আয়তনে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম ১৫ টি দেশ

এখানে এমন ১৫ টি দেশ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে যাদের মোট আয়তন বাংলাদেশের কোন একটি ছোট শহরের চাইতেও ছোট। আমরা অনেকেই হয়তো জানি পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশটির কথা। কিন্তু এই ছোট দেশটি থেকেও খুব একটা ছোট নয় অন্য ছোট দেশগুলো।

 

ভ্যাটিকান সিটি থেকে বারবাডোজ পর্যন্ত এই ছোট দেশগুলি তাদের স্বাধীনতা বজায় রেখেছে এবং বিশ্বের অর্থনীতি, রাজনীতি এবং এমনকি মানবাধিকারের উদ্যোগে তাদের অবদান তারা ভালোভাবেই প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই দেশগুলির মধ্যে একটি ছাড়া অন্য সমস্ত দেশগুলো জাতিসংঘের পূর্ণাঙ্গ সদস্য। তো চলুন জেনে নেই এই ১৫টি দেশ সম্পর্কে।

 

১। ভ্যাটিকান সিটি (আয়তনঃ ০.২ বর্গ মাইল)।

ভ্যাটিকান সিটি

বিশ্বের ক্ষুদ্রতম দেশের মধ্যে ১ম স্থানে আছে ভ্যাটিকান সিটি – যা প্রকৃতপক্ষে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম দেশ  হলেও ধারনা করা যায় ধর্মের দিক থেকে সবচেয়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্র। ভ্যাটিকান সিটিকে মনে করা হয় রোমান ক্যাথলিক গির্জার আধ্যাত্মিক কেন্দ্র এবং পোপের আবাসস্থল হিসাবে। ভ্যাটিকান সিটি- অফিসিয়ালি দ্য হোলি সি নামে পরিচিত, এটি ইতালীর রাজধানী রোমে অবস্থিত।

 

ভ্যাটিকান সিটির জনসংখ্যা প্রায় ৮০০ জন, যাদের মধ্যে কেউই স্থানীয় স্থায়ী বাসিন্দা  নয়। প্রায় সবাই কাজের জন্য এখানে এসেছে। ইতালির সাথে ল্যাটরান চুক্তির পরে ১৯২৯ সালে ভ্যাটিকান সিটি আনুষ্ঠানিকভাবে অস্তিত্ব লাভ করে। এ দেশের সরকারী প্রধান হলেন পোপ। ভ্যাটিকান সিটি তার নিজের পছন্দ অনুযায়ী জাতিসংঘের সদস্য নয়।

 

২। মোনাকো (আয়তনঃ ০.৭৭ বর্গ মাইল)।

মোনাকো

মোনাকোর অবস্থান দক্ষিণ-পূর্ব ফ্রান্স এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যেবর্তী অঞ্চলে। দেশটির একটি মাত্র শহর মন্টি কার্লো যা এদেশের রাজধানী। এখানে মূলত বিশ্বের কিছু ধনী ব্যক্তিদের জন্য রিসোর্ট অঞ্চল তৈরি করার জন্য বিখ্যাত হয়েছে। কাসিনো, ছোট ছোট সমুদ্র সৈকত ঘেরা এ দেশটি শুধুমাত্র বিনোদনের জন্যই গড়ে উঠেছে বলা যায়।

 

৩। নাউরু: (আয়তনঃ ৮.৫ বর্গ মাইল)।

উপরের ২টি দেশ থেকে নাউরু বেশ বড় এটা বলাই যায়। ১৯৬৮ সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে স্বাধীন হওয়া এ দেশটির অবস্থান ওশেনিয়া অঞ্চলে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে। আয়তনের দিক দিয়ে নাউরু বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ দেশ। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১১,০০০ জন। দেশটি বিশ শতকের গোড়ার দিকে সমৃদ্ধ ফসফেট খনির জন্য বিখ্যাত ছিল।

 

৪। টুভালু: (আয়তনঃ ১০ বর্গ মাইল)।

টুভালু

এ দেশটির অবস্থানও দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। টুভালু দেশটি নয়টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। অদ্ভুত বাপার হল এ দ্বীপ এলাকায় কোন স্রোত এর অস্তিত্ব নেই এবং কোন নদীরও দেখা মেলে না। দ্বীপগুলো প্রবাল প্রাচীরে ঘেরা থাকায় এখানে পানীয় জলের কোন উৎস্য নেই।

 

এখানকার মানুষ  বিভিন্ন নালা তৈরি করে বৃষ্টির পানি ধরে খাবার পানি হিসেবে ব্যাবহার করে থাকে। এবং এটা স্টোরেজ করে রাখার জন্য বাবস্থা করা আছে। টুভালুর জনসংখ্যা প্রায় ১২,০০০, যার ৯৯ শতাংশ পলিনেশিয়ান। এই ছোট দেশের রাজধানী ফুনাফুতি, এটিও টুভালুর বৃহত্তম শহর। এর অফিসিয়াল ভাষা হ’ল টুভালুয়ান এবং ইংরেজি।

 

৫। সান মেরিনো:(আয়তনঃ ২৪ বর্গ মাইল)।

সান মেরিনো, পুরোপুরি ইতালি দ্বারা বেষ্টিত। এজন্য অনেকে ইতালিকে ৩টি দেশের সমন্বয় রাট্র বলে থাকে। চতুর্থ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত এই দেশটি ইউরোপের প্রাচীনতম রাষ্ট্র হিসাবে অনেকদিন থেকেই দাবি করে আসছে। সান মেরিনোর জনসংখ্যা প্রায় ৩২,০০০। 

 

৬। লিচটেনস্টাইন (আয়তনঃ ৬২ বর্গ মাইল)।

লিচটেনস্টাইন

ইউরোপীয় অঞ্চলের আর একটি ছোট দেশ হল লিচটেনস্টাইন, দেশটি সুইজারল্যান্ড এবং অস্ট্রিয়ার মধ্যবর্তী আল্পস-এর প্রায় ৬২ বর্গ মাইল অঞ্চল জুরে অবস্থিত। প্রায় ৩৬,০০০ জনের এই ছোট দেশটি রাইন নদীর পাশে অবস্থিত এবং ১৮০৬ সালে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করে।

 

দেশটি ১৮৮৮ সালে তার সেনাবাহিনীকে বিলুপ্ত করে দেয় এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিরপেক্ষ ও অবিচ্ছিন্ন থাকে। লিচটেনস্টাইনে একটি বংশগত সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রচলিত রয়েছে, তবে একজন প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিদিনকার কাজ পরিচালনা করেন।

 

৭। মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ (আয়তনঃ ৭০ বর্গ মাইল)।

প্রশান্ত মহাসাগরের ৭,৫০,০০০  বর্গ মাইল জুরে বিস্তৃত জলরাশির মাঝে বিশ্বের সপ্তম ক্ষুদ্রতম দেশ মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, পাঁচটি প্রধান দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে। মার্শাল দ্বীপপুঞ্জটি হাওয়াই এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। ৬৮,০০০ জনসংখ্যার এ দেশটি ১৯৮৬ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে।

 

৮। সেন্ট কিটস এবং নেভিস (আয়তনঃ ১০৪ বর্গ মাইল)।

.১০৪ বর্গমাইলের সেন্ট কিটস এবং নেভিস ১৯০৩ সালে যুক্তরাজ্য থেকে তাদের স্বাধীনতা অর্জন করে। ৫০,০০০ বাসিন্দাদের নিয়ে এ দেশটি বর্তমানে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ এর অংশ। সেন্ট কিটস এবং নেভিস গঠিত হয়েছে দুটি প্রাথমিক দ্বীপের সমন্বয়ে, এর মধ্যে সেন্ট কিটস এবং নেভিস হ’ল ৫০,০০০ বাসিন্দার একটি ক্যারিবিয়ান দ্বীপ দেশ।

 

পুয়ের্তো রিকো এবং ত্রিনিদাদ ও টোবাগো-এর মধ্যবর্তী ক্যারিবিয়ান সাগরে অবস্থিত সেন্ট কিটস এবং নেভিস, অঞ্চল এবং জনসংখ্যার ভিত্তিতে আমেরিকার বৃহত্তম দেশ।

 

৯। সিসিলিশ (আয়তনঃ ১০৭ বর্গ মাইল)।

সিসিলিশ ১৯৭৬ সালে যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। ভারত মহাসাগর দ্বীপপুঞ্জের একটি দেশ সিসিলিশ। দেশটির জনসংখ্যা ৮৮,০০০। ভিক্টোরিয়া হল সেশেলসের রাজধানী এবং বৃহত্তম শহর। এটি মাদাগাস্কারের উত্তর-পূর্বে এবং আফ্রিকার মুল ভুখন্ড থেকে প্রায় ৯৩২ মাইল পূর্বে অবস্থিত।

১০০ টিরও বেশি ক্রান্তীয় দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত এ দেশটি আফ্রিকার অংশ হিসাবে বিবেচিত এবং আফ্রিকার  সবচেয়ে ছোট দেশ।

 

১০। মালদ্বীপ (আয়তনঃ ১১৫ বর্গ মাইল)।

মালদ্বীপ

দক্ষিন এশিয়ার অন্তর্ভুক্ত এ দেশটি দ্বীপ দেশ হিসেবেও পরিচিত। ভারত মহাসাগরের ১০০০ টি দ্বীপের মধ্যে প্রায় ২০০ টি দ্বীপ নিয়ে মালদ্বীপ গঠিত। অদ্ভুত সুন্দর এ দেশটিতে প্রায় ৪,০০,০০০ মানুষের বাস। পর্যটন খাত এ দেশটির প্রধান আয়ের উৎস।

 

১৯৬৫ সালে মালদ্বীপ যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। বর্তমানে এই দ্বীপপুঞ্জের জন্য প্রধান উদ্বেগ এর বিষয় হচ্ছে জলবায়ু। মাত্র ৭.৮ ফুট উচ্চতার এ দেশটি জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রে বিলিন হয়ে যাবার ঝুকিতে আছে।

 

১১। মাল্টা (আয়তনঃ ১২২ বর্গ মাইল)।

মাল্টা, যা সরকারীভাবে রিপাবলিক অফ মাল্টা নামে পরিচিত এবং এর রাজধানী ভ্যালেটা। দক্ষিণ ইউরোপে অবস্থিত এটি একটি দ্বীপ দেশ। মাল্টা বিশ্বের বৃহত্তম এবং ঘনত্বের দিক দিয়ে সর্বাধিক জনবহুল দেশগুলির মধ্যে একটি, যার জনসংখ্যা ৪,৭৫,০০০ এরও বেশি। মাল্টা  সিসিলি দ্বীপের প্রায় ৫৮ মাইল দক্ষিণে এবং তিউনিসিয়ার ৫৫ মাইল পূর্বে ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত।

 

১২। গ্রেনাডা (আয়তনঃ ১৩৩ বর্গ মাইল)।

গ্রেনাডা

ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে অবস্থিত গ্রেনাডা ১৯৭৪ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসের ৭ তারিখে যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। রাজধানি সেন্ট জর্জ এবং জনসংখ্যা ১০৭,০০০। স্বাধীনের পর দেশটি মার্কিন বাহিনীর দখলে আসে। ১৯৮৩ সালে মার্কিনীদের প্রত্যাহারের পর দেশটিতে নির্বাচন  অনুষ্ঠিত হয় এবং গ্রানাডার সংবিধান পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল।

 

১৩। সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইনস (আয়তনঃ ১৫০ বর্গ মাইল)।

“পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান” সিনেমা সিরিজটির নাম আমরা অনেকেই জানি বা শুনেছি। সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইনস ভূখণ্ডটি একটি বিস্তৃত উপকুলের জন্য বিখ্যাত এবং এই সিনেমাটি চিত্রায়নের জন্য এ স্থানটি ব্যাবহার করা হয়েছিল। এই দেশটি ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর উত্তরে ক্যারিবিয়ান সাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত।

 

১৪। বার্বাডোস (আয়তনঃ ১৬৬ বর্গ মাইল)।

বলা হয়ে থাকে, বার্বাডোস কখনো ঘুমায় না। বাস্তবেই দ্বীপপুঞ্জের প্রাণবন্ত সংস্কৃতি, বিভিন্ন প্রাণবন্ত উত্সব, নাইট লাইফ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আনাগোনায় এ দেশটি সবসময়ই প্রান চঞ্চল থাকে। বার্বাডোস ভেনিজুয়েলার উত্তরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের পূর্বতম অংশে অবস্থিত।

 

এর রাজধানী ব্রিজটাউন, এবং এর জনসংখ্যা প্রায় ২৮৬,০০০। এরা ইংরেজিতে কথা বলে এবং প্রোটেস্ট্যান্ট বা রোমান ক্যাথলিক এদের প্রধান ধর্ম। দেশটির মুদ্রা আনুষ্ঠানিকভাবে বার্বাডিয়ান ডলার, তবে মার্কিন ডলারও এখানে ব্যাবহার হয়।

 

১৫। অ্যান্টিগুয়া এবং বার্বুডা (আয়তনঃ ১৭১ বর্গ মাইল)।

দেশটি আটলান্টিক মহাসাগরের অন্তর্ভুক্ত পূর্ব ক্যারিবিয়ান সাগরে অবস্থিত। এর রাজধানী সেন্ট জন’স, এবং জনসংখ্যা প্রায় ১০১,০০০। এদের সবাই সরকারী ভাষা হিসেবে ইংরেজি ব্যাবহার করে, পাশাপাশি এরা অ্যান্টিগুয়ান ক্রিওল ভাষায় কথা বলতে পারেন। দেশটি ব্রিটিশ কমনওয়েলথ এর অন্তর্ভুক্ত থাকায় এর ডাক নাম দেয়া হয় “ল্যান্ড অফ ৩৬৫ বিচ”। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top