humanity-254788_1280.jpg

বিশ্বের অতিরিক্ত জনসংখ্যা সমস্যা এবং আমাদের ভবিষ্যৎ চিন্তা

বিশ্বের অতিরিক্ত জনসংখ্যা এবং এর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ পৃথিবীতে বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যা। বিশয়টা তলিয়ে না দেখলে এর গভীরতা সম্পর্কে কোন রকম ধারনাই পাওয়া সম্ভব নয়। মানুষের অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ একটি প্রাণীর স্বাভাবিক অধিকার সম্পর্কিত নানা সমস্যা সৃষ্টির পাশাপাশি একটি পরিবেশগত সমস্যাও তৈরি করে থাকে এবং একইসাথে ন্যূনতম মানবাধিকার ভোগের বিষয়্টিও হুমকির মুখে পড়ে।

বিশ্বের অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারনে মানুষ সৃষ্ট নানা রকম কর্মকাণ্ড যেমন অপরিকল্পিত মাটি খনন, বনায়ন ধ্বংস, পরিবেশ দূষণ ছাড়াও কৃষির উন্নয়ন, এবং সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ নানা প্রকার মানবিক ক্রিয়াকলাপ এর ফলে পৃথিবীর সার্বিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

আবাসস্থান, আপরিকল্পিত শিল্প কারখানা নির্মাণ, বড় বড় নগরী তৈরিতে বনায়ন ধ্বংস করার পাশাপাশি সরাসরি বন্য প্রাণীদেরকে হত্যা করা হচ্ছে।

এই ক্রিয়াকলাপগুলি জলবায়ুর ক্ষতিকর পরিবর্তনেও অবদান রাখছে, যা এই গ্রহের বন্য প্রাণীকুলের সাথে সাথে আমাদের  নিজেদের বেঁচে থাকার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

জনসংখ্যা সমস্যা কি?

জনসংখ্যা যখন তার স্বাভাবিক বহন করার ক্ষমতা হরিয়ে ফেলে তখন সেখানে জনবহুলতা দেখা দেয়। বহন ক্ষমতা হ’ল এমন একটি প্রজাতির সর্বাধিক সংখ্যক ব্যক্তি যা আবাসস্থলে অন্য বাসিন্দাদের হুমকি না দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বসবাস করতে পারে।

এখানে অন্য প্রজাতির হুমকির কথা বলা হয়েছে, আসলে আমরা মানুষ জাতি অন্য প্রজাতিকে কি হুমকি দিচ্ছিনা? এটা সত্যিই যে, আমরা অবশ্যই অন্য প্রজাতিকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছি, কেন? এর একটাই উত্তর- নিজেদেরকে টিকিয়ে রাখার জন্য।

আপনি ভাবলে অবাক হবেন ১৯৯০ এর পূর্ববর্তী বছরগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার মোটামুটি একটি সহনীয় মাত্রা বজায় রেখে চলেছে, কিন্তু এর পরবর্তী বছর গুলতে জনসংখ্যা অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে।

বর্তমান ও ভবিষ্যতে জনসংখ্যার চিত্র?

human-334110_640.jpg
human flow

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারী অনুসারে দেখা যায়, ১৯৯৯ সালে বিশ্বে ৬০০ কোটি মানুষ ছিল কিন্তু ২০১১ সালের অক্টোবরে সেটা ৭০০ কোটিতে পৌঁছে যায়। ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল ৭৭২ কোটি। পৃথিবীতে এমন অনেকগুলো সংস্থা রয়েছে যারা প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধির উপর নানা ভাবে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।

বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে  অনুমান করা হয়, পৃথিবীর জনসংখ্যার সাধারন ধারন ক্ষমতা ৪ থেকে ১৬ বিলিয়নের মধ্যে। যদিও জনসংখ্যার বৃদ্ধি উন্নত দেশগুলোতে ধীরগতিতে রয়েছে, তথাপি এশিয়া এবং আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশের ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ভবিষ্যতের অতিরিক্ত জনসংখ্যার বিষয়টিকে বেশ ভাবিয়ে তুলছে।

জাতিসংঘ বিশয়টিকে অতি গুরুত্ব দিয়ে প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি নানা রকম গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের একটি সমিক্ষায় দেখা গেছে বর্তমান হারে জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে ২০৪০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর জনসংখ্যা ৯ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যেতে পারে, এবং এটা ২১০০ সালে প্রায় ১২ বিলিয়নের কাছাকাছি পৌছাতে পারে। 

পল এহরলিচ এবং অ্যান এহরলিচ ( “জনসংখ্যা বিস্ফোরণ” এর লেখক) ব্যাখ্যা করেছেন। তারা বলেছেন, পৃথিবী নামক পুরো গ্রহটিতেই ইতিমধ্যে প্রতিটি মানুষ জাতি কার্যত জনবহুল।

অপরিকল্পিত জন্মহারের কারনে আফ্রিকা এখন অত্যধিক জনবহুল। এর স্থলভুমি এবং বন দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে এবং এর দ্বারা বোঝা যায় যে মানুষের জন্য এ বিশ্বের অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ বহন করার ক্ষমতা বর্তমানের তুলনায় ভবিষ্যতে অনেক কম হবে।

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র অত্যধিক জনবহুল কারণ এটি তার স্থল এবং জলজ সম্পদ প্রতিনিয়ত হ্রাস করছে এবং অতিমাত্রায় শিল্পায়নের কারনে বৈশ্বিক পরিবেশ ব্যবস্থা ধ্বংসের জন্য শক্তিশালী অবদান রাখছে। ইউরোপ, জাপান, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং অন্যান্য ধনী দেশগুলি বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গঠনে ব্যাপক অবদান রাখছে। 

বিশ্বের বেশিরভাগ বড় বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। অপরিমিত ভূগর্ভ-স্থ পানি উত্তলনের কারনে পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গিয়েছে, ফল স্বরূপ বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব ইতোমধ্যেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। 

পৃথিবীতে জীবন বর্তমানে তার ষষ্ঠ বড় বিলুপ্তির সম্মুখীন হচ্ছে, এবং তা অতিদ্রুতই হচ্ছে। একইসাথে আমরা প্রতি বছর আনুমানিক ৩০,০০০ প্রজাতি হারাচ্ছি।

সর্বাধিক ধ্বংসাত্মক পঞ্চম বিপর্যয় ঘটেছিল, আজ থেকে প্রায় ৬.৫ কোটি বছর আগে এবং এর মাধ্যমে ডাইনোসরের নিশ্চিহ্ন হওয়ার সাথে সাথে জুরাসিক যুগের পরিসমাপ্তি ঘটে। কিন্তু সেই বিপর্যয় ছিল প্রকৃতিসৃষ্ট।

বর্তমানে আমরা যে বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছি সেটা পঞ্চমটির মতো যা গ্রহাণুর সংঘর্ষ বা অন্যান্য প্রাকৃতিক কারণে নয়, তবে অবশ্যই একটি একক প্রজাতির সৃষ্ট অপরিকল্পিত কর্মকান্ডের কারনে। আর এ প্রজাতিটি হচ্ছি আমরা “মানুষ”। 

মানুষ প্রতিক্ষণেই প্রাকৃতিক শক্তি খরচ করে চলেছে এবং এটা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের আচরনে মনে হয়, আমরা যেন ভুলেই গিয়েছি যে, এ শক্তির উৎস সীমিত এবং সত্যিই এটা অতিদ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। তবে আমাদের এটার খরচ হ্রাস করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্বব্যাপী, মাথাপিছু শক্তি খরচ ১৯৯০ থেকে ২০০৫ অবধি অতিমাত্রায় বেড়েছে, এবং এ প্রবণতাটি কখনই সুখকর নয়। 

ইস্টার দ্বীপের শিক্ষা

6691281879_d67effd43f_b.jpg
ইস্টার আইল্যান্ড

মানুষের অতিরিক্ত জনসংখ্যার প্রভাব কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা ইস্টার দ্বীপের ইতিহাস ঘাটলে আমরা সহজেই জানতে পারি। সীমাবদ্ধ সম্পদের একটি দ্বীপে বসবাসরত মানুষের অপরিকল্পিত জীবনধারা, তাদের অস্তিত্বকেই শেষ করে দিয়েছিলো।

একসময় দ্বীপটি বিভিন্ন উদ্ভিদ এবং প্রাণীর বিভিন্ন প্রজাতি এবং উর্বর লাভা সৃষ্ট মাটির জন্য জনসাধারনের বসবাসের পক্ষে ভিশন অনুকুল হয়ে ওঠে এবং এগুলোই পরবর্তীতে প্রাপ্তির ক্ষেত্রে খুব কঠিন হয়ে পড়ে। একসময় দ্বীপের জনসংখ্যা শীর্ষস্থানে পৌঁছায় এবং সেটা একসময় ৭০০০ থেকে ২০,০০০ জনের মধ্যে ছিল।

কাঠ খোদাই করা, পাথরের মাথা পরিবহনের জন্য কাঠের যানবাহন প্রস্তুত করা, ক্যানো তৈরি এবং কাঠের স্লিডের জন্য গাছ কাটা প্রভৃতির কারনে পরিচিতি পাওয়া ইস্টার আইল্যান্ড, এসব কাজের জন্য দ্বীপের বনভুমি উজার করাতে বেশি মনোযোগী ছিল।

বন উজাড় করার কারণে দ্বীপবাসীদের দড়ি এবং সমুদ্র সৈকতে ক্যানো তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাঠের সংস্থান এক সময় শেষ হয়ে যায় এবং ক্যানো তৈরি করতে না পারার কারনে সমুদ্রের মাছ ধরা একসময় অকার্যকর হয়ে পড়ে। এছাড়া দ্বীপপুঞ্জের আর কোথাও যাওয়ার যায়গাও ছিল না।

বনাঞ্চল উজারের ফলে সমুদ্রের পাখি, স্থল পাখি, টিকটিকি এবং শামুক মুছল প্রভৃতি প্রানিকুল তাদের অস্তিত্ব হারায়। বন উজাড়ের ফলে ভাঙ্গনও শুরু হয়, যার ফলে ফসল ফলানো একসময় অসম্ভব হয়ে পরেছিল। পর্যাপ্ত খাবার গ্রহন করতে না পারায় একসময় জনসংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে।

একটি সমৃদ্ধ জাতি, যারা সে সময় ঐসব পাথরের মূর্তি স্মৃতিস্তম্ভগুলি তৈরি করেছিল তারা একসময় সংখায় কমে গিয়ে নৃশংসতায় জরিয়ে পড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় পৃথিবীর বুক থেকে।

এটা তারা কীভাবে হতে দিল? লেখক জারেড ডায়মন্ড এ বিষয়ে একটি তত্ত্ব দাড় করিয়েছেন।

তার মতে, দ্বীপবাসীরা রোলার এবং দড়ির জন্য যে বনভূমির উপর নির্ভর করত তা কেবল একদিন অদৃশ্যই হয়ে যায়নি – কয়েক দশক ধরে এটি ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। 

সে সময়, যে দ্বীপবাসী বন উজাড়ের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করার চেষ্টা করেছিল, গোত্র প্রধান, আমলা এবং প্রধানদের বাধার মুখে, তাদের আপত্তি টিকতে পারেনি, এবং তারা অব্যাহত বনাঞ্চলের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। 

তাহলে সমাধান কি?

আসলে এ প্রশ্নটি প্রত্যেকেরই তার নিজেকে করা উচিৎ। কারন নিরাপদ ভবিষ্যৎ তৈরি করা তখনই সম্ভব, যখন বর্তমানকে শাসন করা সম্ভব হবে। পরিস্থিতি ভিশন জরুরি।

১৯৯৯ সালে ওয়ার্ল্ড ওয়াচের তৎকালীন প্রধান লেস্টার ব্রাউন বলেছিলেন, “প্রশ্ন এটা নয় যে, উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ধীরে ধীরে কমবে কি না, তবে এখানকার সমাজ দ্রুত ছোট পরিবারগুলিতে স্থানান্তরিত হওয়ার কারণে বা পরিবেশগত পতনের কারণে এবং সামাজিক শৃঙ্খল ভেঙে যাওয়ার ফলে মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার ধীরে ধীরে হবে কি? । “

আমরা যে যাই বলি না কেন, আমাদের জনসংখ্যা নিজেদেরকেই কমাতে হবে। আর এ জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটি হ’ল কম বাচ্চা নেয়া। ব্যক্তিগত সম্পদের ব্যবহার কমানর ক্ষেত্রে আপনার একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগই যথেষ্ট। এতে আপনার পরিবেশগত ক্ষতি ৫% থেকে ৫০% কমাতে পারে। 

যদিও এটা ভাবাই স্বাভাবিক যে, পরবর্তী কয়েক দশক ধরে জনসংখ্যার বৃদ্ধির বেশিরভাগ অংশ এশিয়া এবং আফ্রিকাতে সংঘটিত হবে, তবুও বিশ্বব্যাপী অতিরিক্ত জনসংখ্যা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির মতোই “উন্নত” দেশগুলির জন্যও ততটাই সমস্যা।

কারন আমেরিকার দিকে তাকান, যেখানে বিশ্বের জনসংখ্যার মাত্র পাঁচ শতাংশ এখানে বাস করছে, কিন্তু তারা বিশ্বের জ্বালানীর ২৬% ব্যবহার করছে। সুতরাং বলা যায়, অতিরিক্ত জনসংখ্যার সাথে  সাথে অপরিকল্পিত সম্পদের ব্যাবহার আমাদেরকে অনেক বেশি অস্তিত্ব সংকটে ফেলছে।

বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়া সত্ত্বেও এশিয়া এবং আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশের নারীরা এখনো গর্ভ নিরোধক ব্যাবহার করতে চান না। ইউএনএফপিএ অনুসারে, এ সংখ্যা “প্রায় 200 মিলিয়ন এরও বেশি।

ওয়ার্ল্ড ওয়াচ এর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, “প্রতিটি সমাজে যেখানে তথ্য পাওয়া যায়, সেখানে দেখা যায়, যে নারীরা বেশি শিশু জন্ম দেয়, তারা সব চেয়ে কম শিক্ষিত।” তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধি রুখতে বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহন করার কথা সব সময়ই অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করা উচিৎ।

 “নারীর ক্ষমতায়ন, সকল মানুষের শিক্ষার সমান অধিকার নিশ্চিত করা, জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সর্বজনীভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং সমস্ত প্রজাতিকে বেঁচে থাকার ও উন্নতি করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার একটি সামাজিক প্রতিশ্রুতি আমাদের সকলকেই আজ নিশ্চিত করতে হবে।” 

জনসচেতনতা বৃদ্ধি অপরিহার্য। যদিও অনেক পরিবেশবাদী সংগঠন ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপের দিকে মনোনিবেশ করে থাকে তবে, অনেকে দ্বিমত এবং বাধার মুখে এ পদক্ষেপ গুলো হুমকির মুখে পড়ে। অতিরিক্ত জনসংখ্যার বিষয়টি অনেক বেশি বিতর্কিত বলে অনেকেই মনে করে থাকেন।

কেউ কেউ দাবি করেন যে এখানে কোনও সমস্যা নেই, আবার কেউ কেউ এটিকে তৃতীয় বিশ্বের সমস্যা হিসাবে দেখেন। তবে এ সমস্যা সবসময়ই থাকবে, এবং আমাদের সকলেরই সঠিক কাজ করে যেতে হবে।

 

তথ্যসুত্রঃ- https://en.wikipedia.org/wiki/Human_overpopulation

https://www.conserve-energy-future.com/causes-effects-solutions-of-overpopulation.php

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top