পৃথিবীর জনসংখ্যা কত? ২০৫০ সালে জনসংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীর শীর্ষস্থানে থাকবে এমন ২০ টি দেশ

জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিভাগ প্রতিবছরই পৃথিবীর জনসংখ্যা নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। ২০১৭ সালে এ সংস্থাটি তার “ওয়ার্ল্ড পপুলেশন প্রসপেক্টস” প্রতিবেদনের একটি সংশোধনী প্রকাশ করেছে, যেখানে নিয়মিতভাবে জারি করা রিপোর্টে ভবিষ্যতে বিশ্বের জনসংখ্যা পরিবর্তন সম্পর্কে একটি আগাম ধারনা সম্বলিত ডাটা প্রকাশ করা হয়েছে।

 

প্রতিবেদনে, বিশ্ব জনসংখ্যা বৃদ্ধির ধারা বিশ্লেষণ করে,অনুমান করা হয়েছে ২১০০ সাল নাগাদ পৃথিবীর বর্তমান জনসংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে।  সাম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনের আরেকটি সংশোধনীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছে, তবে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৮৩ মিলিয়ন (৮.৩ কোটি) মানুষ মূল জনসংখ্যার সাথে যুক্ত হচ্ছে।

 

সামগ্রিকভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার

 

২০৫০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা কোথায় পৌঁছাতে পারে সে বিষয়ে জাতিসংঘ সম্প্রতি একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছে। এতে, ২০৫০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ৯.৮ বিলিয়নে পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সে সময়ের পর থেকে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হয়েছে। তবে ২০৫০ সালের পূর্ব পর্যন্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলেও আনুমান করা হয়েছে। 

 

একটি বয়সের জনসংখ্যা সামগ্রিকভাবে হ্রাস পায়, পাশাপাশি উন্নত দেশগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সাধারনত কম থাকে। যদিও বেশিরভাগ দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উন্নত দেশগুলির থেকে অনেক বেশি, তা সত্ত্বেও জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিভাগ ধারনা করছে যে, প্রকৃতপক্ষে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সে সময় হ্রাস পাবে।

 

২০১৫ সালের হিসাব মতে বিশ্বের সামগ্রিক উর্বরতার হার ছিল ২.৫%, তবে ধীরে ধীরে এটি হ্রাস পাচ্ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে, ৬০ বছরের বেশি বয়সের লোকের সংখ্যা ২০১৭ সালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাপী গড় আয়ু ছিল ৭১ বছর, তবে ২০৫০ সালে এটি বেড়ে ৭৭ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে বলে সমীক্ষায় প্রকাশ করা হয়।

 

২০৫০ সালের মধ্যে মহাদেশ এবং দেশগুলোতে জনসংখ্যার যে পরিবর্তন হতে পারে

 

বিশ্ব জনসংখ্যার পরিবর্তনের যে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, তাতে দেখা যায়, জনসংখ্যার মোট পরিবর্তনের অর্ধেকেরও বেশি ঘটবে আফ্রিকায়। এখানে ২০৫০ সাল নাগাদ আনুমানিক ২.২ বিলিয়ন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এরপর এশিয়ার অবস্থান।

 

২০১৭ সাল থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে এশিয়ার মোট জনসংখ্যার সাথে ৭৫০ মিলিয়নেরও (৭৫ কোটি) বেশি জনসংখ্যা যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর পরে রয়েছে লাতিন আমেরিকা (দক্ষিণ আমেরিকা) এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চল, এবং তারপরে রয়েছে উত্তর আমেরিকার অবস্থান। অনুমান করা হয়েছে যে, ২০১৭ সালের তুলনায় ইউরোপ হচ্ছে একমাত্র অঞ্চল যেখানে ২০৫০ সালে জনসংখ্যা কম থাকবে।

 

২০২৪ সালে ভারত জনসংখ্যায় চীনকে অতিক্রম করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এরপর থেকে, চীনের জনসংখ্যা স্থিতিশীল থাকবে এবং তারপরে ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হয়েছে। সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যার দেশ হচ্ছে নাইজেরিয়া।

 

দেশটিতে বর্তমান সময় থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যা সবচেয়ে দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে এবং ২০৫০ সালের দিকে দেশটি বিশ্বের জনসংখ্যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কে পেছনে ফেলে তিন নম্বর অবস্থান গ্রহণের পূর্বাভাস দিয়েছে।

 

২০৫০ সালের মধ্যে পঞ্চাশটি দেশের জনসংখ্যা হ্রাস পাবে এবং কমপক্ষে দশটি দেশের জনসংখ্যা  ১৫ শতাংশ বা তারও বেশি হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হয়েছে ঐ প্রতিবেদনে।, কিন্তু হ্রাস পাওয়া এ দেশগুলোর বেশিরভাগই জনবহুল নয়।

 

বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড, মোল্দোভা, রোমানিয়া, সার্বিয়া, ইউক্রেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোতে এ সময় জনসংখ্যা কমবে। স্বল্প-উন্নত দেশগুলির অ-পরিপক্ক অর্থনীতি, যথাযথ শিক্ষার অভাব, কুসংস্কার সহ বিভিন্ন কারনে এ সময়ে জনসংখ্যা বাড়বে বলে সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে।

 

২০৫০ সালে সম্ভাব্য জনবহুল ২০টি দেশ

২০৫০ সালের মধ্যে সম্ভাব্য জনবহুল ২০টি দেশের তালিকা নিচে উল্লেখ করা হল। তবে তালিকাটি সিরিয়ালি যেভাবে প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে কিছু বিষয়কে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে, সেগুলো হল, বর্তমান উর্বরতার প্রবণতা, পরের দশক গুলিতে জনসংখ্যার হ্রাসের হার,  শিশুর মৃত্যু এবং বেঁচে থাকার হার, কিশোরী মায়েদের সংখ্যা, এইডস/এইচআইভি, অভিবাসন এবং গড় আয়ু অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। 

 

  • ভারত: ১৬৫,৯০,০০,০০০
  • চীন: ১৩৬,৪০,০০,০০০
  • নাইজেরিয়া: ৪১,১০,০০,০০০
  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: ৩৯,০০,০০,০০০
  • ইন্দোনেশিয়া: ৩২,২০,০০,০০০
  • পাকিস্তান: ৩০,৭০,০০,০০০
  • ব্রাজিল: ২৩,৩০,০০,০০০
  • বাংলাদেশ: ২০,২০,০০,০০০
  • গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র: ১৯,৭০,০০,০০০
  • ইথিওপিয়া: ১৯,১০,০০,০০০
  • মেক্সিকো: ১৬,৪০,০০,০০০
  • মিশর: ১৫,৩০,০০,০০০
  • ফিলিপাইন: ১৫,১০,০০,০০০
  • তানজানিয়া: ১৩,৮০,০০,০০০
  • রাশিয়া: ১৩,৩০,০০,০০০
  • ভিয়েতনাম: ১১,৫০,০০,০০০
  • জাপান: ১০,৯০,০০,০০০
  • উগান্ডা: ১০,৬০,০০,০০০
  • তুরস্ক: ৯,৬০,০০,০০০
  • কেনিয়া: ৯,৫০,০০,০০০

 

পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা একদিকে যেমন সম্পদ, অন্যদিকে এটি অগ্রসরমান বিশ্বের জন্য বড় সমস্যা। উন্নত দেশগুলো বিষয়টি অনেক আগেই বুঝতে পেরে এ সম্পর্কে যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল, তার ফলাফল তারা অনেক আগে থেকেই পেতে শুরু করেছে।

 

আপনি শুধুমাত্র আবেগের বশবর্তী হয়ে জনসংখাকে ক্রমান্বয়ে বাড়তে দিতে পারেন না। আপনাকে এর অসুবিধার কথাগুলো প্রথমে চিন্তা করতে হবে। কোন দেশ, কোন বাক্তি বা কোন সমাজ যতই সম্পদশালী হোক না কেন, সেখানে ভোক্তার সংখ্যা যদি বেশি থেকে থাকে, তবে সে সম্পদ খুব বেশি সময় ধরে দীর্ঘস্থায়ী হয় না।

 

আপনি যদি লিস্টের দিকে তাকান তবে বাংলাদেশকে ৮ম স্থানে আবিষ্কার করবেন। আমি কি বোঝাতে চেয়েছি প্রিয় পাঠক তা অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন? একবার বাংলাদেশের দিকে তাকান, কি দেখতে পাচ্ছেন? ঘর থেকে বের হলেই সমস্যা।

 

কখনো কি ভেবেছেন এ সমসার মুলে রয়েছে আমাদের অতিরিক্ত জনসংখ্যা। শিক্ষা ব্যবস্থা, সামাজিক, অর্থনৈতিক পরিবেশ যতই উন্নত করার চেস্টা করেন না কেন। এগুলো সুষম বণ্টন অনেক বেশি মানুষের মধ্যে করা এবং এর সুফল ভোগ করা আসলেই সম্ভব নয়। 

 

তথ্য সুত্রঃ- https://en.wikipedia.org/

https://www.thoughtco.com/

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top