Four_sets_of_Gold_Coins_of_Vima_Kadphises.jpg

প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা যা প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশ ঘিরে গড়ে উঠেছিলো

ভারতীয় উপমহাদেশ প্রায় সব সময়ের জন্যই বর্ষা, খরা, সমান্তরাল ভু-প্রকৃতি, পাহাড়, মরুভূমি এবং বিশেষত নদী সহ এক বিচিত্র এবং উর্বর অঞ্চল বিশিষ্ট জনপদ ছিল, যাকে ঘিরে খ্রিস্টের হাজার বছর পূর্বে প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার প্রথম দিকের শহরগুলির বিকাশ হয়েছিল।

মেসোপটেমিয়া, মিশর, চীন এবং মেস-আমেরিকার পাশাপাশি প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশ তার নিজস্ব সভ্যতা বিকাশের জন্য বিশ্বের কয়েকটি অঞ্চলের মধ্যে একটি হয়ে উঠেছিল। এর প্রাথমিক সাহিত্য/ইতিহাস গাথা সংস্কৃত ভাষায় রচিত হয়েছিল। প্রাচীন ভারতের ইতিহাস খুবই সমৃদ্ধ।

আজ আমরা যে বাংলাদেশে বসবাস করছি, প্রাচীন কালে এখানেও কোন একটি সভ্যতার সমৃদ্ধশালী বিকাশ ঘটেছিল। নিচে আমরা প্রাচীন ভারতের কিছু সারা জাগানো ইতিহাস সম্পর্কে খুবই সংক্ষিপ্তভাবে জানতে চেস্টা করবো। মূলত এ সকল বিষয় গুলোই পরবর্তী ভারত বিকাশের ক্ষেত্রে বড় ভুমিকা পালন করেছে।

আর্যদের আগ্রাসন

আর্য আগ্রাসন হ’ল ইন্দো-আর্য সম্প্রদায়ের (আধুনিক ইরান অঞ্চল থেকে সিন্ধু উপত্যকায় স্থানান্তরিত জনগোষ্ঠী) ভারতীয় উপমহাদেশে স্থানান্তরিত হওয়া। এরা ছিল একটি নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী যারা ইন্দো-আর্য ভাষায় কথা বলতো।

আজকের উত্তর ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং মালদ্বীপ অঞ্চলে এরা বসবাস শুরু করে। মধ্য এশিয়া থেকে ইন্দো-আর্য জনসংখ্যা সাধারণত ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ভারতীয় উপমহাদেশে এসেছিলো।

মনে করা হয়, উত্তর হরপ্পান আমলে ধীরে ধীরে এরা ছড়িয়ে পড়েছিল, যার ফলে উত্তর ভারতীয় উপমহাদেশে একটি ভাষা পরিবর্তিত হয়েছিল। ইরানীদের নিয়ে এসেছিল ইরানীরা, যারা ইন্দো-আর্যদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে গিয়েছিলো পরবর্তীতে।

মৌর্য রাজবংশের তৃতীয় রাজা ছিলেন সম্রাট অশোক। তিনি খ্রিস্টপূর্ব ২৭০ সাল থেকে ২৩২ খ্রিস্টপূর্ব সময়কাল পর্যন্ত শাসন করেছিলেন। অশোক ২৩২ খ্রিস্টপূর্বব্দে মৃত্যু বরন করেন।

প্রথম দিকে তিনি নিষ্ঠুরতার জন্য বিশেষ পরিচিত ছিলেন, তবে বৌদ্ধ ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার পরেও তিনি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু করেছিলেন ২৬৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে।

জাতিগত ব্যবস্থা

প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার তৎকালীন সমাজ ব্যাবস্থায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একটি সু-নির্দিষ্ট সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস ছিল। ভারতীয় উপমহাদেশের বর্ণ ব্যবস্থা প্রায় সব সময়ই কঠোরভাবে পরিপালন করা হতো এবং সেটা এখনও অব্যাহত রয়েছে।

এ বর্ণ ব্যাবস্থা ত্বকের রঙের সাথে সরাসরি সংযুক্ত ছিল না, এটা ছিল আরও ভয়াবহ শোষিত শ্রেণী বিন্যাস, যেখানে উচ্চ পদস্থরা নিন্ম বর্ণের মানুষকে শুধুই শোষণ করতো।

প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের প্রাথমিক সূত্র

প্রথমদিকে, হ্যাঁ, তবে খুব বেশি সময় ধরে নয়। দুর্ভাগ্যক্রমে, যদিও এখন আমাদের কাছে ঐতিহাসিক কিছু তথ্য রয়েছে যাতে দেখা যায়, ভারতে মুসলিম আক্রমণের আগে, তাও সহস্রাব্দের পিছনে যদি ফিরে  তাকাই, এবং তাতে আমরা যা দেখি তা হল, প্রাচীন ভারত সম্পর্কে, এর সংস্ক্রিতিক বিকাশ ও সামাজিক বিকাশ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না, যতটা আমরা অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতা সম্পর্কে জানি।

মাঝে মাঝে সাহিত্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক রেকর্ড ছাড়াও প্রাচীনকালের এমন কিছু ইতিহাসবিদ রয়েছেন যারা আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট-এর সময়কাল থেকে প্রাচীন ভারত সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে লিখেছিলেন।

গঙ্গা নদী

গঙ্গা (বা হিন্দিতে গঙ্গা) হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগরে প্রবাহিত উত্তর ভারত এবং বাংলাদেশের সমভূমিতে অবস্থিত হিন্দুদের জন্য একটি পবিত্র নদী। এর দৈর্ঘ্য ১৫৬০ মাইল (২৫১০ কিঃমিঃ)।

গুপ্ত রাজবংশ

প্রথম চন্দ্রগুপ্ত (খ্রিষ্টাব্দ ৩২০-৩৩০) ছিলেন গুপ্ত রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। রাজবংশটি ৬ষ্ঠ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল (যদিও ৫শ শতাব্দীর শুরু থেকে হুনরা এটির পতন ঘটানো শুরু করেছিল) এবং বৈজ্ঞানিক / গাণিতিক দিক দিয়ে চমকপ্রদ অগ্রগতি অর্জন করেছিল।

সিন্ধু সভ্যতা

Dholavira1.jpg
Dholavira

উনিশ শতকের দিকে বিভিন্ন অভিযাত্রী এবং বিশ শতকের প্রত্নতাত্ত্বিকেরা প্রাচীন সিন্ধু উপত্যকায় এক নতুন সভ্যতার আবিষ্কার করেছিলেন। তখন ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস নতুন করে লিখতে হয়েছিল। সেখানকার অনেক প্রশ্নই এখনো উত্তরহীন রয়ে গেছে।

খ্রিস্টের জন্মের তিন হাজার বছরেরও আগে সিন্ধু উপত্যকায় সিন্ধু সভ্যতার বিকাশ ঘটে। প্রায় দুই হাজার বছরের পুরনো প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতাটি হঠাৎ করেই যেন অদৃশ্য হয়ে যায়।

এ সময় ভারতীয় উপমহাদেশের লোকেরা কথা বলার জন্য কমপক্ষে চারটি ভিন্ন ভাষা ব্যবহার করেছিল। সংস্কৃত সম্ভবত এগুলির মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত ভাষা ছিল এবং এটি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার (লাতিন এবং ইংরেজি) মধ্যে সংযোগ রাখতে বা সহায়তা করতে ব্যবহৃত হয়েছিল। 

হরপ্পান সংস্কৃতি

হরপ্পা ভারতীয় উপমহাদেশের একটি অতি প্রাচীন শহুরে অঞ্চল। হরপ্পান শহরগুলি বিভিন্ন গ্রিডে স্থাপন করা হয়েছিল এবং এরা স্যানিটেশন ব্যবস্থা তৈরি করেছিল। সিন্ধু-সরস্বতী সভ্যতার অংশ হরপ্পা তখন যেখানে অবস্থিত ছিল তা বর্তমানের আধুনিক পাকিস্তান।

মহেঞ্জো-দারো

হরপ্পার পাশাপাশি মহেঞ্জো-দারো আর্য আগ্রাসন শুরু হওয়ার আগে থেকেই সিন্ধু নদ উপত্যকার অন্যতম ব্রোঞ্জ যুগের একটি সমৃদ্ধশালী সভ্যতা ছিল।

মহাজনপদ এবং মৌর্য সাম্রাজ্য

খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ৫০০ এর মধ্যে মহাজনপদ নামে পরিচিত ১৬ টি শহর-রাজ্য প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে আবির্ভূত হয়েছিল।

মৌর্য সাম্রাজ্য, যা খ্রিস্টপূর্ব ৩২১-১৮৫ সময়কাল  পর্যন্ত চলেছিল। এ সভ্যতা ভারতের বেশিরভাগ অংশ অর্থাৎ পূর্ব থেকে পশ্চিমের অঞ্চলকে একীভূত করেছিল। ঘৃণিত হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে এ রাজবংশের সমাপ্তি ঘটে।

পোরাস এবং পাঞ্জাব অঞ্চল

পোরাস ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের একজন রাজা, যাকে গ্রেট আলেকজান্ডার ৩২৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে খুব কষ্টে পরাজিত করেছিলেন। এটি ভারতের ইতিহাসের অন্যতম একটি তারিখ।

পাঞ্জাব, ভারত ও পাকিস্তানের একটি অঞ্চল যা সিন্ধু নদীর উপনদীগুলির আশেপাশে অবস্থিত। বীস, রবি, সুতলজ, চেনাব এবং ঝিলাম (গ্রীক, হাইডাস্পস) নদী এখানে বয়ে চলেছে।

প্রধান ধর্ম

প্রাচীন ভারত থেকে আগত প্রধান তিনটি মূল ধর্ম যা এখনো বিদ্যমান রয়েছে: বৌদ্ধ, হিন্দু এবং জৈন ধর্ম। হিন্দু ধর্মই ছিল প্রথম, যদিও ব্রাহ্মণ্যবাদ ছিল হিন্দু ধর্মের প্রাথমিক রূপ। অনেকে বিশ্বাস করেন হিন্দু ধর্ম হ’ল প্রাচীনতম ধর্ম যা এখনো বিদ্যমান।

যদিও এটিকে কেবল উনিশ শতক থেকেই হিন্দু ধর্ম বলা হয়।  বস্তুত অন্য দুটি ধর্ম হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের দ্বারা বিকশিত হয়েছিল।

 

 

তথ্যসুত্রঃ- https://www.ancient.eu/india/

https://en.wikipedia.org/wiki/History_of_India

1 thought on “প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা যা প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশ ঘিরে গড়ে উঠেছিলো”

  1. খুব সুন্দর পোস্ট তবে রাজবংশগুলো সম্পর্কে আরো আলোচনা করলে ভালো হতো

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top