, দ্রুত তাদের পালানোর উপায় খুঁজে পাওয়া দরকার।

সীমান্ত বন্ধ থাকায় নেদারল্যান্ডস ছেড়ে যেতে না পেরে, ফ্রাঙ্করা নাৎসিদের থেকে পালানোর একমাত্র উপায় হিসেবে আত্মগোপনের পথ বেছে নেয়। এটি ছিল সেই সময়, যখন অ্যানে তার ডায়েরি পেয়েছিলো না। এর এক বছর পরে, অ্যানে তার জন্মদিনের উপহার হিসেবে একটি ডায়েরি পায়।

১৩ তম জন্মদিনে (১২ জুন, ১৯৪২), সে একটি লাল-সাদা-চেকার্ড অটোগ্রাফ অ্যালবাম পেয়েছিল যা সে ডায়েরি হিসাবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন। আত্মগোপনে থাকা সময়ে অ্যানা ফ্র্যাঙ্ক (Anne Frank) তার ডায়েরিতে লিখেছিল, সে সময়ে তাদের প্রতিদিনের জীবন কেমন ছিল। সে লিখেছিলেন তাঁর বন্ধুদের সম্পর্কে, স্কুলে যে গ্রেড পেয়েছিল সে সম্পর্কে, এমনকি পিং পং খেলা বিশয়েও ডায়েরিতে লিখেছিল সে।

ফ্রাঙ্করা তাদের লুকানোর জায়গায় যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল ১৯৪২ সালের ১৬ জুলাই, কিন্তু তাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন হয়ে যায়, যখন ১৯৪২ সালের ৫ জুলাই একটি কল-আপ নোটিশ পান। পালানোর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পরে, ফ্র্যাঙ্ক পরিবার পরের দিন তাদের মেরুভেপলিনের ৩৭ নং অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে চলে যায়। জার্মানরা যাতে বুঝতে পারে যে, ফ্রাঙ্ক পরিবার সুইজারল্যান্ডে পালিয়ে গিয়েছে, এ জন্য পালানোর সময় ফ্রাঙ্করা একটি ধাঁধা রেখে যায়।

আরও পড়ুনঃ- হাইনরিখ হিমলার, হলোকাস্ট এর মুল নায়ক এবং এস এস নেতা

“সিক্রেট আনেক্স” (“Secret Annex”)

অ্যানাদের আত্মগোপন করার জায়গাটি ছিল অট্ট ফ্র্যাঙ্কের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উপরের অংশে ২৬৩ প্রিন্সেংগ্রাচ্টে (Prinsengracht)। তাদের সাথে আরও তিন জন ব্যাবসায়িক সহযোগী (হারমান ভ্যান পেলস, তাঁর স্ত্রী অগাস্টে এবং তাদের পুত্র পিটার) তাদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন, এবং এরাও ছিল ইহুদী।

এ সময় ফ্রাঙ্ক পরিবার তাদের খাবার ও সুরক্ষা দিয়েছিলো। অ্যানা ফ্র্যাঙ্ক (Anne Frank) তাদের লুকানোর স্থানটিকে  “সিক্রেট আনেক্স” (“Secret Annex”) নামে ডাকতো। ছোট অ্যাপার্টমেন্টে আট জনের জীবন ধারণ ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছিল। এই আট জনের দলটি নাৎসিদের হাতে ধরা পরার ভয়ে সব সময় আতঙ্কিত থাকতো এবং এরা কখনোই বাইরে যেতে পারত না।

নীচের গুদামে কাজ করা লোকদের দৃষ্টি  এড়াতে তাদের দিনের বেলাতেও চুপচাপ থাকতে হতো। অ্যানে ফ্রাঙ্কের পরিবার আত্মগোপনে যাওয়ার একমাস আগে, তার ১৩ তম জন্মদিনে যে ডায়েরি সে পেয়েছিল, সেখানে সে তাঁর পর্যবেক্ষণ ও অনুভূতিগুলি দীর্ঘায়িত করে লিখে রেখেছিল। 

ডায়েরিতে কলি নামে এক কল্পনাপ্রসূত বন্ধু তৈরি করেছিল সে। অ্যানে ফ্র্যাঙ্ক (Anne Frank) তাদের লুকিয়ে থাকা জীবন সম্পর্কে লিখেছিল। একাকীত্বের অনুভূতি কেমন এবং কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা কতোটা হতাশার সেটা সেটা তার ডায়েরিতে লিখেছিল। এখানে ছেলেদের উপর ক্রাশ, মায়ের সাথে তর্ক ও বোনের প্রতি অসন্তুষ্টির মতো কিশোর বেলার বিষয়গুলি বিশদভাবে বর্ণনা করেছে সে।

যুদ্ধ, মানবতা এবং নিজের পরিচয় সম্পর্কে লেখার সময় অ্যানে ফ্র্যাঙ্কের গভীর অন্তর্দৃষ্টি এবং পরিপক্কতা প্রকাশ পেয়েছিলো। আত্মগোপনে থাকাকালীন সময়ে ছোট গল্প এবং প্রবন্ধ লিখেছিল।

অ্যানে ফ্র্যাঙ্ক (Anne Frank) কে খুঁজে পাওয়া এবং আটক হওয়া

Wassenbeeldenmuseum_Madame_Tussaud_in_Amsterdam_Anne_Frank_Bestanddeelnr
Madame_Tussaud_in_Amsterdam_Anne_Frank

অ্যানে ফ্র্যাঙ্ক (Anne Frank) যখন আত্মগোপনে গিয়েছিল, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর এবং যখন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তখন তার বয়স হয়েছিলো ১৫ বছর। ১৯৪৪ সালের ৪ আগস্ট সকালে একজন এসএস কর্মকর্তা এবং বেশ কয়েকজন ডাচ পুলিশ সদস্য সকাল ১০ টা বা সাড়ে দশটা নাগাদ ২৬৩ প্রিন্সেনগ্রাচট এ আসেন। তারা সরাসরি, সেখানে রাখা বুককেসের কাছে গিয়েছিল, এটি অ্যানেদের সিক্রেট দরজাটিকে লুকিয়ে রেখেছিল।

সিক্রেট অ্যানেক্সে বসবাসকারী আটজনকেই গ্রেপ্তার করা হয় এবং নেদারল্যান্ডসের ওয়েস্টারবার্ক শিবিরে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় অ্যানের ডায়েরিটি মাটিতে পড়েছিল এবং মিয়েপ জিৎস (Miep Gies) এটি সংগ্রহ করেছিলেন এবং নিরাপদে সংরক্ষণ করেছিলেন।

তাদের গ্রেপ্তারের পরে, ফ্রাঙ্কস, ভ্যান পেলস এবং ফ্রিটজ ফেফারকে গেস্টাপো বাহিনী উত্তর নেদারল্যান্ডসের ওয়েস্টারবার্ক ক্যাম্পে প্রেরণ করেছিল। সেখান থেকে, ১৯৪৪ সালের সেপ্টেম্বরে, এদেরকে ফ্রেইট ট্রেনের মাধ্যমে জার্মান-অধিকৃত পোল্যান্ডের আউশভিটস-বারকেনো ডেথ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।

অ্যানা ফ্রাঙ্ক (Anne Frank) এর মৃত্যু

অ্যানা ফ্রাঙ্ক (Anne Frank) ও মার্গট ফ্র্যাঙ্ককে আউশভিটস কন্সেট্রেশন ক্যাম্পের গ্যাস চেম্বারে তাত্ক্ষণিকভাবে পাঠান হয়েছিল না এবং তার পরিবর্তে উত্তর জার্মানির কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প বার্গেন-বেলসেনে (Bergen-Belsen) প্রেরণ করা হয়েছিল তাদের।

১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে অ্যানে ফ্রাঙ্ক এর বোন বার্জেন-বেলসেনে টাইফাসের (প্রচন্ড জ্বর) কারণে মারা যান, এবং কিছুদিন পড়ে অ্যানে ফ্রাঙ্কও ঐ একই কারনে মৃত্যু বরন করেন। তাদের মৃতদেহ একটি গণকবরে ফেলে দেওয়া হয়। এর বেশ কয়েক সপ্তাহ পরে, ১৯৪৫ সালের ১৫ এপ্রিল ব্রিটিশ সেনারা শিবিরটি মুক্ত করে।

১৯৪৪ সালের জানুয়ারিতে অ্যাডিথ ফ্র্যাঙ্ক (অ্যানে ফ্রাঙ্কের মা) আউশভিটসে অনাহারে মারা যান। ১৯৪৪ সালে সেখানে পৌঁছানোর পর হার্মান ভ্যান পেলস, আউশভিটসের গ্যাস চেম্বারে মারা যান। তাঁর স্ত্রী সম্ভবত ১৯৪৫ সালের বসন্তে চেক প্রজাতন্ত্রের থেরেসিয়েনস্টাড্ট কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে (Theresienstadt concentration camp) মারা গিয়েছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়।

পিটার ভ্যান পেলস ১৯৪৫ সালের মে মাসে অস্ট্রিয়ার মাউথাউসেন কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে (Mauthausen concentration camp) মারা যান। ফ্রিটজ ফেফার ১৯৪৪ সালের ডিসেম্বরের শেষদিকে জার্মানির নিউইনগ্যামে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে (Neuengamme concentration camp) অসুস্থতায় মারা যান ।

অ্যানা ফ্রাঙ্ক (Anne Frank) র বাবা অট্ট ছিলেন এই গ্রুপের একমাত্র সদস্য যিনি সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন। ১৯৪৫ সালের ২৭ জানুয়ারি সোভিয়েত সেনাবাহিনী কর্তৃক উদ্ধারকৃত আউশভিটস থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন তিনি।

আরও পড়ুনঃ- জোসেফ গোয়েবেলস, অ্যাডল্ফ হিটলারের বিশ্বস্ত বন্ধু এবং জার্মান ফ্যাসিবাদী নীতি বাস্তবায়নের অন্যতম প্রধান ব্যাক্তি

অ্যানা ফ্র্যাঙ্কের ডায়েরি প্রকাশ

Diary_of_Anne_Frank_28_sep_1942
Diary_of_Anne_Frank_28_sep_1942

অটো ফ্রাঙ্ক অউশভিটস থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে আমস্টারডামে ফিরে আসেন। মিয়েপ জিৎস (Miep Gies) তাকে পাঁচটি নোটবুক এবং অ্যানের লেখা সম্বলিত প্রায় ৩০০ টি আলগা কাগজ দিয়েছিলেন। নাৎসিরা যখন ফ্রাঙ্কদের গ্রেপ্তার করেছিলো।

তার কিছুক্ষণ পরে সিক্রেট আনেক্স থেকে এই জিনিসগুলি মিয়েপ জিৎস উদ্ধার করেছিল এবং সেগুলি তার ডেস্কে লুকিয়ে রেখেছিল। (মার্গট ফ্র্যাঙ্কও একটি ডায়েরি লিখেছিল, কিন্তু এটি কখনও আর পাওয়া যায়নি) অটো ফ্র্যাঙ্ক জানতেন যে অ্যানা ফ্রাঙ্ক (Anne Frank) একজন লেখক বা সাংবাদিক হতে চেয়েছিলেন এবং তিনি আশা করেছিলেন তাঁর যুদ্ধকালীন লেখাগুলি একদিন প্রকাশিত হবে।

এমনকি নির্বাসিত ডাচ সরকারী আধিকারিকের কাছ থেকে ১৯৪৪ সালের মার্চ মাসে রেডিও সম্প্রচার শোনার পরে অ্যান তার প্রজন্মের জন্য ডায়েরি সম্পাদনা করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, তিনি ডাচ জনগণকে জার্নাল এবং চিঠিগুলি রাখার জন্য অনুরোধ করেছিলেন যা নাৎসিদের অধীনে জীবন কেমন ছিল তার রেকর্ড সরবরাহ করতে সহায়তা করে।

তাঁর মেয়ের লেখাগুলি তাঁর কাছে ফিরে আসার পরে অটো ফ্র্যাঙ্ক এগুলোর একটি পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছিলেন যা ১৯৪৭ সালে নেদারল্যান্ডসে “Het Acheterhuis” (“Rear Annex”) “হেট অ্যাকিটারহুইস” (“রিয়ার আনেক্স”) শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল। যদিও মার্কিন প্রকাশকরা প্রথমদিকে কাজটিকে খুব হতাশাজনক ও ম্লান হিসাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

শেষ পর্যন্ত ১৯৫২ সালে আমেরিকাতে এটি “একটি তরুণীর ডায়েরি” নামে প্রকাশিত হয়। বিশ্বব্যাপী ৭০টি ভাষায় এটি অনুবাদ করা হয়েছে এবং এর কোটি কোটি কপি বিক্রি করতে গিয়ে এই বইটিকে মানব চেতনার অবিনাশী প্রকৃতিক প্রমাণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এটি সারা বিশ্বের স্কুলগুলিতে পড়া প্রয়োজন এবং মঞ্চ এবং পর্দার জন্য মানিয়ে নেওয়া হয়েছে। অ্যানা ফ্র্যাঙ্ক (Anne Frank) যেখানে ডায়েরীটি লিখেছিলেন, সেটি বর্তমানে “অ্যান ফ্র্যাঙ্ক হাউস” নামে পরিচিত। তার জীবনের উদ্দেশ্যে উত্সর্গীকৃত একটি জাদুঘর সেখানে রয়েছে এবং এটিীখন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত।

 

তথ্যসূত্রঃ- https://www.history.com/topics/world-war-ii/anne-frank-1

https://www.annefrank.org/en/anne-frank/who-was-anne-frank/

https://www.thoughtco.com/anne-frank-profile-1779480

https://en.wikipedia.org/wiki/Anne_Frank

https://www.livescience.com/59458-anne-frank-history-legacy.html

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top