Reconstructed_Spanish_Flu_Virus.jpg

স্প্যানিশ ফ্লু (Spanish Flu) এবং উনবিংশ শতাব্দীর ভয়াবহতা 

১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু (Spanish Flu) মহামারী, ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক একটি ভাইরাস জনিত অসুখ হিসেবে দেখা দিয়েছিলো। বিশ্বজুড়ে আনুমানিক ৫০ কোটি মানুষ এতে সংক্রামিত হয়েছিল যা পৃথিবীর তৎকালীন জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। প্রায় ২ থেকে ৫ কোটি মানুষ মৃত্যু বরনসহ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল।

১৯১৮ সালের ফ্লুটি দ্রুত ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলসহ বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পরেছিল। এই ঘাতক ফ্লু স্ট্রেনের চিকিত্সার জন্য কোনও কার্যকর ওষুধ বা ভ্যাকসিন তখন পর্যন্ত কার্যকর ছিল না।

প্রত্যেক নাগরিককে মুখোশ পরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, স্কুল, থিয়েটার এবং ব্যবসা বন্ধ ছিল এবং ভাইরাসটির মারাত্মক গ্লোবাল মার্চ (বিশ্বব্যাপী বিচরন) শেষ হওয়ার আগে বিশ্বের সার্বিক ব্যাবস্থাপনা অনেকটাই পঙ্গু করে দিয়েছিলো।

ফ্লু কি? ফ্লুর সিজন

ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু একটি ভাইরাস যা সাধারণত প্রথমে শ্বাসযন্ত্রকে আক্রমণ করে। ফ্লু ভাইরাস অত্যন্ত সংক্রামক। যখন সংক্রামিত ব্যক্তি কাশি, হাঁচি দেয় বা কথা বলে, তখন শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি হয় এবং এ সময় জিবানু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে, তখন কাছের যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে।

অধিকন্তু, যে ব্যক্তি এ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত, সে কোন কিছু কিছু স্পর্শ করলে এবং কোন ব্যাক্তির মুখ, চোখ বা নাক স্পর্শ করে থাকলে সে সংক্রামিত হতে পারে।

 “প্রিয় পাঠক, আপনারা হয়তো “করোনা ভাইরাসের” সাথে স্প্যানিশ ফ্লুর মিল খুঁজে পাচ্ছেন”

আসলে প্রতিবছরই ফ্লুর প্রকোপ ঘটে এবং অনেক সময় এটার তীব্রতার তারতম্য হয়, তবে কোন ধরণের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে তার উপর ক্ষতির ব্যাপারটা বহুলাংশে নির্ভর করে। (ফ্লু ভাইরাস দ্রুত নিজের আচরণ পরিবর্তন করতে পারে।)

“ফ্লুর মওসুম” সাধারণত বসন্তের মাঝা মাঝি সময় থেকে শুরু হয়। সাধারণত প্রতি বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে অনেকেই ফ্লুজনিত জটিলতার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন।

অল্প বয়সী বাচ্চা, ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যাক্তি, গর্ভবতী মহিলা এবং নির্দিষ্ট কিছু রোগ যেমন হাঁপানি, ডায়াবেটিস বা হৃদরোগ, নিউমোনিয়া, কান এবং সাইনাস সংক্রমণ এবং ব্রঙ্কাইটিস সহ জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের ক্ষেত্রে ফ্লু সংক্রান্ত জটিলতার ঝুঁকি বেশি থাকে।

১৯১৮ সালে যখন স্প্যানিশ ফ্লু (Spanish Flu) মহামারী ঘটে তখন একটি বিশেষ ভাইরাসজনিত নতুন ইনফ্লুয়েঞ্জা স্ট্রেন, যার কথা খুব কম শনা যায়, সেটি  দ্রুত বিশ্বব্যাপী এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ে।

স্প্যানিশ ফ্লুর লক্ষণ

ফ্লু প্রতিরোধী মাস্ক
ফ্লু প্রতিরোধী মাস্ক

১৯১৮ সালের মহামারীর প্রথম ধাক্কাটি সে বছরের বসন্তে এসেছিল এবং এটি সাধারণত হালকা ধরণের ছিল। সাধারন অসুস্থতা, ঠান্ডা লাগা, জ্বর এবং ক্লান্তির মতো সাধারণ ফ্লুর লক্ষণগুলির মুখোমুখি হয়েছিল মানুষ। তবে আক্রান্তদের বেশীরভাগই কয়েক দিন পরে সুস্থ হয়ে উঠেন এবং মৃত্যুর সংখ্যাও কম ছিল।

যাইহোক, একই বছরের শরত্কালে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের একটি দ্বিতীয় ধাক্কা মানব জাতির উপর নতুন প্রতিশোধের নেশায় হাজির হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে লক্ষণগুলি প্রকাশের কয়েক ঘন্টা বা কয়েক দিনের মধ্যে তারা মারা গিয়েছিলেন।

তাদের ত্বক নীল হয়ে যায় এবং তাদের ফুসফুস একপ্রকার তরল পদার্থে ভরে গিয়েছিল, যার ফলে তাদের বেশীরভাগই দম বন্ধ হয়ে মারা যায়। ১৯১৮ সালে মাত্র এক বছরে আমেরিকার গড় আয়ু প্রায় ১২ বছর কমে গিয়েছিলো।

 

স্প্যানিশ ফ্লুর কারন কি?

মহামারীর কারণ যে ইনফ্লুয়েঞ্জার নির্দিষ্ট একটি ধরন তা অনুমান করা গেলেও, এটি ঠিক কোথা থেকে  এসেছিল তা সঠিক জানা যায়নি। তবে শুরুর কয়েক মাসের মধ্যে গ্রহের প্রায় প্রতিটি অংশে ছড়িয়ে যাওয়ার আগে ১৯১৮ সালের ফ্লুটি প্রথম ইউরোপ, আমেরিকা এবং এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে লক্ষ্য করা যায়।

১৯১৮ সালের ফ্লু এক জায়গায় যে স্থির ছিল, তা কিন্তু নয়। তা সত্ত্বেও, এটি স্প্যানিশ ফ্লু (Spanish Flu) হিসাবে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছিল, কারণ স্পেনে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি।

যুদ্ধের সময় সংবাদ প্রকাশনা বন্ধ থাকার কারনে এটি অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলিকে প্রভাবিত করেছিল। (এমনকি স্পেনের রাজা আলফোনসো দ্বাদশও ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানা যায়।)

১৯১৮ সালের ফ্লুর একটি অস্বাভাবিক দিক হ’ল এটি স্বাস্থ্যকর, যুবক-যুবতীদেরও সমান্তালে আক্রান্ত করছিল, যে বয়সটা সাধারণত এই ধরণের সংক্রামক ব্যাধির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে পারে, তা সত্ত্বেও I 

প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময়ে নিহত হওয়ার চেয়ে ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লুতে বেশি সংখ্যক মার্কিন সেনা মারা গিয়েছিল। মার্কিন নৌবাহিনীর ৪০ শতাংশ সদস্য ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছিল।

সেনাদের অসচেতনতা এবং জনাকীর্ণ জাহাজ ও ট্রেনে চলাফেরা করার কারনে বিশ্বজুড়ে চলা ঘাতক ভাইরাস ছড়াতে তারা সহায়তা করেছিল।

যদিও স্প্যানিশ ফ্লুতে মৃত্যুর সংখ্যা  বিশ্বব্যাপী প্রায় ২ কোটি থেকে ৫ কোটি অনুমান করা হয়। তবে অন্যান্য এমনও অনুমান করা হয় যে, প্রায় ১০০ মিলিয়ন (১০ কোটি) মানুষ এতে ভুক্তভোগী ছিল। যা বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৩ শতাংশ।

তবে, অনেক জায়গায় চিকিত্সার রেকর্ড রাখার অভাবে সঠিক সংখ্যা জানা অসম্ভব হয়ে পরেছিল।

তবে আমেরিকার এক পরিসংখানে যা জানা যায় তা হ’ল, আমেরিকাতে ১৯১৮ সালের ফ্লুতে খুব কম লোকই নিরাপদ ছিল, ভুক্তভোগীরা বড় বড় শহরগুলির বাসিন্দা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত আলাসকান সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যে ফ্লুর প্রবনতা দেখা দিয়েছিল।

এমনকি রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন ১৯১৯ সালের প্রথম দিকে ভার্সাই চুক্তি সমঝোতার সময় ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

 

কেন একে স্প্যানিশ ফ্লু (Spanish Flu)‘ বলা হয়েছিল?

influenza_virus.jpg
influenza_virus

১৯১৮ সালের ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীটির উৎস কিন্তু স্পেনে ছিল না।১৯১৮ সালের বসন্তে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মানবসৃষ্ট ভয়াবহতা আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছিল। ঠিক সে সময়ই প্রকৃতি মাতা,  আধুনিক ইতিহাসে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো মারাত্মক স্ট্রেনটি প্রকাশ করেছিল।

পরের ১৮ মাসে বিশ্বব্যাপী ৪০ শতাংশের মতো অঞ্চলে ভাইরাসটি সংক্রামিত হয়ে পড়ে।

এটি সাধারণত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে “স্প্যানিশ ফ্লু (Spanish Flu)” বা “স্প্যানিশ লেডি” নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় নিরপেক্ষ থাকার জন্য স্পেন কয়েকটি প্রধান ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে একটি ছিল। মিত্র ও কেন্দ্রীয় শক্তির দেশগুলির মতো যুদ্ধকালীন মনোবলকে বাড়াতে, বাড়তি চিন্তা এড়ানোর জন্য ফ্লুর সংবাদকে চাপা দেয়া হয়েছিলো।

১৯১৮ সালের মে-এর শেষদিকে এই অসুস্থতার খবর স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে প্রথম শিরোনাম হয়। যেহেতু মিডিয়া ব্ল্যাকআউটের মধ্য দিয়ে যাওয়া দেশগুলি কেবল স্প্যানিশ সংবাদ উত্স থেকে এসেছে তাই বিশ্ববাসী স্বাভাবিকভাবেই ধরে নিয়েছিল যে দেশটি মহামারীটির স্থল।

তবে ততোক্ষণে স্প্যানিশরা, বিশ্বাস করেছিল যে ফ্রান্স থেকে আসা ভাইরাসটি তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে, তাই তারা একে “ফরাসি ফ্লু” বলে একে অভিহিত করেছিল।

যদিও স্পেনে “স্প্যানিশ ফ্লু” এর উদ্ভব কিনা সেটা অনিশ্চিত, তবে বিজ্ঞানীরা এর উত্স সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত নয়। ফ্রান্স, চীন এবং ব্রিটেন সবাইকে এই ভাইরাসের সম্ভাব্য জন্মস্থান হিসাবে সন্দেহ করা হয়েছিলো।

গবেষকরা এ নিয়ে বিস্তৃত গবেষণাও করেছেন, তবে মহামারীটির শিকার প্রথম কোথায় হয়েছিলো সেটা তারা এখনও আবিষ্কার করতে পারেনি।

 

স্প্যানিশ ফ্লুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ

Flu-Soldiers.jpg
Flu-Soldiers

১৯১৮-এর ফ্লুতে মানব জাতি আক্রান্ত হওয়ার পরে, চিকিত্সক এবং বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত ছিলেন না যে এটি কীভাবে ঘটেছে বা কীভাবে এটির চিকিত্সা করা যায়।

সে সময় আজকের মতো, কার্যকর কোনও ভ্যাকসিন বা অ্যান্টিভাইরাল ছিল না, যা দ্বারা এ ফ্লুর চিকিত্সা করা যায়। (প্রথম লাইসেন্সযুক্ত ফ্লু ভ্যাকসিনটি ১৯৪০ এর দশকে আমেরিকাতে আবিষ্কার হয়েছিল। পরের দশকে, ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিতভাবে এই ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারত যা ভবিষ্যতে মহামারী নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।)

জটিল বিষয় হ’ল চূড়ান্ত বিশ্বযুদ্ধটি (স্প্যানিশ ফ্লু) আমেরিকান চিকিত্সক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের ঝুকির মধ্যে ফেলে দিয়েছিলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেডিকেল কর্মীদের মধ্যে অনেকে নিজেরাই ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

অধিকন্তু, কিছু অঞ্চলের হাসপাতালগুলি ফ্লুর রোগীদের সাথে ভালো আচরণ করছিল না। স্কুল, বেসরকারী ভবন এবং অন্যান্য বিল্ডিংগুলি অস্থায়ী হাসপাতালে রূপান্তর করতে হয়েছিল।

বেশিরভাগ মানুষ একে অপরের থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেছিল, নাগরিকদের মুখোশ পরা এবং স্কুল, গীর্জা এবং থিয়েটারগুলি সহ সরকারী স্থান সমুহ বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো।

লোকদের বাড়ির ভিতরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, গ্রন্থাগারগুলি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো এবং যেখানে সেখানে থুথু ফেলার উপর বিধি নিশেধ আরোপ করা হয়েছিলো।

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতে, মহামারী চলাকালীন, নিউ ইয়র্ক সিটির বয় স্কাউটরা রাস্তায় থুতু ফেলতে দেখেছে এমন লোকদের কাছে গিয়ে তাদের হাতে এমন কার্ড ধরিয়ে দিয়েছিল, যাতে লেখা ছিল: “আপনি স্যানিটারি কোড লঙ্ঘন করছেন” “

 

অ্যাসপিরিন বিষ এবং ফ্লু

Spanish_flu_hospital.png
Spanish_flu_hospital

ফ্লুর কোনও প্রতিকার না করে অনেক চিকিৎসকই রোগীকে কিছু ওষুধ লিখেছিলেন, এতে তারা ভেবেছিল যে ঔষধে রোগের লক্ষণগুলি হ্রাস পাবে। এক্ষেত্রে ডাক্তাররা অ্যাসপিরিন ব্যাবহার করেছিল। 

১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লুতে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাওয়ার আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সার্জন জেনারেল, নেভি এবং আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য, সকলেই এসপিরিন ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছিল।

চিকিত্সকরা আক্রান্ত রোগীদের প্রতিদিন ৩০ গ্রাম পর্যন্ত অ্যাসপিরিন গ্রহণের পরামর্শ দেন, কিন্তু এটি এমন একটি ডোজ যা বর্তমানে বিষাক্ত বলে পরিচিত। কিছু দিনের মধ্যে অ্যাসপিরিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার লক্ষণগুলির মধ্যে হাইপারভেন্টিলেশন এবং পালমোনারি শোথ, বা ফুসফুসে তরল জমার বিষয়টি প্রকাশ পায়।

এটি বিশ্বাস করা হয় যে, অক্টোবরের বেশিরভাগ মৃত্যুর ঘটনার পেছনে অ্যাসপিরিনের বিষক্রিয়াই মূলত দায়ী ছিল।

স্প্যানিশ ফ্লু মানুষের চরম ক্ষতি সাধন করেছিল। এটা এমনকি পুরো পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। অনেক লোককে তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য নিজেদেরই কবর খনন করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

ফ্লু অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিকারক ছিল। সারা পৃথিবীতেই প্রচুর কর্মচারী অসুস্থ থাকায় ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল।  শ্রমিকরা ফ্লু আক্রান্ত হওয়ার কারণে কল কারখানার উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আবর্জনা সংগ্রহের মতো সাধারন পরিষেবাগুলি বাধাগ্রস্থ হয়েছিল। কিছু জায়গায় ফসল তোলার মতো পর্যাপ্ত খামারি শ্রমিক ছিল না। 

 

স্প্যানিশ ফ্লু মহামারী যেভাবে শেষ হয়েছিলো

১৯১৯ সালের গ্রীষ্মের মধ্যে, স্প্যানিশ ফ্লুর মহামারীটি শেষ হয়ে যায়, কারণ যারা আক্রান্ত হয়েছিল তারা হয় মারা গিয়েছিল বা নিজেদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছিল।

প্রায় ৯০ বছর পরে, ২০০৮ সালে, গবেষকরা ঘোষণা করেছিলেন যে তারা ১৯১৮ সালের ফ্লুটি কিভাবে এত মারাত্মক হয়ে উঠেছিলো তার কারণ আবিষ্কার করেছেন। তারা বলেছিলেন তিনটি জিনের একটি গ্রুপ, ভাইরাসটিকে এতোটা ভয়ংকর প্রাণঘাতী করে তুলেছিল।

এতে আক্রান্তদের  ব্রঙ্কিয়াল টিউব ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলো এবং ফুসফুসকে দুর্বল করেছিল এবং ভাইরাসগুলো নিজেরাই মানবদেহে নিউমোনিয়ার উপায় তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলো।

১৯১৮ সাল থেকে, অন্যান্য বেশ কয়েকটি ইনফ্লুয়েঞ্জার মহামারী দেখা গেছে, যদিও স্প্যানিশ ফ্লুর মতো মারাত্মক কোনওটি ছিলোনা। ১৯৫৭ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত চলা একটি ফ্লু মহামারীতে বিশ্বব্যাপী প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছিলো।

২০০৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এইচ১এন১ (বা “সোয়াইন ফ্লু”) মহামারীর সময় আরও বেশ কিছু মানুষ মারা গিয়েছিল। ২০২০ সালে যে করোনাভাইরাস মহামারীটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। এর পেছনে অনেকগুলো কারন আমরা অনুসন্ধান করলে পাই।

আধুনিক এই মহামারীগুলির প্রতিটি স্প্যানিশ ফ্লু বা “ভুলে যাওয়া মহামারী” এর প্রতি আমাদের নতুন করে আগ্রহী করে তোলে এবং আমাদের এ সকল প্রাণঘাতী বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগ ফিরিয়ে নিয়ে আসে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, এবং আমাদের অস্বীকার করার উপায় নাই যে আমরা নিজেরাই আমাদের নিজেদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছি, সেই সাথে মানব জীবনকে সংক্ষিপ্ত করে তুলছি।

 

তথ্যসূত্রঃ- https://en.wikipedia.org/wiki/Spanish_flu

https://www.history.com/topics/world-war-i/1918-flu-pandemic

https://www.livescience.com/spanish-flu.html

https://www.cdc.gov/flu/pandemic-resources/1918-pandemic-h1n1.html

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top