দা স্ট্যাচু অব খ্রিস্ট দ্য রেডিমার (Statue of Christ the Redeemer)

রিও শহর থেকে ২৩১০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত খ্রিস্ট দ্য রেডিমার (Christ the Redeemer) মূর্তিটি প্রায় একশত বছর ধরে বিশেষজ্ঞ এবং ইতিহাসবিদ সহ সাধারন পর্যটকদের মুগ্ধ করে আসছে। এটি পৃথিবীতে যিশুখ্রিস্টের চতুর্থ বৃহত্তম মূর্তি, এবং গ্রহের বৃহত্তম আর্ট ডেকো-স্টাইলের ভাস্কর্য।

সর্বোপরি, ২০০৭ সালে এই মূর্তিটি মাচু পিচ্চু (Machu Picchu)র সাথে বিশ্বের নতুন সাতটি বিশ্ব আশ্চর্য হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল। নির্বাচিত সাতটি বিশ্ব আশ্চর্যের মধ্যে চীনের গ্রেট ওয়াল, রোমান কলোসিয়াম এবং তাজমহল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

রিও ডি জেনেরিওর কর্কোভাডো মাউন্টের (Mount Corcovado) শীর্ষে এই মূর্তিটি দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। মূর্তিটির উচ্চতা ৯৮ ফুট (বা ৩০ মিটার), যা নিউইয়র্কের স্ট্যাচু অফ লিবার্টির উচ্চতা দুই-তৃতীয়াংশ এবং এর প্রসারিত বাহু দুটির দৈর্ঘ্য ৯২ ফুট (অথবা ২৮ মিটার) অনুভূমিকভাবে।

মূর্তিটি কেবল রিও শহরের স্বীকৃতিস্বরূপ নয়, এটি ব্রাজিলের সাংস্কৃতির আইকন হিসাবে পরিণত হয়েছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, মূর্তিটি খ্রিস্টধর্মের একটি বিশ্বব্যাপী প্রতীক হয়ে উঠেছে যা প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসীদেরকে মাউন্ট করকোভাডোর শীর্ষে আকর্ষণ করে থাকে।

রিওর সবচেয়ে বিখ্যাত ল্যান্ডমার্কের পিছনে আকর্ষণীয় ইতিহাস

christ-the-redeemer-brazil
christ-the-redeemer-brazil

রিওতে অবস্থিত যিশুখ্রিষ্টের বিশাল মূর্তির নকশার ধারণাটি প্রথম আসে ১৮৫০ এর দশকে, যখন স্থানীয় এক পুরোহিত কর্কোভাডো পাহাড়ের উপরে একটি খ্রিস্টান স্মৃতিসৌধ স্থাপনের চিন্তা করেছিলেন। স্পষ্টতই তিনি এ প্রকল্পটির তহবিলের জন্য প্রিন্সেস ইসাবেলকে (তৎকালীন দ্বিতীয় সম্রাট পেদ্রো এবং ব্রাজিলের প্রিন্সেস রিজেন্টের কন্যা) অনুরোধ করেছিলেন।

তবে ১৮৮৯ সালে ব্রাজিলে খ্রিস্টান চার্চ এবং সরকারের মধ্যে কিছু মতো বিরোধ দেখা দেয়। ব্রাজিল প্রজাতন্ত্রের এক ঘোষণাপত্রে, খ্রিস্ট দ্য রেডিমার (Christ the Redeemer) স্টাচু স্থাপনের ধারণাটি বাতিল হয়ে যায়, এবং একটি চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসাবে রাষ্ট্র ব্যাবস্থা থেকে বিভিন্ন রাজ্যের চার্চকে আলাদা করে দেয়া হয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে রিও ডি জেনিরোতে রোমান ক্যাথলিক আর্চডোসিস এবং স্থানীয় একদল ব্রাজিলিয়ান সম্প্রদায় “ধর্মীয় বিশ্বাসের অভাব” সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হতে শুরু করেছিল। তারা আশা করেছিল যে রিওর একটি পাহাড়ের শীর্ষে যিশুর বিশাল মূর্তি স্থাপন করে, তারা দেশে একটি “ক্রমবর্ধমান ধার্মিকতা” র বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসতে পারবে।

এ সময় তাদের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়, মূর্তিটি কর্কোভাডো মাউন্টের শীর্ষে স্থাপন করা হোক। তারা মনে করেছিলো, এর ফলে এটি রিওর যে কোনও জায়গা থেকে যীশুর মূর্তিটি দৃশ্যমান হবে এবং এভাবে খ্রিস্টান ধর্মের কাছে “রিওকে বিশেষভাবে” (রিও ডি জেনিরো সে সময় ব্রাজিলের রাজধানী শহর ছিল) উপস্থাপণ করা সম্ভব হবে।

খ্রিস্ট দ্য রেডিমার এর নকশা এবং নির্মাণ

Christ_on_Corcovado_mountain
Christ_on_Corcovado_mountain

মূর্তির নকশাটি কোনও একজন আর্কিটেক্ট দ্বারা নয়, বরং এটি বেশ কয়েকজন ডিজাইনার যারা এর নকশা এবং নয় বছরেরও বেশি সময় ধরে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছিলো। এই মূর্তিটি নির্মাণে ব্যয় হয় ২,৫০,০০০ ডলার (যা বর্তমানে ৩.৪ মিলিয়ন ডলারের সমতুল্য) এবং এর পুরো অর্থায়ন করেছিল ব্রাজিলের ক্যাথলিক সম্প্রদায়।

পর্তুগালের অধীন থেকে ব্রাজিলের স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে, ১৯২২ সালের  ৪ এপ্রিল, এ মূর্তিটির ভিত্তি প্রস্তর আনুষ্ঠানিকভাবে স্থাপন করা হয়েছিল। একই বছর একজন ডিজাইনারের সন্ধানে একটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ব্রাজিলে।

নির্বাচনের মাধ্যমে ব্রাজিলিয়ান ইঞ্জিনিয়ার হিটার দা সিলভা কস্তাকে বেঁছে নেয়া হয়। তিনি, প্রথমদিকে খ্রিস্ট দ্য রেডিমার (Christ the Redeemer) এর একটি প্রাথমিক স্কেচ তৈরি করেছিলেন, যেখানে, যিশু এক হাতে ক্রস এবং অন্য হাতে একটি গ্লোব নিয়ে দড়িয়ে থাকবেন এবং তিনি এই মূর্তিটির জন্য পর্বতের শীর্ষ থেকে “উদীয়মান সূর্যের মুখোমুখি হওয়ার” ধারণাও নিয়ে তার মতামত প্রকাশ করেছিলেন।

তবে, অবশেষে দা সিলভা কস্তা তার মন পরিবর্তন করেন এবং বিশাল আর্ট ডেকো-স্টাইলের মূর্তির নকশা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যা এটি আজ আপনারা দেখতে পান। মূর্তির দিকে তাকালে দেখা যায়, যিশু খ্রিস্ট তার বাহু প্রসারিত করে রেখেছেন। এটি এমন, যেন তিনি রিওর নাগরিকদের উন্মুক্ত বাহুতে স্বাগত জানাচ্ছেন এবং রক্ষা করছেন (আক্ষরিক অর্থে)।

যীশু খ্রিস্টের এ মূর্তিটির চেহারা রোমান শিল্পী গেরোগে লিওনিদা ডিজাইন করেছিলেন, অন্যদিকে মূর্তির আর্ট ডেকো নকশাটি  করছিলেন পল ল্যান্ডোভস্কি (একজন ফরাসি-পোলিশ ভাস্কর)। যিনি বেশ কয়েক বছর মূর্তির নকশাকে টুকরো টুকরো ভাবে ডিজাইন করেছিলেন, এবং এ গুলোকে পরবর্তীতে ব্রাজিলে প্রেরণ করা হয়েছিল। চূড়ান্ত কাজ হিসেবে কংক্রিট দিয়ে সব টুকরো গুলোকে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল।

যে কেউ প্রথমবারের জন্য মূর্তির উপরে চোখ মেলে তাকালে খুব বিস্মিত হবে, এটা ভেবে যে, মূর্তিটি এতো উঁচু স্থানটিতে কীভাবে উঠানো হয়েছিলো?

মূর্তিটির বিশাল আকারের কারণেই, মুলত করকোভাডো মাউন্টের শীর্ষে স্থাপন করা হয়েছিল এবং সমস্ত প্রয়োজনীয় উপকরণ (পাশাপাশি শ্রমিকরা) একটি ছোট কগ-হুইল ট্রেনের মাধ্যমে পাহাড়ের উপরে পরিবহন করা হয়েছিল (যা সেসময় পর্যটকদের ভিস্তা দেখতে পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যেত)।

শ্রমিকরা দীর্ঘকায় বেশকিছু কাঠের খুঁটি নির্মাণের মাধ্যমে মূর্তি স্থাপনের কাজ শুরু করেছিল। সমস্ত উপকরণকে সঠিক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের স্কেল করতে হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে, এটি এমন একটি শব্দ যার প্রতিটি অর্থ “সত্যই বিরক্তিকর”। তবুও সেখানে নিয়োজিত শ্রমিকরা তীব্র ধর্মীয় বিশ্বাসকে নিজেদের মধ্যে ধারন করে এ কাজটি সম্পাদন করেছিল। খ্রিস্ট দ্য রেডিমার (Christ the Redeemer)কে চাঙ্গা কংক্রিট এবং সাজিমাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিলো, এবং ১৯২২ সাল থেকে ১৯৩১ সালের মধ্যে মূর্তিটির নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়।

 

তথ্যসূত্রঃ- https://en.wikipedia.org/wiki/Christ_the_Redeemer_(statue)

Christ the Redeemer


https://strawberrytours.com/rio-de-janeiro/blog/the-story-behind-rio-s-christ-the-redeemer-statue

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top