যদি আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হয় ওয়েলিং ওয়াল কি? আপনি যদি জানেন, তাহলে হয়তো আপনার মধ্যে কিছুটা দ্বিধা কাজ করতে পারে এই ভেবে যে এটা কি মুসলিম স্থাপনা নাকি ইহুদি স্থাপনা।
কিন্তু কোন ইসরাইলীকে যখন এ প্রশ্ন করা হবে, তখন তারা কোন দ্বিধা ছাড়াই উত্তর দিবে যে এটি বিশ্বের সকল ইহুদিদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র স্থান এবং এটি তাদের অনেক আগে প্রতিষ্ঠিত দ্বিতীয় মন্দিরের একটি অংশ। আসলে এ উভয় বিশ্বাসই ভুল।
দুই হাজার বছর আগেও যখন মন্দিরটি এখনে দাঁড়িয়ে ছিল, তখন এ প্রাচীরের অস্তিত্বই ছিল না। ধর্মপ্রাণ ইহুদীদের বিশ্বাস ওয়েলিং ওয়াল বা কোটেল হল ধ্বংস হয়ে যাওয়া মন্দিরের একমাত্র বেঁচে থাকা কাঠামো।
তবে মন্দিরের আসল অবস্থানটি অনেকটাই বিতর্কিত, কিছু আরব এই প্রাচীরটি, প্রাচীন মন্দিরের অন্তর্গত বলে দাবি করাকে স্বীকার তো করেই না বরং, এটা আল-আকসা মসজিদের প্রধান কাঠামোর অংশ বলেও অনেকে যুক্তি দিয়ে বিতর্ক করে থাকেন।
উইলিং ওয়াল এর ইতিহাস
ওয়েস্টার্ন বা উইলিং ওয়াল কী তা বোঝার জন্য আপনাকে অবশ্যই তিন হাজার বছর পিছিয়ে যেতে হবে। রাজা সলোমন এই স্থানে প্রথম একটি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। মন্দিরটি মারিয়া পর্বতের চূড়ায় নির্মাণ করা হয়েছিল।
এ পাহাড়ের পাথর সম্পর্কে ইহুদিরা বিশ্বাস করত যে বিশ্ব সৃষ্টি হয়েছিল এখান থেকেই এবং এটি তাদের কাছে ফাউন্ডেশন স্টোন নামে পরিচিত ছিল। আর এটাই সেই যায়গা যেখানে আব্রাহাম তাঁর পুত্র ইসহাককে উত্সর্গ করেছিলেন আল্লাহ উদ্দেশ্যে।
খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৬ সালে ব্যাবিলনীয়রা জেরুজালেম জয় করার সাথে সাথে সেখানে অবস্থানরত ইহুদীদের বিতারিত করা হয় এবং মন্দিরটি ধ্বংস করা হয়। এর সত্তর বছর পরে, ইহুদীদের সেখানে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল এবং তারা দ্বিতীয় একটি মন্দির তৈরির কাজ শুরু করেছিল।
মন্দিরটি পুনর্নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগ পর্যন্ত এই মন্দিরটি বেশ কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছিল।
যদিও, এখানে একটি সমস্যা ছিল এমন, মন্দিরটির অবস্থান ছিল পর্বতের শিখরে এবং সেখানে আর অতিরিক্ত বিশেষ কোন যায়গা ছিল না। তখনকার শাসক ‘কিং হেরেড’ সিদ্ধান্ত নেন ঐ পর্বত শৃঙ্গের চারপাশে দেয়াল নির্মাণ করবেন।
তিনি এটি করেছিলেন এবং সেই স্থাপনায় মন্দিরটি পুনঃ নির্মিত হয়। বাস্তবিক অর্থে ওয়েস্টার্ন ওয়ালটি আসলে বড় একটি দেয়ালের ছোট্ট একটি অংশ মাত্র।
৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমানদের বিরুদ্ধে ইহুদী বিদ্রোহের সময় রোমানরা জেরুজালেম জয় করে এবং এ দ্বিতীয় মন্দিরটিও ধ্বংস করে দেয়। বিদ্রোহের পরে ইহুদীদের মন্দিরের কাছে আর ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
আসলে পবিত্র স্থান বলতে ওয়েলিং ওয়ালকে বোঝায় না বরং এ জায়গাটি ইহুদীদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র হওয়ার কারণ হল মন্দিরটি এবং আজ অবধি ইহুদিদের কাছে এটি সবচেয়ে পবিত্র স্থান। অন্যদিকে, উইলিং ওয়াল কাঠামোটি ”আল-মাবকা“ বা “কান্নার জায়গা” হিসাবে আরবি ইতিহাসেও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

দ্য উইলিং ওয়াল আরব-ইস্রায়েলের অন্যতম দ্বিমত পোষণ করার একটি বিশেষ ক্ষেত্র। কারা প্রাচীরের নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং কাদের এখানে প্রবেশাধিকার রয়েছে এ নিয়ে ইহুদি ও আরবরা সবসময়ই বিতর্ক করে আসছে। অনেক মুসলমানই মনে করেন, উইলিং ওয়ালটির প্রাচীন ইহুদী ধর্মের সাথে মোটেই সম্পর্ক নেই।
সাম্প্রদায়িক ও মতাদর্শগত দাবিকে একদিকে রেখে, উইলিং ওয়াল ইহুদি এবং অন্যদের জন্য একটি পবিত্র স্থান হিসাবে ধরে নিয়ে এখানে প্রায়শই প্রার্থনা করা হয় বা আপনি এটাকে সম্ভবত এক ধরণের হাহাকারও বলতে পারেন। কখনও কখনও ধর্মপ্রাণ মানুষ দেয়ালে কাগজে লিখিত প্রার্থনা সেটে দিয়ে তাদের ভক্তি বজায় রাখে।
ইস্রায়েলের প্রাচীর সংযোজন
১৯৬৭ সালে, ছয় দিনের যুদ্ধের পরে (আরব-ইস্রায়েল যুদ্ধ), ইস্রায়েলিরা প্রাচীরের মাটির নিচে খনন শুরু করেছিল এবং প্রাচীরের আরও দুটি স্তর তৈরি করেছিল। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরপরই পবিত্র মক্কার পরে ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান আল-আকসা মসজিদের ভিত্তি নষ্ট করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
এ সময় ইসরাইলের সাথে এ ওয়াল কে কেন্দ্র করে সৌদি আরবের মদিনা, ফিলিস্তিনি ও অন্যান্য স্থানের মুসলমানদের সাথে দাঙ্গা বেধেছিল। এতে উভয় পক্ষের বেশ কিছু ক্ষতি সাধন হয়। ২০১৬ সালে ইস্রায়িলি সরকার ইহুদীদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মপ্রাণ মানুষ এখানে প্রার্থনা করতে পারবে বলে এক অধ্যাদেশ জারী করে।
ইস্রায়েলিরা প্রাচীরের চারপাশের অঞ্চলটিও পরিষ্কার করে সুন্দরভাবে সংস্কার করেছে, যা আজ দর্শকরা সেখানে গেলে দেখতে পান।
উইলিং ওয়ালে আজ দর্শকরা যা দেখছেন তা মূলত, দ্বিতীয় মন্দির সময়কালের অস্তিত্বের একটি সামান্য অংশ মাত্র(তবে এখানেও শক্তিশালী দ্বিমত রয়েছে, পাঠক কিভাবে দেখবেন সেটা তাদের নিজেদের ব্যাপার)। বর্তমানে সাইটটি সকল লোকের জন্য উন্মুক্ত এবং এখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
সুতরাং, অনেকে উইলিং ওয়ালকে কারটেল, পশ্চিম প্রাচীর বা সলোমন প্রাচীর হিসেবেও আখ্যায়িত করে থাকেন।
তথ্যসুত্রঃ- https://english.thekotel.org/
https://www.thoughtco.com/
https://en.wikipedia.org/