black-and-white-curtiss-hawaii-p-40s.jpg

এশিয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। জাপানি আগ্রাসন সে সময় যেমন ছিল।

বেশিরভাগ ঐতিহাসিক বা আমরা যারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে আগ্রহী, তারা সকলেই জানি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিলো ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর, জার্মানির পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্যদিয়ে। তবে অনেক ঐতিহাসিক এমনও দাবি করেন, ১৯৩৭ সালের ৭ জুলাই জাপান যখন চীন আক্রমণ করে, মুলত তখন থেকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল।

৭ জুলাইয়ের মার্কো পোলো ব্রিজের ঘটনা থেকে শুরু করে ১৫ ই আগস্ট, ১৯৪৫-এ জাপানের আত্মসমর্পণের পূর্ব পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এশিয়া ও ইউরোপের প্রায় সকল অঞ্চলে একসাথে ছড়িয়ে পড়েছিলো। রক্তপাত এবং ব্যাপক প্রাণহানির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। বিস্তীর্ণ রাশিয়ান অঞ্চল সহ পুরো ইউরোপে ছড়িয়ে পড়া যুদ্ধের দাবানল সমানতালে আঘাত হেনেছিল এশিয়া অঞ্চলেও।

এশিয়ায় এর প্রভাব আসলে কেমন ছিল, জাপানীদের আগ্রাসন কতটা প্রভাব ফেলেছিল এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশগুলোতে, আজ সেটাই জানার চেস্টা করবো। 

১৯৩৭ সালে জাপানের চীন আক্রমণ

japani soldiers
Japani Soldiers

১৯৩৭ সালের ৭ জুলাই, দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধ শুরু হয়, যা মার্কো পোলো ব্রিজ ঘটনা হিসাবে ইতিহাসে পরিচিত। সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের সময় জাপানি সৈন্যদেরকে, চীনা সেনারা আক্রমণ করেছিল। এরপর জাপানিরা এটার প্রতিশোধ হিসেবে চীনাদের কোন রকম সতর্ক করা ছাড়াই মার্ক পোলো সেতুর উপর  গুলি বর্ষণ শুরু করে। এ দুটি দেশের মধ্যে পূর্বের চলমান কিছু উত্তেজনা এবং তার সাথে গুলি চালানোর ঘটনা, এই অঞ্চলটিতে যুদ্ধের একটি সর্বাত্মক ঘোষণা এনে দেয়।

সে বছরের জুলাইয়ে জাপানিরা বেইজিংয়ের তিয়ানজিনে প্রথম আক্রমণ শুরু করেছিল, এবং এরপর ১৩ আগস্ট তারা সাংহাইয়ের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। জাপানিরা এ দুটি যুদ্ধেই বিশাল বিজয় অর্জন করেছিল এবং উভয় শহরই জাপানিরা নিজেদের পক্ষে দাবি করেছিল। এদিকে, ঐ একই বছরের আগস্টে সোভিয়েত ইউনিয়ন পশ্চিম চীনা শহর জিনজিয়াং আক্রমণ করেছিল উইঘুর বিদ্রোহকে দমন করার উদ্দেশ্যে।

আরেকটি যুদ্ধে (তাইউয়ান যুদ্ধ) জাপান দাবি করেছিল শানসি প্রদেশের রাজধানী এবং সেখানে মজুদ কৃত চীনের অস্ত্রাগার তাদের। ৯ থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলমান নানকিংয়ের যুদ্ধে চীনাদের অনেক সম্পদ জাপানিদের হাতে এসে পড়ে এবং সেখানকার প্রাদেশিক সরকারের প্রধান ব্যাক্তিবর্গ জাপানীদের হাত থেকে বাঁচার জন্য উহানের দিকে পালিয়ে যায়।

১৯৩৭ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে ১৯৩৮ সালের জানুয়ারির শেষ সময় পর্যন্ত, জাপান এক মাসব্যাপী নানজিং প্রদেশ অবরোধ করে এই অঞ্চলে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তোলে। এ সময় জাপানিরা সেখানে ব্যাপক ধ্বংস লীলা চালায়। এ ঘটনাটি ইতিহাসে ন্যানকিং গণহত্যা বা ধর্ষণ নামে বহুল পরিচিত। সেই ঘটনায় জাপানিরা নানকিংয়ের প্রায় ৩,০০,০০০ বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছিল।

চীন-জাপান যুদ্ধের ব্যাপকতা বৃদ্ধি

child-soldiers
child-soldiers

১৯৩৮ সালের বসন্তে টোকিওর নির্দেশ অগ্রাহ্য করে জাপানি ইম্পেরিয়াল আর্মি, তাদের নিজস্ব একটি মতবাদ গ্রহণ করা শুরু করেছিল। সে বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারিতে তারা এক মাস ব্যাপী সময় ধরে চংকিংয়ে বোমা হামলা চালিয়েছিল। চীনাদের অস্থায়ী রাজধানী হিসেবে পরিচিত চংকিংয়ে, সে সময় ১০,০০০ বেসামরিক মানুষ মারা যায়।

১৯৩৮ সালের ২৪ শে মার্চ থেকে মে মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে আরেকটি যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। ঝুঝু নামক এ যুদ্ধে জাপান এ শহরটি দখল করে নিলেও, হেরে যাওয়া চীনা সেনারা পরবর্তীতে জাপানিদের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করে। সে বছরের জুনে চীনাদের পক্ষ থেকে হলুদ নদীর বাঁধ ভেঙে দিয়ে, জাপানি অগ্রগতি অনেকটা বন্ধ করে দে্যা হলেও অনেক চীনা বেসামরিক নাগরিক পানিতে ডুবে মৃত্যু বরন করে।

এদিকে, চীনা সরকার এক বছর আগে উহানে তাদের নতুন রাজধানী স্থানান্তরিত করেছিল। কিন্তু ৩,৫০,০০০ জাপানি সেনা রাজধানী শহর দখলে নেয়। যদিও জাপান এ সময় তাদের ১,০০,০০০ সেনাকে হারিয়েছিল।

ফেব্রুয়ারি মাসে , জাপান কৌশলগত দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাইনান দ্বীপটি দখল করে এবং নানচাং (Nanchang) যুদ্ধ শুরু করে। ফলে চীনের জাতীয় বিপ্লবী সেনাদের সরবরাহ লাইন ভেঙে পড়ে এবং চীনকে বৈদেশিক সহায়তা বন্ধ করার অংশ হিসাবে দক্ষিণ-পূর্ব চীনকে এ সময় হুমকি দেয়া হয়েছিল।

জাপানের এ সকল সফলতা সত্ত্বেও, ১৯৩৯ সালে মনছুরিয়ার লেক খাসান যুদ্ধ এবং মঙ্গোলিয়া ও মনছুরিয়া সীমান্তে খলখাইন গোলের যুদ্ধে (Khalkhyn Gol) তারা যখন মঙ্গোল এবং সোভিয়েত বাহিনীকে আক্রমণ করার চেষ্টা করেছিল, তখন জাপানের বেশ ক্ষয় ক্ষতি হয়েছিল।

আরও পড়ুনঃ- ডি-ডে (D-Day), নরম্যান্ডির এ যুদ্ধটি ছিল পৃথিবীকে বদলে দেয়ার একটা দিন

জাপানীদের বিরুদ্ধে চীনা প্রতিরোধ (১৯৩৯ থেকে ১৯৪০)

galahad.jpg
galahad.jpg

১৯৩৯ সালের ৮ ই অক্টোবর চীন, জাপানীদের বিরুদ্ধে তার প্রথম বিজয়ের স্বাদ পায়। চংসের (First Battle of Changsha) প্রথম যুদ্ধে জাপান হুনান প্রদেশের রাজধানী আক্রমণ করে। তবে চীনা সেনাবাহিনী জাপানের সরবরাহ ব্যবস্থা কেটে ফেলে এবং জাপানের ইম্পেরিয়াল সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়।

চংসের যুদ্ধে পরাজিত হলেও, জাপান ন্যানিং এবং গুয়াংসি উপকূল দখল করে নিয়েছিল। দক্ষিণ গুয়াংসি যুদ্ধে জয়লাভ করে চীনের জন্য সমুদ্রপথে বৈদেশিক সহায়তা বন্ধ করে দেয়। যদিও চীন সহজেই এটা মেনে নেয়নি। চীন ১৯৩৯ সালের নভেম্বর মাসে জাপানী সেনাদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী পাল্টা আক্রমণ শুরু করে।

জাপান, চীনের বেশিরভাগ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেও, তারা এটি ভালভাবেই বুঝতে পেরেছিল যে, চীনের বিরুদ্ধে জয় পাওয়া খুব একটা সহজ হবে না।

চীনের বিভিন্ন স্থানে কমিউনিস্ট চীনা সেনারা রেললাইন উড়িয়ে দিয়ে, জাপানিদের জন্য কয়লার সরবরাহ ব্যাহত করেছিল এবং এমনকি বিভিন্ন যায়গায় চীনারা জাপানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলো। ফলে ১৯৪০ সালের ডিসেম্বরে কৌশলগত ভাবে চীনারা বিভিন্ন যায়গায় ইম্পেরিয়াল আর্মিদের বিরুদ্ধে জয় লাভ করতে শুরু করে।

১৯৪০ সালের ২৭ ডিসেম্বর, জাপানি ইম্পেরিয়াল বাহিনী ত্রিপাক্ষিক একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এর ফলে জাপানকে অক্ষ শক্তির অংশ হিসাবে নাৎসি জার্মানি এবং ফ্যাসিস্ট ইতালির সাথে সংযুক্ত করেছিল।

আরও পড়ুনঃ- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা এবং সমাপ্তি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ভুমিকা

USS_Bunker_Hill_hit_by_two_Kamikazes
USS BUNKER HILL hit by two Kamikazes in 30 seconds on 11 May 1945 off Kyushu.

১৯৪১ সালের এপ্রিলের প্রথম দিকে, আমেরিকান ভলেন্টিয়ার বিমান চালকেরা (যারা ফ্লাইং টাইগার্স নামে পরিচিত) হিমালয়ের পূর্ব প্রান্তে “হাম্প” হয়ে বার্মা থেকে চীনা বাহিনীকে বিভিন্ন সরঞ্জাম সরবরাহ করতে শুরু করে। সে বছরের জুনে, গ্রেট ব্রিটেন, ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং ফ্রান্সের সৈন্যরা জার্মানপন্থী ভিচি ফ্রাঞ্চ এর অধীনে থাকা সিরিয়া এবং লেবানন আক্রমণ করেছিল। ভিচি ফ্রাঞ্চ ১৪ জুলাই তারিখে আত্মসমর্পণ করেছিল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যারা জাপানের ৮০% তেল সরবরাহ করতো, তারা ১৯৪১ সালের আগস্টে, জাপানের উপর তেল সরবরাহের নিষেধাজ্ঞার জারী করেছিল। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, এই ঘটনার ফলে জাপানকে আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করতে উৎসাহিত করেছিল। 

১৯৪১ সালের শেষের দিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নতুন আরেকটি শাখার উদ্ভব ঘটেছিলো, যখন ৭ ডিসেম্বর জাপান পার্ল হারবার এ অবস্থিত মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে আক্রমণ চালায়। এ হামলায় ২,৪০০ আমেরিকান নাগরিক মৃত্যু বরন করে। এ সময় আমেরিকার চারটি যুদ্ধজাহাজ হাওয়াইয়ের সমুদ্রে ডুবে যায়।

একইসাথে, ফিলিপাইন, গুয়াম, ওয়েক আইল্যান্ড, মালয়, হংকং, থাইল্যান্ড এবং মিডওয়ে দ্বীপপুঞ্জকে দখলের উদ্দেশ্যে জাপানি বাহিনী বিশাল আগ্রাসন শুরু করেছিল।

এর প্রতিক্রিয়া হিসাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য ১৯৪১ সালের ৮ ই ডিসেম্বর জাপানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধের ঘোষণা দেয়। এর দুদিন পরে জাপান মালয়ের উপকূলে ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ এইচএমএস রেপুলস  এবং প্রিন্স অব ওয়েলস (HMS Repulse and HMS Prince of Wales) ডুবিয়ে দেয় এবং গুয়ামে অবস্থিত মার্কিন নৌ ঘাঁটি জাপানের কাছে আত্মসমর্পণ করে।

১৯৪২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ সময় পর্যন্ত জাপান এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে আক্রমণ চালিয়ে যায়। এ সময় জাপান, ইস্ট ইন্ডিজ (ইন্দোনেশিয়া) আক্রমণ করে জাভা, বালি (দ্বীপপুঞ্জ) কুয়ালালামপুর দখল করে, সেইসাথে ব্রিটিশদের দখলে থাকা সিঙ্গাপুরও দখল করে নেয়। জাপানের বার্মা, সুমাত্রা এবং ডারউইন (অস্ট্রেলিয়া) আক্রমণের ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার অংশগ্রহণ এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে পড়েছিল।

মার্চ এবং এপ্রিল মাসে জাপানিরা মধ্য বার্মায় আক্রমণ করেছিলো, সে সময় এ অঞ্চলটি ব্রিটিশ ভারতের অংশ ছিল। তারা আধুনিক শ্রীলঙ্কার ব্রিটিশ উপনিবেশ আক্রমণ করেছিল। এদিকে, আমেরিকান এবং ফিলিপিনো সেনারা বাটানে (Bataan) জাপানীদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। একই সময়ে, যুক্তরাষ্ট্র জাপানের বিরুদ্ধে ডলিটল রেইড চালু করেছিল। যাতে টোকিও এবং জাপানের অধীনে থাকা কিছু দ্বীপে আমেরিকানরা প্রথম বোমা হামলা চালায়।

১৯৪২ সালের ৪ থেকে ৮ মের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান এবং আমেরিকান নৌ বাহিনী কোরাল সাগরের যুদ্ধে নিউ গিনিতে জাপানিদের আক্রমণকে রুখে দেয়। করিগিডোরের যুদ্ধে, জাপানিরা ফিলিপাইন জয় করে ম্যানিলা বেতে অবস্থিত দ্বীপটি নিজেদের দখলে নিয়ে যায়। ২০ মে, ব্রিটিশরা বার্মায় পরাজিত হয়ে সরে আসলে জাপানকে আরেকটি বিজয় এনে দেয়।

৪ থেকে ৭ জুন পর্যন্ত জাপান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিডওয়ের (Battle of Midway) মূল যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। আমেরিকান সেনারা হাওয়াইয়ের পশ্চিমে মিডওয়ে অ্যাটলে জাপানের বিরুদ্ধে বিশাল নৌ-জয়ের কীর্তি গড়েছিল। যদিও আলাস্কার আলেউটিয়ান দ্বীপপুঞ্জ আক্রমণ করে জাপান দ্রুত পাল্টা জবাব দিয়েছিল।

একই বছরের আগস্টে, সাভো দ্বীপের যুদ্ধে, গুয়াদলকানাল (Guadalcanal) অভিযানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম বৃহত্তম নৌ-বাহিনী, মিত্র বাহিনীকে বিজয় এনে দিয়েছিলো।

১৯৪২ সালের ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি ১৯৪৩ পর্যন্ত অক্ষ শক্তি এবং মিত্ররা একটানা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছিল, কিন্তু অবিরাম যুদ্ধে জড়িত থাকার ফলে জাপানের শক্তি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। যুক্তরাজ্য, জাপানের এই দুর্বলতাকে পুঁজি করে, বার্মায় জাপানের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে।

১৯৪৩ সালের মে মাসে, চীনের জাতীয় বিপ্লবী সেনাবাহিনী ইয়াংজি নদীর তীরে আক্রমণ শুরু করে জাপানীদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করে। সেপ্টেম্বরে, অস্ট্রেলিয়ান সেনারা, নিউ গিনি দখল করে এবং এই অঞ্চলটিকে মিত্রশক্তির জন্য দাবি করে।

১৯৪৪ সালের মধ্যে, যুদ্ধের চিত্র অনেকটা পাল্টে গিয়েছিল। জাপান সহ অক্ষ শক্তিগুলির অচলাবস্থায় অনেক জায়গায় রক্ষণাত্মক ছিল জাপান। সে সময়, জাপানি সামরিক বাহিনী নিজেদেরকে অতিরিক্ত শক্তিশালী বলে মনে করেছিল। তবে অনেক জাপানী সৈন্য এবং সাধারণ নাগরিক বিশ্বাস করেছিল যে তারা জয়ের দেখা নাও পেতে পারেন।

মিত্র বাহিনীর আধিপত্য

 normandy-supply-world-war-ii

normandy-supply-world-war-ii

ইয়াংজি নদীর তীরে সাফল্য অব্যাহত রেখে, চীন লেদো রোডের সরবরাহের লাইনটিকে পুনরায় দাবী করার লক্ষ্যে ১৯৪৪ সালের জানুয়ারিতে উত্তর বার্মায় আরেকটি বড় আক্রমণ চালায়। পরের মাসে জাপান বার্মায় দ্বিতীয় আক্রমণ শুরু করে।

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ঐ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ট্রুক অ্যাটল, মাইক্রোনেশিয়া এবং এনিয়েভটোক দখলে নিয়েছিল এবং সেই সাথে, মার্চ মাসে ভারতের তমুতে জাপানি আগ্রাসন থামিয়ে দেয়। কোহিমার যুদ্ধে পরাজয়ের পরে, জাপানি বাহিনী বার্মায় ফিরে গিয়েছিল এবং সে মাসের শেষে মেরিয়ান দ্বীপপুঞ্জে সংঘটিত সাইপানের যুদ্ধও হেরেছিল।

তবে জাপানীদের জন্য সবচেয়ে বড় আঘাতটি তখনও আসেনি। ১৯৪৪ সালের জুলাই মাসে ফিলিপাইন সাগরের যুদ্ধটি ছিল একটি মূল নৌযুদ্ধ যা কার্যকরভাবে জাপানিজ ইম্পেরিয়াল নেভির ক্যারিয়ারের বহরটি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। ৩১ শে ডিসেম্বরের মধ্যে আমেরিকানরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জাপানিদের পরাজিত করতে শুরু করে, এবং সেই সাথে জাপানি দখল থেকে ফিলিপিন্সকে মুক্ত করতে সফল হয়েছিল।

আরও পড়ুনঃ- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদী হত্যার প্রকৃত সংখ্যা কত? (নাৎসি বাহিনীর দ্বারা সমস্ত ইউরোপে কত সংখ্যক ইহুদী হত্যার স্বীকার হয়?)

পারমাণবিক আক্রমণ এবং জাপানের আত্মসমর্পণ

 8th Air Force The Wilhelmshaven bombings: A mission of valo

8th Air Force_The Wilhelmshaven bombings: A mission of valo

অনেক ক্ষতির পরেও জাপান মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানায় এবং বিশ্বযুদ্ধ অনেকটা দ্বিপক্ষীয় যুদ্ধে রুপ নেয়। অক্ষ শক্তি এবং মিত্র সেনাবাহিনীর মধ্যে পারমাণবিক বোমা হামলার বিষয়টি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এবং এভাবেই পারস্পরিক উত্তেজনা অব্যাহত রেখে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয়।

১৯৪৫ সালের প্রথম দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপান নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলিতে প্রবেশ অব্যাহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায়, জানুয়ারিতে ফিলিপিন্সের লুজন দ্বীপে মার্কিন সেনা অবতরণ করে, সেখানে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে এবং মার্চ মাসে ইও জিমার (Iwo Jima) যুদ্ধে জয়লাভ করে।

এদিকে, মিত্ররা ফেব্রুয়ারিতে বার্মা রোড পুনরায় চালু করে এবং শেষ পর্যন্ত ৩ মার্চ ম্যানিলায় (ফিলিপাইনের রাজধানী) জাপানিদের আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন শেষের দিকে, ঠিক ঐ সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট ১২ এপ্রিল তারিখে মারা যান এবং হ্যারি এস ট্রাম্যান তার স্থলাভিষিক্ত হন। ইতোমধ্যে, ইউরোপ ও এশিয়ায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ উদ্দীপনার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল। জাপান অনেক শক্তি হারালেও একাধিকবার আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকার করেছিল।

৬ আগস্ট, ১৯৪৫ সালে আমেরিকান সরকার প্রথম বিশ্বের যে কোনও দেশের, বড় কোন শহরের বিরুদ্ধে পারমাণবিক হামলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতি টানার একমাত্র উপায় হিসেবে জাপানের হিরোশিমাতে পারমাণবিক বোমা হামলা চালানো হয়।

এর ঠিক তিন দিন পরে ৯ আগস্ট, জাপানের নাগাসাকিতে আরও একটি পরমাণু বোমা হামলা চালানো হয়েছিল। এর মধ্যেই, সোভিয়েত রেড আর্মি জাপানী-অধিকৃত মনছুরিয়ায় আক্রমণ করেছিল।

পারমাণবিক হামলার এক সপ্তাহেরও কম সময় পরে, ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট জাপানি সম্রাট হিরোহিতো আনুষ্ঠানিকভাবে মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছিলেন। 

 

তথ্যসূত্রঃ- https://thediplomat.com/2015/08/remembering-world-war-ii-in-asia-dishonest-visions-of-history/

https://history.mit.edu/subjects/world-war-ii-asia

https://www.thoughtco.com/world-war-ii-in-asia-195787

https://en.wikipedia.org/wiki/Events_preceding_World_War_II_in_Asia

http://afe.easia.columbia.edu/special/japan_1900_power.htm

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top