auschwitz concentration camp

আউশভিটস কনসেন্ট্রেশন (Auschwitz concentration camp) এবং ডেথ ক্যাম্প

আউশভিটস ছিল নাৎসিদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একাধারে কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্প এবং ডেথ ক্যাম্প উভয়ই হিসাবে নির্মিত একটি কসাইখানা। নাৎসিদের দ্বারা নির্মিত ক্যাম্পগুলোর মধ্যে এটি ছিল বৃহত্তম এবং এখন পর্যন্ত নির্মিত সবচেয়ে কার্যকর ধারাবাহিক গণহত্যা কেন্দ্র।

এখানে ১১ লক্ষ মানুষকে খুন করা হয়েছিল, যাদের বেশিরভাগই ছিল ইহুদী। সে সময় আউশউইজ, মৃত্যু, হলোকাস্ট এবং ইউরোপীয় ইহুদিদের ধ্বংসের প্রতীক হয়ে উঠেছিলো। এ ডেথ ক্যাম্পটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪০ সালের মে মাসে এবং ১৯৪৫ সালের ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত এর কার্যক্রম চলমান ছিল। ক্যাম্পটির কমান্ড্যান্টস, ছিলেনঃ- রুডলফ হ্যাস, আর্থার লাইবেহেনশেল, রিচার্ড বার।

প্রিয় পাঠক, এ লেখাটি হয়তো অনেকের কাছেই বীভৎস লাগতে পারে, কিন্তু এখান থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পৃথিবী একটি বার্তা নিশ্চয়ই পেয়েছিল বলে প্রাথমিক ভাবে আমার মনে হয়, কিন্তু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আমার সে ধারনাকে ভুল প্রমান করেছে।

সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাস ঘাটলে অনেক জায়গাতেই আমরা এ ধরণের বর্বরতা দেখতে পাবো। তো যাইহোক, চলুন সংক্ষিপ্তভাবে জেনে আসি আউশভিটস কনসেন্ট্রেশন এবং ডেথ ক্যাম্পটি সম্পর্কে। 

আউশউইজ প্রতিষ্ঠিত হয় যে ভাবে

১৯৪০ সালের ২৭ এপ্রিল, হেনরিখ হিমলার পোল্যান্ডের ওসভিয়াসিমের (ক্রাকোর প্রায় ৩৭ মাইল বা ৬০ কিলোমিটার পশ্চিমে) কাছে একটি নতুন শিবির নির্মাণের নির্দেশ দেন।

আউশভিটস কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প (“অউশভিটস” জার্মান “বানান” ওসভিয়াসিম “) দ্রুত বৃহত্তম নাৎসি কনসেন্ট্রেশন এবং মৃত্যু শিবিরে পরিণত হয়ে ওঠে। মিত্র বাহিনী দ্বারা উদ্ধারের সময়, আউশভিটসে তিনটি বড় ক্যাম্প এবং ৪৫ টি সাব-ক্যাম্প খুঁজে পাওয়া যায়।   

আউশভিটস প্রথমে (বা “মূল শিবির”) আসলে একটি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প ছিল। এই ক্যাম্পটিতে বন্দী এবং কাপোসদেরকে (কাপোস ছিলো সেই সব বন্দী যারা নাৎসিদের সাথে একই নাৎসি শিবিরে বন্দী এবং অন্যদের উপরে নেতৃত্ব বা প্রশাসনিক ভূমিকা পালন করার জন্য সহযোগিতা করতো, এদেরকে সারকমান্ডো নামেও ডাকা হতো) রাখা হতো।

এটি ছিল মেডিকেল পরীক্ষার অন্যতম একটি কেন্দ্র এবং এর ১১ নম্বর ব্লকের (গুরুতর নির্যাতনের একটি জায়গা) ব্ল্যাক ওয়াল (ফাঁসির স্থান) এখনো আউশভিটসের প্রবেশপথে, সেই কুখ্যাত চিহ্নটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আউশভিটসের দ্বিতীয় অংশের কাজ (বা “বারকেনোউ”) ১৯৪৪ সালের প্রথম দিকে সম্পন্ন হয়েছিল। বারকেনো অংশটি নির্মিত হয়েছিল এটির প্রথম স্থাপনা থেকে প্রায় ১.৯ মাইল (৩ কিলোমিটার) দূরে। ধারণা করা হয়, আউশভিটস মৃত্যু শিবিরের আসল হত্যা কেন্দ্র ছিল এই বারকেনো।

বারকেনোর ডেথ ক্যাম্পটি ছিল অনেক বেশি ভয়ঙ্কর এবং সেখানে অপেক্ষাকৃত অত্যাধুনিক ও ছদ্মবেশী গ্যাস কক্ষগুলি সংযুক্ত করা হয়েছিল। প্রথমটির চেয়ে অনেক বেশি বন্দীদের এখানে রাখা হতো। বিশেষকরে মহিলাদের এবং জিপসিদের জন্য নতুন স্থাপনাটি এ ক্যাম্পের সাথে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিলো।

আউশ্ভিটসের তৃতীয় বা সর্বশেষ মনোওয়ুইজের (“বুনা-মনোভিত্জ”) সিন্থেটিক স্থাপনাটিকে, রাবার কারখানার কাজে বাধ্য করা হতো এমন শ্রমিকদের “আবাসন” হিসাবে নির্মিত হয়েছিল। এ অংশের অন্যান্য ৪৫ টি উপ-শিবিরে বন্দীদের আটক এবং বাধ্যতামূলক শ্রমের জন্য ব্যবহার করা হতো।

আরও পড়ুনঃ- ইহুদী নিধন। ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায় যা হলোকাস্ট নামে পরিচিত।

ইহুদীসহ এবং অন্যান্য বন্দীদের নির্বাচন পদ্ধতি

ইহুদীদের ট্রেনে উঠানো হচ্ছে

ইহুদী, জিপসি (রোমা), সমকামী, অসোকী, বিভিন্ন অপরাধে অপরাধী এবং যুদ্ধবন্দীদের প্রথমে একত্র করা হতো। এরপর ট্রেনে করে গবাদি পশুর মতো গাদাগাদি করে নিয়ে আসা হতো (বিষয়টি বর্ণনার চেয়ে বিভিন্ন ফুটেজ দেখা অনেক বেশি কস্টকর) এবং আউশ্ভিটসে প্রেরণ করা হতো।

ট্রেনগুলি যখন আউশ্ভিটসের দ্বিতীয় স্থাপনা বারকেনোউ স্টেশনে এসে থামতো, তখন নতুন আগতদেরকে তাদের সমস্ত জিনিসপত্র বোর্ডে ছেড়ে যেতে বলা হতো। ট্রেন থেকে নামিয়ে বন্দীদের রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মের (“র‌্যাম্প” নামে পরিচিত) উপর জড়ো হতে বাধ্য করা হতো।

যে পরিবারগুলি একসাথে ট্রেন থেকে নামতো, তাদের দ্রুত এবং অত্যন্ত নির্মমভাবে একজন এসএস অফিসারের নির্দেশে পৃথক করা হতো। এ সময় সাধারণত, একজন নাৎসি চিকিৎসক, প্রতিটি ব্যক্তিকে দুটি লাইনে দাঁড়ানোর  আদেশ দিতো। বেশিরভাগ মহিলা, শিশু, বয়স্ক পুরুষ এবং যাদের অযোগ্য বা অস্বাস্থ্যকর দেখায় তাদের বাম দিকে দাঁড়াতে বলা হতো। যদিও বেশিরভাগ যুবক এবং অন্যরা যাদের কঠোর পরিশ্রম করার পক্ষে যথেষ্ট দ্‌ঢ় মনে হয়, তাদের ডানদিকে প্রেরণ করা হতো।

আসলে তাদের সঙ্গে কি করা হচ্ছে সে বিষয়টি দুই গ্রুপের মানুষের কাছেই অজানা ছিলো। বাম লাইনের লোকদের গ্যাস চেম্বারে তাত্ক্ষণিকভাবে প্রেরণ করা হতো। এবং ডান পাশের লাইনের মানুষদেরকে শিবিরে বন্দী করা হতো। (বেশিরভাগ বন্দীই অনাহারে, এক্সপোজারে, জোর করে পরিশ্রম করিয়ে / অথবা নির্যাতনে মারা যেত।)

একবার নির্বাচন সমাপ্ত হওয়ার পরে, আউশ্ভিটসের বন্দীদের একটি নির্বাচিত দল (“কানাদা” এর অংশ) ট্রেনে রেখে যাওয়া সমস্ত জিনিসপত্র সংগ্রহ করে গুদামে সংরক্ষণ করতো। এইসব জিনিসগুলি (পোশাক, চশমা, ওষুধ, জুতা, বই, ছবি, গহনা এবং প্রার্থনা শাল সহ) পর্যায়ক্রমে বান্ডিল করে জার্মানিতে ফেরত পাঠানো হতো।

নাৎসিদের চরম নৃশংসতা 

যে লোকদের বাম দিকে দাড় করিয়ে রাখা হতো, অর্থাৎ যারা আউশভিটসে পৌঁছেছিল তাদের কখনই বলা হয়নি যে তাদের মৃত্যুর জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। গণহত্যার পুরো ব্যবস্থাতেই নাৎসিরা তাদের শিকারদের কাছ থেকে এই গোপনীয়তা রক্ষার উপর বেশ গুরুত্ব প্রদান করতো।

ভুক্তভোগীরা যদি জানত যে, তাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে, তবে তারা বিদ্রোহ করতে পারে, সে ভাবনা থেকেই মূলত এ ধরণের ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছিলো।

ইহুদীসহ বন্দীরা আসলে জানত না তাদের কি করতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফলে ভুক্তভোগীরা এই আশায় খুব সহজেই নাৎসিদের বিশ্বাস করতো। নাৎসিদের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হতো যে, তাদের কাজ করার জন্য অন্যত্র প্রেরণ করা হচ্ছে। এমনকি গ্যাস চেম্বারে নিয়ে যাবার সময়ও হতভাগ্যদের বলা হতো যে, তাদের প্রথমে জীবাণুমুক্ত হওয়ার দরকার তাই একসঙ্গে স্নানের ঘরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

সেই সকল হতভাগ্যদের প্রথমে একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হতো, যেখানে তাদের সমস্ত পোশাক খুলে ফেলতে বলা হতো। পুরোপুরি নগ্ন অবস্থায়, এই সব পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদের একটি বড় কক্ষের দিকে নিয়ে যাওয়া হতো, যা দেখতে অনেকটা বড় গোসল খানার (দেওয়ালে এমনকি জাল ঝরনার মাথাও ছিল) মতো দেখাতো।

এসব কক্ষের দরজা বন্ধ হয়ে গেলে, ছাঁদের একটি খোলা অংশ দিয়ে,(যা অনেকটা জালির মতো দেখতে এবং যাকে জাইক্লন-বি প্যালেটস বলা হত) বিষাক্ত গ্যাস ছেড়ে দেয়া হতো।

গ্যাস দ্রুত মৃত্যু ঘটানোর ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর ছিল, তবে এতে অনেকেরই তাত্ক্ষণিক মৃত্যু হতো না। হয়তো অনেকেই বেঁচে থাকতো এবং তাদের পরবর্তীতে গুলি করে অথবা অন্যকোন ভাবে মৃত্যু নিশ্চিত করা হতো। ভুক্তভোগীরা, গ্যাস চেম্বারে অবশেষে বুঝতে পারতো যে এটি কোনও সাধারন গোসল খানা নয়।

কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে, তারা একে অপরের উপরে ঝাঁকুনি দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য একটু যায়গা খোঁজার চেষ্টা চালাতো। অনেকেই আঙুল দিয়ে রক্ত ​​ঝরা না পর্যন্ত দরজাতে আঁচড় কাটা থেকে শুরু করে, বিভিন্ন রকমের আঘাত করতে থাকতো।

ঘরের সবাই মারা যাওয়ার পরে, এক প্রকার বিশেষ বন্দী যাদের সারকমান্ডো বলা হতো তারা গ্যাস চেম্বার থেকে মৃতদেহগুলি সরিয়ে ফেলত। মৃতদেহগুলিকে চরম অবমানোনার সাথে বিভিন্ন চুল্লিতে নিয়ে যাওয়া হতো পুড়িয়ে ফেলার জন্য।

যদিও অউশ্ভিটসের প্রথম অংশে একটি গ্যাস চেম্বার ছিল, তবুও বেশিরভাগ গণহত্যা ঘটেছিল দ্বিতীয় অউশ্ভিটজ বারকেনউতে। এখানে চারটি প্রধান চেম্বার ছিল, যার প্রত্যেকটিই ছিল নিজস্ব এক একটি শ্মশান। এই গ্যাস চেম্বারে প্রতি দিন প্রায় ৬,০০০ মানুষকে হত্যা করা হতো। 

আরও পড়ুনঃ- হাইনরিখ হিমলার, হলোকাস্ট এর মুল নায়ক এবং এস এস নেতা

আউশভিটস কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের জীবন

ক্যাম্পে বাছাই প্রক্রিয়া চলাকালীন যাদের ডানদিকের লাইনে প্রেরণ করা হয়েছিল, তারা সেখানে একটি অমানবিক জীবন পেয়েছিল। প্রাথমিক প্রক্রিয়া শেষে তাদের বন্দী শিবিরে নিয়ে যাওয়া হতো।

প্রথমেই তাদের হত্যার জন্য নির্বাচন করা হতো না, তবে তাদের সমস্ত কাপড় এবং বাকী সমস্ত ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নিয়ে নেওয়া হতো। একধরনের স্ট্রাইপযুক্ত কারাগারের পোশাক তাদের পরানো হতো এবং একজোড়া জুতা দেওয়া হতো, যার সবগুলিই সাধারণত একই আকারের ছিল। এরপরে তাদের নিবন্ধিত করে হাতে কয়েকটি ট্যাটু লাগিয়ে দেয়া হতো এবং জোর করে শ্রমের জন্য আউশভিটসের একটি শিবিরে স্থানান্তরিত করা হতো। 

সবচেয়ে বেশি কস্টের বিষয় ছিল সেটি, যখন এ সকল বন্দীরা পোড়া মৃতদেহের ছাই গুলো অন্যত্র ফেলতে যেত। আসলে তারা জানতেও পারত না যে এদের মধ্যে হয়তো কেও তাদের অতি আপন জন। কিন্তু তারা এটা ভালোভাবেই জানতো যে এই ভস্ম গুলো তাদেরই কোন জাত ভাইয়ের। 

নতুন আগতদের শিবির জীবন ছিল নিষ্ঠুর। একপ্রকার কঠোর, অন্যায়, ভয়াবহ জগতে তাদের ফেলে দেওয়া হয়েছিল। আউশভিটসে তাদের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই, বেশিরভাগ নতুন বন্দী তাদের প্রিয়জনের ভাগ্যে কি ঘটেছে তা বুঝে ফেলত। এদের মধ্যে কিছু নতুন বন্দী এই সংবাদে প্রচন্ড শক পেয়ে মানুষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলত এবং এদের অনেকেই আর এ অবস্থা থেকে সেরে উঠেনি।

ব্যারাকগুলিতে কাঠের বাক্সে তিনজন বন্দী একসাথে ঘুমাতো। এখানকার টয়লেটগুলোতে শুধুমাত্র একটি বালতি থাকতো, এবং অবশ্যই কোন জলের ব্যাবস্থা থাকতো না। সকালে এসব টয়লেটগুলোর অবস্থা হতো ভয়াবহ। 

প্রতিদিন সকালের নিয়মিত রুটিন হিসেবে, সমস্ত বন্দীদের রোল কল এর জন্য বাইরে একত্র করা হতো। তীব্র উত্তাপে বা হিমশীতল তাপমাত্রার নীচে রোল কলের জন্য কয়েক ঘন্টা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা তাদের জন্য একপ্রকার নির্যাতনই ছিল।

রোল কলের পরে, বন্দীদেরকে কাজের জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হতো। কিছু বন্দি কারখানার ভিতরে কাজ করত, এবং অন্যরা বাইরে কঠোর পরিশ্রম করত। কয়েক ঘন্টা কঠোর পরিশ্রমের পরে, বন্দীদের আবার অন্য রোল কলের জন্য ক্যাম্পে পাঠানো হত।

ক্যাম্পে খাবারের অভাব ছিল প্রচুর। সাধারণত এক বাটি স্যুপ এবং কিছু রুটি সীমিত পরিমাণে খাদ্য হিসেবে দেয়া হতো। নাৎসিদের কাজের লোকের অভাব ছিলোনা, তাই এ সকল বন্দীদের অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রমের উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে কাজ করানো হতো, যাতে বন্দীরা অনাহারে মরে যায়।

চিকিত্সার নামে বিকৃত পরীক্ষা

ক্যাম্পে, নাৎসি ডাক্তাররা নতুন আগতদের মধ্যে বিশেষ কিছু মানুষের অনুসন্ধান করতো। তাদের পছন্দের মধ্যে যমজ এবং বামন ছিল সরবাগ্রে, তবে কাউকে যদি কোনও উপায়ে শারীরিকভাবে অনন্য বলে মনে হতো, তবে তাদের প্রথমে পরীক্ষার জন্য লাইন থেকে টেনে নেওয়া হতো।

আউশভিটসে, নাৎসি ডাক্তারদের একটি দল ছিল, যারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর জন্য নির্বাচিত ছিল। তবে এদের মধ্যে দু’জন সর্বাপেক্ষা কুখ্যাত ছিলেন। এদের একজন হলেন ডঃ কার্ল ক্লুবার্গ এবং অন্যজন ডাঃ জোসেফ মঙ্গেল। ডাঃ ক্লাবার্গ জরায়ুতে এক্স-রে এবং বিভিন্ন পদার্থের ইনজেকশনের মতো অপ্রচলিত পদ্ধতি দ্বারা মহিলাদের জীবাণুমুক্ত করার নিমিত্তে বিভিন্ন প্রকার অনুসন্ধানের নামে বীভৎস এক প্রকার নির্যাতন চালাত। ডাঃ মেনজেল ক্লোনিংয়ের গোপন রহস্য আবিষ্কার করার আশায় অভিন্ন যমজদের উপর পরীক্ষা চালাতো।

এতসবের পড়ে, ১৯৪৪ সালের শেষ দিকে নাৎসিরা যখন বুঝতে পারল, রাশিয়ানরা জার্মানির দিকে সফলভাবে অগ্রসর হচ্ছে, তখন তারা আউশভিটসে তাদের অত্যাচারের প্রমাণ ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেয়। হেনরিখ হিমলার জ্বালানীর কাজে ব্যাবহার করা চুল্লি গুলো ধ্বংস করার নির্দেশ দিয়েছিল এবং মানব ছাই বিশাল গর্তে ফেলা শুরু হয়েছিল এবং কিছু ছাই ঘাস দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল।

হতভাগ্য মানুষগুলোর যে সকল ব্যাবহার করা জিনিসপত্র জার্মানিতে  পাঠানো হয়েছিল, এবং যে সব স্থানে সেগুলো রাখা হয়েছিলো, অতি দ্রুততার সাথে সে সকল গুদামগুলির অনেকগুলি খালি করা হয়েছিল।

১৯৪৫ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে নাৎসিরা আউশ্ভিটস থেকে সর্বশেষ ৫৮,০০০ বন্দীকে অন্য ডেথ ক্যাম্পে সরিয়ে দিয়ে মৃত্যুর মিছিলে তাদের প্রেরণ করেছিল। 

১৯৪৫ সালের ২৭ জানুয়ারি রাশিয়ানরা যখন আউশভিটসে পৌঁছেছিল, তখন তারা মাত্র ৭,৬৫০ জন বন্দীকে খুঁজে পায়। একই সাথে শিবিরটি মুক্ত হয়, এবং সেই সাথে বন্দীরাও এবং এখন তারা মুক্ত।

 

তথ্যসুত্রঃ- https://en.wikipedia.org/wiki/Auschwitz_concentration_camp

http://auschwitz.org/en/history/

https://www.thoughtco.com/

https://www.britannica.com/place/Auschwitz

https://www.history.com/topics/world-war-ii/auschwitz

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top