ভারতের জনসংখ্যা, পৃথিবীর জন্য উদ্বেগ না আশীর্বাদ

ভারত জনসংখ্যার দিক থেকে পৃথিবীর ২য় স্থানে রয়েছে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রাক্কলিত তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালের মাঝামাঝিতে ভারতের জনসংখ্যা ছিল ১৩৬.৬৪ কোটিরও বেশি, যা পৃথিবীর মোট জন সংখ্যার ১৭.৭১%।

 

২০০০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ছয় বিলিয়নের সীমানা পেরিয়ে যাওয়ার এক বছর পরেই ভারতের জনসংখ্যা এক বিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়। আসন্ন বছরগুলোতে ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনুমানিক জনসংখ্যা কত হতে পারে সে বিষয়ে জাতিসংঘ এবং বিশ্ব ব্যাংক প্রতি বছরই একটি তথ্য ভিত্তিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করে থাকে।

২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের জনসংখ্যা চীনের জনসংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে বলে গণতাত্ত্বিকরা প্রত্যাশা করছেন। সেই সময়ে ভারতের জনসংখ্যা ১.৫৩ বিলিয়ন এরও বেশি হবে এবং চীনের জনসংখ্যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে, অর্থাৎ ১.৪৬ বিলিয়ন হওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, তবে এরপর থেকে পরবর্তী বছরগুলোতে চীনের জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়া শুরু হবে।

 

ভারতের জনসংখ্যার ইতিহাস এবং সার্বিক চিত্র 

ভারতে ২০১১ সালের আদমশুমারিতে দেখা গেছে, পূর্বের দশকে দেশটির জনসংখ্যা বেড়েছে ১৮.১ কোটি। আজ থেকে তিয়াত্তর বছর আগে ভারত যখন যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে, তখন দেশটির জনসংখ্যা ছিল মাত্র সাড়ে ৫৩ কোটি কিন্তু ১৯৪৭ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ভারতের জনসংখ্যা বেড়েছে তিনগুণ।

১৯৫০ সালে ভারতের মোট উর্বরতার হার ছিল প্রায় ৬ শতাংশ(মহিলা প্রতি শিশু জন্মের হার)। সে যাইহোক, ১৯৫২ সাল থেকে ভারত তার জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে কাজ শুরু করে।

১৯৮৩ সালে প্রণীত, দেশের জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিমালার লক্ষ্য ছিল ২০০০ সালের মধ্যে মোট উর্বরতার(জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার) হার ২.১ এ নামিয়ে আনা কিন্তু এমনটি ঘটেনি।

২০০০ সালে, দেশটি জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে একটি নতুন জাতীয় জনসংখ্যা নীতি ঘোষণা করে। নীতিমালার অন্যতম প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ২০১০ সালের মধ্যে মোট উর্বরতার হার হ্রাস করে ২.১ করা।

২০১০ সালের লক্ষ্যর দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে ভারত ২০০২ সালের মধ্যে মোট উর্বরতার হার ২.৬ এ উন্নিত করতে সক্ষম হয়। কিন্তু বরাবরই ভারত জনসংখ্যার নির্ধারিত লক্ষে পৌছাতে ব্যার্থ হয়েছে। ২০১০ সালের মধ্যে মোট উর্বরতার হার ২.১ এ নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। সুতরাং, ভারতের জনসংখ্যা দ্রুত হারে বাড়তে থেকেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি ব্যুরো একটি সমীক্ষা প্রকাশ করেছে যে ২০৫০ সালে ভারত তার নির্ধারিত লক্ষ্যে হয়তো পৌছাতে সক্ষম হবে। কিন্তু এর আগে তা কোন ভাবেই সম্ভব নয়।

ভারতের উচ্চ জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ভারতীয় জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান অংশ দারিদ্র এবং নিন্ম জীবনযাত্রার কষাঘাত ভোগ করে থাকে। ২০০৭ সাল পর্যন্ত, জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে ভারত ১২৬ তম স্থান অর্জন করে, এতে একটি দেশের সামাজিক, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা বাবস্থার সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়।

 

২০৫০ সালে ভারতের জনসংখ্যা 

২০৫০ সালের মধ্যে ভারতের জনসংখ্যা আনুমানিক ১.৫ বিলিয়ন থেকে ১.৮ বিলিয়নে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হয়েছে। সুতরাং, এটা আমরা বলতেই পারি, ভারত এই পৃথিবীর প্রথম এবং একমাত্র দেশ হয়ে উঠবে যখন এ দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) এ পৌঁছাবে।

তবে একটা কথা আমাদের ভুললে চলবে না যে ২০৩০ সালে চীনের জনসংখ্যা প্রায় ১.৪৬ বিলিয়ন এ পৌঁছে শীর্ষে অবস্থান করবে। যদিও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস করার জন্য ভারত ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য তৈরি করেছে, তথাপি দেশটির জনসংখ্যা ১.৬% এ উন্নিত করতে হলে এখনো ৪৪ বছরের কম লাগবে না।

(২০৫০ সালে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর জনসংখ্যা কত ববে সে বিষয়ে লেখাটি এখান থেকে পড়ে আসতে পারেন)

 

 

তথ্য সুত্রঃ- https://en.wikipedia.org/wiki/Demographics_of_India

https://www.thoughtco.com/

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top