দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪৫ সালের ১৬ এপ্রিল থেকে ২ মে, পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের মিত্রবাহিনী কর্তৃক জার্মানীর বার্লিন আক্রমণ ছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি টেকসই এবং চূড়ান্তভাবে সফল একটি পদক্ষেপ।
মার্শাল জর্জি ঝুকভ, মার্শাল কনস্ট্যান্টিন রোকোসভস্কি,মার্শাল ইভান কোনেভ, জেনারেল ভ্যাসিলি চুইকভ এর নেতৃত্ত্বে, ২.৫ লক্ষ সোভিয়েত সেনার একটি বিশাল বহর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানদের বিরুদ্ধে চুরান্ত এ আক্রমনটি পরিচালনা করেছিল। মূলত এ আক্রমণের ফলে বার্লিনের পতন ঘটে এবং সাথে সাথে জার্মানির পরাজয়ের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কার্যত শেষ হয়ে যায়।
বার্লিন আক্রমণের পটভূমি
প্রথমে পোল্যান্ড এবং তারপর জার্মানিতে প্রবেশের পরে, সোভিয়েত বাহিনী বার্লিনের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা শুরু করে। আমেরিকান এবং ব্রিটিশ বিমান সোভিয়েত বাহিনীকে সমর্থন করলেও, মাটিতে মূল যুদ্ধ ক্যাম্পেইন চালানোর বিষয়টি পুরোপুরি সোভিয়েত রেড আর্মি দ্বারা পরিচালিত হবে বলেই সিদ্ধান্ত হয়েছিলো।
কিছু ঐতিহাসিক বিশ্বাস করেন যে, সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্টালিনের এহেন একগুঁয়ে মানুশিকতা সম্ভবত জার্মানীর গোপনীয় পারমাণবিক গবেষণাকে আয়ত্ত করার জন্য খুব বেশি কাজ করেছে। এক্ষেত্রে, এমনকি তিনি বাকী মিত্রদের বার্লিনকে পরাজিত করতে আসার ক্ষেত্রে একপ্রকার নিরুৎসাহিত করেছিলেন।
কিছু ইতিহাসবিদ এ বিষয়টা খুব ভালো ভাবেই বিশ্বাস করেছিলেন এবং মোটামুটি তারা নিশ্চিত ছিলেন যে সোভিয়েত ইউনিয়নের পারমাণবিক গোপনীয়তা দখল করাই ছিল অন্যতম মূল উদ্দেশ্য।
আক্রমণের জন্য, রেড আর্মি বার্লিনের পূর্বে মার্শাল জর্জ ঝুকভের নেতৃত্ত্বে ১ম বেলারুসিয়ান ফ্রন্টে অবস্থান নিয়েছিলেন, বার্লিনের উত্তরে,মার্শাল কনস্ট্যান্টিন রোকোসোভকির দ্বিতীয় বেলারুশিয়ান ফ্রন্ট এবং দক্ষিণে মার্শাল ইভান কোনেভের নেতৃত্ত্বে প্রথম ইউক্রেনীয় ফ্রন্টকে নিয়োজিত করা হয়েছিল।
সে সময় সোভিয়েতদের বিপক্ষে ছিল জার্মান জেনারেল গথার্ড হেইনরিকির আর্মি গ্রুপ, “ভিস্তুলা” যারা দক্ষিণের আর্মি গ্রুপ সেন্টার দ্বারা সমর্থিত ছিল। তবে এ সময়, জার্মানির অন্যতম প্রধান প্রতিরক্ষা জেনারেল, হেইনরিক, ওদার নদীর তীর রক্ষা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং এর পরিবর্তে তিনি বার্লিনের পূর্বদিকে সিলো হাইটগুলি সুরক্ষিত করেছিলেন।
তার এরকম অবস্থানের কারনে শহরটিতে জালাধারগুলো খোলার মাধ্যমে ওদারের প্লাবনভূমি ডুবে গিয়েছিল।
রাজধানী বার্লিনের যথাযথ প্রতিরক্ষার কাজ লেঃ জেনারেল হেলমথ রেইমানকে দেওয়া হয়েছিল। যদিও তাদের বাহিনী কাগজে কলমে দৃঢ়তা দেখাচ্ছিল, কিন্তু বাস্তবে ফলাফল হচ্ছিলো ভিন্ন। বিশেষকরে, হেইন্রিক এবং রেইমানের অধীনে থাকা সেনারা সোভিয়েত বাহিনীর হাতে ভীষণভাবে মার খাচ্ছিল।
আরও পড়ুনঃ- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা এবং সমাপ্তি
যেভাবে বার্লিনে আক্রমণ শুরু হয়
১৯৪৫ সালের ১৬ এপ্রিল, সোভিয়েত বাহিনী সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে, কমান্ডার ঝুকভের সেনারা সেলো হাইটসে (এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানদের বৃহত্তর প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানগুলির উপর একটি সর্বশেষ হামলা ছিল) আক্রমণ করেছিল। ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সর্বশেষ প্রধানতম লড়াইয়ের মধ্যে এটি ছিল একটি। সোভিয়েতরা চার দিনের লড়াইয়ের পরে এ স্থানটি দখল করে নেয়, তবে এসময় ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল।
দক্ষিণে, কোনেভের কমান্ড, জার্মান কমান্ডার ফোর্স্টকে বিদ্ধস্থ করেছিলো এবং বার্লিনের দক্ষিণ দিক দিয়ে প্রবেশ করেছিল। কেনেভের বাহিনীর একটি অংশ বার্লিনের উত্তর দিক দিয়ে আক্রমণ করেছিলো, এবং আমেরিকান সেনাবাহিনীকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছিল।
এ বাহিনীর আর একটি অংশ পশ্চিম দিকে জার্মানদের উপর চাপ অব্যাহত রেখেছিল। সোভিয়েত সেনাবাহিনীর এই আগ্রাসন জার্মান নবম সেনাবাহিনীকে প্রায় শেষ করে দেয়।
১ম বেলারুশিয়ান ফ্রন্ট পশ্চিম দিক দিয়ে এগিয়ে পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব দিক থেকে বার্লিনে পৌঁছেছিল। ২১ শে এপ্রিল, এ বাহিনীর আর্টিলারি বহর শহরটিতে গোলাবর্ষণ শুরু করে।
২১ শে এপ্রিল জুটারবারগের উত্তর দিক দিয়ে এগিয়ে গিয়ে ঝুকভের সৈন্যরা বার্লিনের দক্ষিণে চলে যায়। এই অগ্রযাত্রা উত্তরে রোকোসভস্কি সমর্থন করেছিলেন, যিনি ছিলেন আর্মি গ্রুপ ভিস্তুলার উত্তর অংশের কমান্ডার।
এ ধরণের চতুরমুখি আক্রমণে, বার্লিনে, জার্মান নেতা অ্যাডল্ফ হিটলার হতাশ হতে শুরু করেছিলেন এবং সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন যে যুদ্ধটি তিনি মূলত হেরে গেছেন। পরিস্থিতি উন্নতির লক্ষ্যে, দ্বাদশ সেনাবাহিনী যাতে নবম সেনাবাহিনীর সাথে একত্রিত হতে পারে এই আশায় তিনি ২২ এপ্রিল বার্লিনের পূর্ব দিকে অগ্রসর হওয়ার আদেশ দেন।
জার্মানরা তখন শহরটিকে রক্ষার জন্য সম্মিলিত বাহিনীর সহায়তার আশায় ছিল। পরের দিন, ১২তম বাহিনীর সাথে একত্রে যুদ্ধ করা ৯ম সেনাবাহিনীকে কমান্ডার কোনেভের ফ্রন্ট ঘেরাও করে ফেলে।
জার্মান কমান্ডার রেইমানের কাজে অসন্তুষ্ট হিটলার তাকে জেনারেল হেলমথ ওয়েডলিংয়ের জায়গায় নিয়োগ দেন। ২৪ এপ্রিল, ঝুকভ এবং কোনেভের ফ্রন্ট বার্লিনের পশ্চিমে মিলিত হয়ে শহরটি ঘিরে ফেলে। এই অবস্থানটি সুদৃর করে তারা বার্লিন শহরের কিভাবে সুরক্ষা করতে পারেন সেটা অনুসন্ধান করতে শুরু করেন। রোকোসভস্কি উত্তরে অগ্রসর হতে থাকলেও, ২৫ এপ্রিল কোনেভের সামনের অংশ আমেরিকান প্রথম সেনার সাথে তোরগাউতে মিলিত হয়।
আরও পড়ুনঃ- এশিয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। জাপানি আগ্রাসন সে সময় যেমন ছিল।
বার্লিনের চূড়ান্ত যুদ্ধ
বার্লিনের মধ্যে ভাগে ওয়েডলিংয়ের প্রায় ৪৫,০০০ যোদ্ধা ছিল। যাদের মধ্যে ওয়েদারমাচ্ট, এসএস(SS), হিটলার যুব এবং ভক্সস্টর্ম বাহিনী যারা মিলিশিয়াদের নিয়ে গঠিত ছিল। ভক্সস্টর্ম বাহিনী ১৬ থেকে ৬০ বছর বয়সী পুরুষদের দ্বারা গঠিত ছিল যারা এর পূর্বে কোন সামরিক বাহিনীতে চাকরীরত ছিলেন না।
এ বাহিনী মূলত যুদ্ধের শেষের দিকে গঠিত হয়েছিল। জার্মানরা কেবলমাত্র বিশাল সংখ্যকই ছিল না, তারা তাদের বেশিরভাগ বাহিনীর প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও অনেকটা পিছিয়ে ছিল।
বার্লিনে প্রাথমিক সোভিয়েত হামলা, শহরটি ঘেরাওয়ের একদিন আগে, অর্থাৎ ২৩ এপ্রিল শুরু হয়েছিল। দক্ষিণ-পূর্ব থেকে যাত্রা করে তারা তীব্র প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়, কিন্তু পরের দিন সন্ধ্যা নাগাদ টেল্টো খালের কাছে বার্লিন এস-বাহন রেলপথে পৌঁছেছিল।
২৬ এপ্রিল লেঃ জেনারেল ভ্যাসিলি চুইকভের ৮ম গার্ড আর্মি দক্ষিণ থেকে অগ্রসর হয়ে টেম্পেলহফ বিমানবন্দরে আক্রমণ শুরু করে। পরের দিন, সোভিয়েত বাহিনী দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এবং উত্তর থেকে একাধিক লাইন ধরে শহরে প্রবেশ করেছিল।
২৯ শে এপ্রিল, সোভিয়েত সেনারা মল্টক ব্রিজ পেরিয়ে জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আক্রমণ শুরু করে। আর্টিলারি বাহিনির সহায়তা পেতে দেরি হওয়ায় এখানকার বিজয় কিছুটা ধীরে হয়েছিল।
সেদিন গেস্টাপোর সদর দফতরটি দখল করার পরে, সোভিয়েতরা রেইখস্ট্যাগের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। পরের দিন মূর্তিমান ভবনের উপর হামলা চালিয়ে তারা কয়েক ঘন্টা প্রচন্ড লড়াইয়ের পরে অসামান্য দক্ষতার সাথে একটি পতাকা উত্তোলন করতে সফল হয়েছিল।
ভবনটি থেকে জার্মানদের পুরোপুরি সাফ করার জন্য আরও দু’দিন লেগে যায় সোভিয়েত বাহিনীর। ৩০ এপ্রিলের প্রথম দিকে হিটলারের সাথে বৈঠক করে, জার্মান কমান্ডার ওয়েডলিং তাকে জানিয়েছিলেন যে রক্ষীরা শীঘ্রই গোলাবারুদ শেষ করে ফেলবে।
অন্য কোনও বিকল্প না দেখে, হিটলার ওয়েডলিংকে ব্রেকআউটয়ের চেষ্টা করার জন্য অনুমতি দিয়েছিলেন। হিটলার কখনোই শহর ত্যাগ করতে রাজি ছিলেন না এবং সোভিয়েত বাহিনী কাছাকাছি আসার সাথে সাথে, সদ্য বিয়ে করা (২৯ এপ্রিল) হিটলার এবং স্ত্রী ইভা ব্রাউন বাংকারেই থেকে গেলেন এবং পরে দিন তারা উভয়েই আত্মহত্যা করেছিলেন।
হিটলারের মৃত্যুর সাথে সাথে গ্র্যান্ড অ্যাডমিরাল কার্ল ডোয়েনিটস রাষ্ট্রপতি হন এবং বার্লিনে থাকা জোসেফ গোয়েবেলস হন চ্যান্সেলর।
১ মে, বার্লিনের বাকি ১০,০০০ ডিফেন্ডারকে শহরের কেন্দ্রস্থলের একটি সঙ্কুচিত অঞ্চলে জড়ো করা হয়েছিল। জেনারেল হান্স ক্রেবস, জেনারেল স্টাফ চিফ, চুইকভের সাথে আত্মসমর্পণমূলক আলোচনা শুরু করলেও, যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে পোষণকারী গোয়েবেলস তাকে শর্তে আসতে বাধা দিয়েছিলেন। গোয়বেলস আত্মহত্যা করার পরের দিনটিতে এটি একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
আত্মসমর্পনের জন্য একটি বিষয় পরিষ্কার হলেও, ক্রেবস পরের দিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যাতে সেই রাতে একটি ব্রেকআউট করা যায়। আসলে শেষ আশা হিসেবে ে রকম একটি ভাবনা তিনি ভেবছিলেন। এ সময় জার্মানরা তিনটি বিভিন্ন রুটে পালাতে চেয়েছিল।
যারা কেবল টিয়ারগার্টেন পেরিয়েছিলেন তাদেরই সোভিয়েত লাইনে প্রবেশের সাফল্য ছিল, যদিও খুব কমই আমেরিকান লাইনে পৌঁছেছিল।
১৯৪৫ সালের ২ মে, সোভিয়েত বাহিনী রাইখ চ্যান্সেলারিটি দখল করে নেয়। ভোর ৬ টায় ওয়েডলিং তার কর্মীদের সাথে আত্মসমর্পণ করেন। চুইকভের কাছে নিয়ে যাওয়ার সময়, তিনি তাৎক্ষনিকভাবে বার্লিনের বাকী সমস্ত জার্মান বাহিনীকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুনঃ- হাইনরিখ হিমলার, হলোকাস্ট এর মুল নায়ক এবং এস এস নেতা
বার্লিন যুদ্ধের ফলাফল এবং উভয় বাহিনীর প্রানহানি
বার্লিনের যুদ্ধ কার্যকরভাবে পূর্ব ফ্রন্ট এবং পুরো ইউরোপে চলমান লড়াইয়ের অবসান ঘটিয়েছিল। হিটলারের মৃত্যু এবং সম্পূর্ণ সামরিক পরাজয়ের মধ্যদিয়ে জার্মানি ১৯৪৫ সালের ৭ মে, নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেছিল।
বার্লিনের দখলের পরে, সোভিয়েত সেনারা বিভিন্ন পরিষেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনঃগঠন এবং শহরের বাসিন্দাদের খাবার বিতরণ করার কাজ করেছিল। মানবিক সহায়তার এই প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কিছু সোভিয়েত ইউনিট শহরটিতে লুণ্ঠন করে এবং জনগণের উপর হামলা চালিয়ে কিছুটা বিদ্রূপ করেছিল।
বার্লিনের লড়াইয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের ৮১,১১6 জন সেনা নিহত / নিখোঁজ হয় এবং ২,৮০,২৫১ জন আহত হয়েছিল। প্রথম দিকে সোভিয়েত অনুমান করেছিল জার্মানদের ৪,৫৮,০৮০ জন নিহত এবং ৪,৭৯,২৯৮ জন ধরা পড়ে। তবে এটা সবসময়ই একটি বিতর্কের বিষয় ছিল। তবে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন এ সংখ্যা ১,২৫,০০০ এর বেশি ছিলোনা।
বার্লিন আক্রমণের সাথে সাথে কার্যত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে গেলেও এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জাপানের ইম্পেরিয়াল সেনাদের সাথে মিত্র বাহিনীর যুদ্ধ অব্যাহত ছিল। ১৯৪৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জাপান শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করলে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।
তথ্যসূত্রঃ- https://en.wikipedia.org/wiki/Battle_of_the_Seelow_Heights
https://www.thoughtco.com/world-war-ii-battle-of-berlin-2361466
https://liberationroute.com/germany/stories/b/battle-of-berlin
https://www.ducksters.com/history/world_war_ii/battle_of_berlin.php
http://www.bbc.co.uk/history/worldwars/wwtwo/berlin_01.shtml