হলোকাস্ট!(Holocaust) শব্দটির সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত এবং আমরা জানি এটা ইতিহাসের সবচেয়ে নারকীয়, ঘৃণিত গণহত্যার ইতিহাস। আধুনিক ইতিহাসে গণহত্যার অন্যতম কুখ্যাত ইতিহাস হচ্ছে হলোকাস্ট। হিটলারের নাৎসি বাহিনী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে এবং বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বহু নিপীড়ন, লক্ষ লক্ষ জীবন ধ্বংস করেছিল এবং স্থায়ীভাবে ইউরোপের চেহারাটাই পালটে দিয়েছিল এই হলকাস্টের মাধ্যমে। তো এ হলোকাস্ট কি, কেন, এবং কিভাবে ঘটেছিল সেগুলই জানতে চেস্টা করবো।
হলোকাস্ট এর পটভুমি

১৯৩৩ সালে অ্যাডল্ফ হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে নির্বাচিত হন, এবং তার সমর্থকরা নুরেমবার্গে তাকে বিপুল সম্বর্ধনা দেন। এটা ভুললে চলবে না যে এ ব্যাপক সমর্থন তাকে তার হিংসা চরিতার্থ করার কাজে বড় ভুমিকা পালন করে।
১৯৩৩ সালে অ্যাডল্ফ হিটলার জার্মানিতে ক্ষমতায় আসার পরে হলোকস্ট শুরু হয়েছিল এবং ১৯৪৫ সালে নাৎসিরা মিত্র শক্তির দ্বারা পরাজিত হওয়ার মাধ্যমে এটা শেষ হয়।
হলোকাস্ট!(Holocaust)- শব্দটি গ্রীক শব্দ হোলোকাস্টন থেকে এসেছে, যার অর্থ আগুন দিয়ে হত্যা করা। তবে এটি মূলত ইহুদি জনগণের প্রতি নাৎসিদের অত্যাচার এবং তাদের নিকৃষ্ট বলে বিবেচিত করে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে ইহুদি নিধনকেই বোঝানো হয়েছে।
হলোকাস্ট এর একটি সমার্থক শব্দ রয়েছে যাকে, শোয়া (Shoah) বলা হয়ে থাকে। এটি একটি হিব্রু শব্দ যার অর্থ ধ্বংস করা এবং এটা ঐ হোলোকাস্টকেই বোঝায়। হিটলারের এ ধরনের মানসিকতায় এটা একরকম নিশ্চিত হওয়া যায় যে, নাৎসি বাহিনী গঠন করা হয়েছিল মূলত সুপরিকল্পিত উপায়ে ইহুদী নিধন করার উদ্দেশ্যে।
ক্রিস্টালনাচট (Kristallnacht)- একটি জার্মান শব্দ, আক্ষরিক অর্থে যাকে “ক্রিস্টাল নাইট” বা “ দ্য নাইট অফ ব্রোকেন গ্লাস ’’ বলা হয়ে থাকে। শব্দটির দ্বারা ১৯৩৮ সালের নভেম্বরের রাতকে বোঝান হয়েছে, যখন অস্ট্রিয়া ও জার্মানিতে কয়েক হাজার উপাসনালয় এবং ইহুদিদের মালিকানাধীন ঘরবাড়ি এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছিল। এখান থেকেই হিটলারের নাৎসি বাহিনী তাদের ইহুদী নিধন শুরু করে।
তবে এ সময়ে শুধুমাত্র ইহুদীই নয়, এর পাশাপাশি নাৎসিরা রোমা(জিপসি), সমকামী, যিহোবার সাক্ষিদের এবং নিপীড়নের জন্য প্রতিবন্ধীদের বেছে নিয়েছিল। নাৎসিদের এ ধরনের কাজে যারা বাঁধা দিত তাদের জোর করে শ্রম শিবিরে পাঠানো হয়েছিল বা খুন করা হয়েছিল।
“ নাৎসি শব্দটি মূলত ন্যাশনালসোজিয়ালিস্টিশ ডয়চে আরবিটারপার্টি বা (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক জার্মান কর্মী পার্টি) এর একটি জার্মান সংক্ষিপ্ত শব্দরুপ। ইহুদি জনগণকে নির্মূল করার ক্ষেত্রে তাদের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করার জন্য নাৎসিরা মাঝে মধ্যে “চূড়ান্ত সমাধান” শব্দটি ব্যবহার করতো।
হলোকাস্ট এর স্বীকার হওয়া হতভাগ্য মানুষ
নাৎসি বাহিনী হলোকাস্ট!(Holocaust) বাস্তবায়নের জন্য ইউরোপের বেশ কিছু স্থান নির্বাচন করেছিল। একই স্থানে একই সময়ে যাতে বেশি বেশি মানুষ হত্যা করা যায় সেজন্য তারা এ স্থানগুলোকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। এগুলো মূলত ছিল গ্যাস চেম্বার, অনেক গুলো মানুষকে একসাথে এখানে প্রবেশ করিয়ে বিষাক্ত গ্যাস ছেড়ে দেয়া হতো।
হলোকাস্টের সময় ১ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছিল, (তবে মোট সংখ্যা রেকর্ড করার জন্য একটিও দলিল পাওয়া যায়নি)। এর মধ্যে ষাট লক্ষ ছিল ইহুদি যা প্রায় ইউরোপের সমস্ত ইহুদিদের দুই-তৃতীয়াংশ। হলোকাস্টে আনুমানিক ১১ লক্ষ শিশু মারা গিয়েছিল।
হলোকাস্টের মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে কিছু অস্পষ্টতা রয়েছে। তবে মার্কিন জাতীয় হলোকাস্ট জাদুঘরে থেকে প্রাপ্ত কিছু পরিসংখ্যান নিচে তুলে ধরা হল, যদিও রেকর্ডগুলি অনেকটাই অসম্পূর্ণ এবং আনুমানিক। এই সংখ্যাগুলি যে কোন সময় পরিবর্তিত হতে পারে।
- হলোকাস্টের শিকার হওয়া হতভাগ্য মানুষের মধ্যে ৬০ লক্ষ ছিল ইহুদি জনগন।
- ৫০ লক্ষ ৭০,০০০ হাজার সোভিয়েত সাধারন নাগরিক (এরমধ্যে ১৩ লক্ষ সোভিয়েত ইহুদি নাগরিক ছিল যারা ঐ ৬০ লক্ষের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত)।
- ৩০ লক্ষ সোভিয়েত যুদ্ধবন্দী (প্রায় ৫০,০০০ ইহুদি সেনা সহ)।
- ১৯ লক্ষ পোলিশ নাগরিক (অ-ইহুদি)।
- ৩ লক্ষ ১২ হাজার সার্ব বেসামরিক মানুষ।
- প্রায় ২,৫০,০০০ প্রতিবন্ধী মানুষ।
- ২ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ ২০ হাজার রোমা (জিপসি বা যাযাবর)
- ১,৯০০ যিহোবার অনুসারী।
- কমপক্ষে ৭০,০০০ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত অপরাধী।
- জার্মান রাজনৈতিক বিরোধী ও কর্মীদের একটি নির্ধারিত সংখ্যা (প্রকৃত সংখ্যা জানা যায়নি)।
- সমকামীদের একটি বড় সংখ্যা এটা হতে পারে কয়েকশো বা হাজার হাজার (তবে সম্ভবত ৭০,০০০ আশে পাশে হতে পারে)।
হলোকাস্ট যেভাবে শুরু হয়
হিটলার ক্ষমতায় আসার সাথে সাথেই ইহুদিদেরকে অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু করে দেয়ার কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৩৩ সালের ১ এপ্রিল নাৎসিরা সমস্ত ইহুদি পরিচালিত ব্যবসা বর্জন করার ঘোষণা দিয়ে জার্মান ইহুদিদের বিরুদ্ধে তাদের প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করে। একইসাথে সব প্রকার সামাজিক অধিকার হতে বঞ্চিত করার জন্য আইন প্রণয়নের উদ্যোগ হাতে নেয়।
১৯৩৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জারি করা ন্যুরেমবার্গ আইনগুলি ইহুদিদের জনজীবন থেকে বাদ দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এর ফলে, জার্মান ইহুদিদের তাদের নাগরিকত্ব থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল এবং ইহুদি ও অইহুদীদের মধ্যে বিবাহ এবং বিবাহ বহির্ভূত যৌনতা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছিল।
এই পদক্ষেপ ইহুদিবাদ বিরোধী আইন প্রনয়নের ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব নজির স্থাপন করেছিল। এর পরের কয়েক বছর নাৎসিরা অসংখ্য ইহুদী বিরোধী আইন জারি করে। ইহুদিদের পাবলিক পার্ক থেকে নিষিদ্ধ করা হয়, সিভিল সার্ভিসের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় এবং তাদের সম্পত্তির অধিকার থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল।
এছাড়া আরও কিছু আইন তৈরি হয়, এতে ইহুদি ডাক্তাররা ইহুদি রোগীদের ব্যতীত অন্য কারও চিকিত্সা করতে পারবে না, ইহুদি বাচ্চাদের পাবলিক স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং ইহুদিদের ভ্রমণ এর ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়।
১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে, নাৎসিরা ইহুদিদেরকে তাদের পোশাকে একটি হলুদ তারা সম্বলিত ব্যাজ পরতে আদেশ দেয়, যাতে তারা সহজেই ইহুদীদের চিহ্নিত করতে পারে। সমকামীদেরও একইভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত করা হয়েছিল এবং তাদের গোলাপী ত্রিভুজ সম্বলিত ব্যাজ পরতে বাধ্য করা হয়েছিল।
ইহুদী মহল্লা বা ঘেঁটো তৈরি এবং নিয়ন্ত্রন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে, নাৎসিরা সমস্ত ইহুদিদের একটি আলাদা মহল্লায় স্থানান্তর করা শুরু করে। এগুলোকে ইহুদী গেটো নামে অভিহিত করা হয়। বড় শহরগুলির পাশে অবস্থিত ছোট, বিভক্ত এসব অঞ্চলে বসবাস করার আদেশ দিতে শুরু করে বিশেষকরে হেনরিখ হিমলার। ইহুদিদের তাদের বাসা থেকে জোর করে বাইরে নিয়ে যাওয়া হতো এবং ছোট ছোট বাড়িতে রাখা হতো, প্রায়শই এক বা একাধিক পরিবারকে কোন একটি ছোট যায়গায় ভাগাভাগি করে থাকতে হতো।
প্রথমে এ সব অঞ্চলের নিয়ম কানুন শিথিল থাকলেও ধীরে ধীরে এ সব নিয়ম কঠিন হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে কারফিউ জারী করা হয় এবং একটি নির্দিষ্ট স্থানে ইহুদীদের একপ্রকার আবদ্ধ করে ফেলা হয়। অর্থাৎ ইহুদিদের কোনও পরিস্থিতিতেই আর ছাড়তে দেওয়া হয়নি।
হলোকাস্ট!(Holocaust) এর সময় প্রধান গেটোগুলি পোল্যান্ডের বিয়ালস্টক, লডজ এবং ওয়ারশ শহরে অবস্থিত ছিল। অন্যান্য গেটোগুলি বেলারুশের মিনস্ক, রিগা, লাটভিয়া; এবং ভিলনা, লিথুয়ানিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে পাওয়া গেছে। বৃহত্তম গেটোটি ছিল ওয়ারশ তে। ১৯৪১ সালের মার্চ মাসে প্রায় ৪,৪৫,০০০ মানুষকে হত্যা করে মাত্র ১.৩ বর্গমাইল সাইজের একটি জায়গায় তাদের দেহগুলো ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং এর কিছুটা পরবর্তীতে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
একদল প্রচন্ড ইহুদী বিদ্বেষী জার্মান সেনাকে এ ঘেঁটোগুলি নিয়ন্ত্রন এবং পরিচালনা করার দায়িত্ব দেয়া হয়। এরা মূলত ঘেঁটো গুলি নিয়ন্ত্রনকারি ইহুদি কাউন্সিলের সদস্য শিসেবে পরিচিত ছিল। ইহুদিদের বলা হতো যে তাদের শ্রমের জন্য অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, এভাবে ঘেঁটোগুলি হতে প্রতিদিন এক হাজার মানুষকে রেলপথে বিভিন্ন গ্যাস চেম্বারে প্রেরণ করা হতো।
২য় বিশ্ব যুদ্ধে মিত্র বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তখন বেঁচে যাওয়া কিছু ইহুদী প্রতিরোধের চেস্টা করে। ১৯৩৮ সালে ইহুদি প্রতিরোধ যোদ্ধারা ২৮ দিন ধরে পুরো নাৎসি শাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, যা ইতিহাসে ওয়ারশ ঘেটো অভ্যুত্থান নামে পরিচিত।
কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্প
এমন অনেকেই আছেন যারা সমস্ত নাৎসি শিবিরকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প হিসাবে উল্লেখ করে থাকে, কিন্তু বাস্তবে সেখানে বিভিন্ন ধরণের শিবির ছিল, যার মধ্যে কন্সেন্ট্রেশন শিবির, নির্মূল শিবির, শ্রম শিবির, যুদ্ধ বন্দি শিবির এবং ট্রানজিট ক্যাম্প ছিল। প্রথম কন্সেন্ট্রেশন শিবিরগুলির একটি ছিল দক্ষিণ জার্মানির ডাকাউতে। এটি ২০ মার্চ, ১৯৩৩ সালে খোলা হয়েছিল।
১৯৩৩ সাল থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের বন্দী বেশিরভাগ লোকজন ছিল রাজনৈতিক বন্দী। এর মধ্যে প্রতিবন্ধী, গৃহহীন এবং মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষের আধিক্য ছিল বেশি। ১৯৩৮ সালে ক্রিস্টালনাচটের পরে ইহুদিদের উপর অত্যাচার আরও সংগঠিত করা হয়। এর ফলে কন্সেন্ট্রেশন শিবিরে পাঠানো ইহুদিদের সংখ্যা ক্রমানয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে।
কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পের জীবনযাত্রা ছিল অনেক ভয়াবহ। গাদাগাদি করে থাকা, কঠোর শারীরিক পরিশ্রমে বাধ্য করা, খুবই অপর্যাপ্ত খাবার দেয়াসহ নানা রকম মেডিক্যাল পরিক্ষা চলতো বন্দীদের উপর। এ সব স্থানে বন্দীদের মৃত্যু ঘটা সত্ত্বেও চেলমনো, বেলজেক, সোবিবোর, ট্রেব্লিংকা, আউশউইৎজ এবং মাজদানেক নামে বেশ কয়েকটা ডেথ ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছিল তাদের হত্যা করার জন্য।
আউশউইৎজ ছিল সবচেয়ে বড় কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্প। অনুমান করা হয় যে, আউশউইৎজ ক্যাম্পে ১১ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়।
মূলত এভাবেই নাৎসিদের প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা উগড়ে দিয়ে হিটলার মানব ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম কাজটি সম্পাদন শুরু করেণ এই হলোকাস্ট!(Holocaust) এর মাধ্যমে। প্রথমে জার্মান ইহুদী এবং পরবর্তীতে অষ্ট্রিয়া, পোল্যান্ড সহ ইউরোপের অন্যান্য অংশের ইহুদী নিধনের প্রতি তিনি অগ্রসর হন।
বর্তমানে আমরা হয়তো সে সময়ের অবস্থার কথা শুধু চিন্তা করতে পারি, বাস্তবে সে সব বছরগুলোতে অত্যাচারের মাত্রা কতটা ভয়াবহ ছিল তা আমরা কিছুটা ২য় বিশ্ব যুদ্ধের উপর নির্মিত হলিউডের চলচিত্র গুলোর মাধ্যমে দেখতে পাই। ইতিহাস ঘাঁটলে অনেক বড় বড় গণহত্যার কথা আমাদের চোখের সামনে আসে এটা সত্যি, কিন্তু আধুনিক ইতিহাসে এরকম পরিকল্পিত গণহত্যা একজন সভ্য মানুষ হিসেবে চিন্তা করা যায় কি?
তথ্যসুত্রঃ- https://www.shadowsofshoah.com/the-holocaust/?gclid=CjwKCAiA35rxBRAWEiwADqB376SVqKurZ3dvIOvCJHwqRJFecPj-Pv2-Z4jfzZslEIJprBdjpQSi8RoCJRgQAvD_BwE
https://en.wikipedia.org/wiki/The_Holocaust
https://www.ushmm.org/
https://encyclopedia.ushmm.org/content/en/article/introduction-to-the-holocaust