Jackson_Nuremberg

নুরেমবার্গ ট্রায়ালস; দ্য রোড টু জাস্টিস

নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত নুরেমবার্গ ট্রায়াল ১৯৪৫ থেকে ১৯৪৯ সালের মধ্যে জার্মানির নুরেমবার্গে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। এটি ছিল মোট ১৩ টি বিচারের একটি সিরিজ। আসামিদের মধ্যে, জার্মান নাৎসি পার্টির কর্মকর্তা এবং উচ্চপদস্থ সামরিক অফিসার অন্তর্ভুক্ত ছিল।

এছাড়া শিল্পপতি, আইনজীবি এবং ডাক্তারদেরকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের মতো অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। যদিও নাৎসি নেতা অ্যাডল্ফ হিটলার (১৯৮৯-১৯৪৫) আত্মহত্যা করেছিলেন, ফলে, তাকে বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয়নি। সেই সময় বিচারগুলির আইনী ন্যায়সঙ্গততা এবং তাদের পদ্ধতিগত উদ্ভাবন অনেকের কাছেই অনেকটা বিতর্কিত ছিল।

নুরেমবার্গের বিচার কাজের জন্য একটি স্থায়ী আন্তর্জাতিক আদালত প্রতিষ্ঠা, একটি মাইলফলক হিসাবে গণ্য করা হয়, এবং পরবর্তীকালে গণহত্যা এবং অন্যান্য মানবতা বিরোধী অপরাধের ঘটনাগুলির মোকাবিলার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির হিসাবে চিহ্নিত হয়।

দ্য রোড টু নুরেমবার্গ ট্রায়ালস

The_defendants_at_Nuremberg_Trials
The_defendants_at_Nuremberg_Trials

১৯৩৩ সালে অ্যাডলফ হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলর হিসাবে ক্ষমতায় আসার অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি এবং তাঁর নাৎসি সরকার জার্মান-ইহুদি জনগণ এবং নাৎসি রাষ্ট্রের অন্যান্য শত্রুদের উপর অত্যাচার ও নিপীড়ন চালানোর উদ্দেশ্যে তৈরি করা আইনগুলি কার্যকর করতে শুরু করেছিল।

এর পরের সময়কালে, এগুলো  ক্রমেই হিংস্র আকার ধারণ করে এবং এর ফলস্বরূপ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে, প্রায় ৬০ লক্ষের বেশি ইউরোপীয় ইহুদীকে পরিকল্পিতভাবে, হত্যা হরা হয়েছিলো।

১৯৪২ সালের ডিসেম্বরে গ্রেট ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতারা “প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে একটি যৌথ ঘোষণা জারি করেছিলেন। সেখানে ইউরোপীয় ইহুদীদের গণহত্যার কথা উল্লেখ করে বেসামরিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতার জন্য হিটলার তথা জার্মানদের দায়ী করা হয়।

সেই সাথে একটি বিচারিক কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্ট্যালিন (১৮৭৮-১৯৫৩) প্রাথমিকভাবে ৫০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ জার্মান অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ডের প্রস্তাব করেছিলেন।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল (১৮৭৪-১৯৬৫) উচ্চ পদস্থ নাৎসিদের সংক্ষিপ্ত মৃত্যুদণ্ড (বিনা বিচারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে) নিয়ে আলোচনা করেছিলেন, তবে আমেরিকান নেতারা তাকে এই বিষয়ে বুঝিয়েছিলেন যে ফৌজদারি বিচার সেই পরিস্থিতিতে আরও বেশি কার্যকর হবে। 

নুরেমবার্গ ট্রায়াল প্রস্তুত করার জন্য অনেক আইনী এবং পদ্ধতিগত সমস্যা দেখা দিয়েছিল। প্রথমত, যুদ্ধাপরাধীদের ইতোপূর্বের আন্তর্জাতিক অপরাধের নজির ছিল না। এখানে যদি আমরা একটু পেছনে ফিরে তাকাই, তাহলে দেখা যায় আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় (১৮৬১-১৮৬৫) যুদ্ধবন্দীদের অপব্যবহারের জন্য কনফেডারেট আর্মি অফিসার হেনরি ভাইজের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার মতো যুদ্ধাপরাধের মামলার মতো উল্লেখ করার মতো মাত্র একটা ঘটনা ছিল।

তবে নুরেমবার্গের বিচারের ক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্য চার শক্তির একটি গ্রুপ (ফ্রান্স, ব্রিটেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র) বিভিন্ন আইনী ঐতিহ্য এবং  অনুশীলনের মাধ্যমে আইনের একটি রুপরেখা প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়েছিলো। 

চার সদস্যের মিত্র শক্তির গ্রুপটি অবশেষে,, ১৯৪৫ সালের ৪ আগস্ট, লন্ডন চার্টার অফ ইন্টারন্যাশনাল মিলিটারি ট্রাইব্যুনাল (আইএমটি) জারি করে এবং সেই সাথে নুরেমবার্গের বিচারের জন্য বিস্তারিত আইন ও পদ্ধতি প্রনয়ন সম্পন্ন করে। বিচারের ক্ষেত্রে মূলত তিনটি অপরাধের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়।

এর প্রথমটি শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ, দ্বিতীয়টি ছিল, যুদ্ধ প্রস্তুতি, এবং সব শেষে আক্রমণাত্মক যুদ্ধ শুরু করা বা আন্তর্জাতিক চুক্তির লঙ্ঘন করা। এ সময় যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বেশ কিছু সু-নির্দিষ্ট বিষয়কে নির্ধারণ করা হয়। এগুলোর মধ্যে যুদ্ধের আইন লঙ্ঘন, নাগরিক ও যুদ্ধবন্দীদের সাথে অন্যায় আচরণ করা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ।

অর্থাৎ নাগরিকদের নির্বাসন বা রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা জাতিগত ভিত্তিতে দেশ ত্যাগে বাধ্য করার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। এটি স্থির করা হয়েছিল যে, বেসামরিক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা যেতে পারে।

জার্মান রাজ্য বাওয়ারিয়ার নুরেমবার্গ শহরটি (নুরনবার্গ নামেও পরিচিত) বিচারের জন্য নির্ধারিত স্থান হিসাবে নির্বাচিত করা হয়েছিল। এর কারণ ছিল মূলত যুদ্ধের ফলে জার্মান বিচারিক ভবন “প্যালেস অফ জাস্টিস” তুলনামূলকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। অধিকন্তু, নুরেমবার্গ ছিল বার্ষিক নাৎসি প্রচার প্রচারের স্থান; সেখানে যুদ্ধোত্তর বিচারের অনুষ্ঠান হিটলারের সরকারের তৃতীয় রাইখের প্রতীকী চিহ্ন হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিল।

আরও পড়ুনঃ- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া যেমন ছিল।

শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার: ১৯৪৫-১৯৪৬

Nuremberg_trials
Nuremberg_trials

নুরেমবার্গের বিচারের সর্বাধিক আগ্রহের বিষয় ছিল শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, যা ১৯ নভেম্বর ১৯৪৪ সাল থেকে ১৯৪৬ সালের ১ লা অক্টোবর পর্যন্ত চলেছিল। বিচারের ফর্ম্যাটটি ছিল আইনী ঐতিহ্যের একটি সংমিশ্রণ। প্রধান আমেরিকান প্রসিকিউটর ছিলেন রবার্ট এইচ জ্যাকসন। তিনি মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের সহকারি বিচারপতি ছিলেন। চার মিত্রশক্তির প্রত্যেকেই দু’জন করে বিচারক, একজন প্রধান বিচারক এবং বিকল্প বিচারক নিয়োগ করেছিলেন।

বিচারে চব্বিশ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং ছয় নাৎসি সংগঠনকে অপরাধী হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছিল ( এদের মধ্যে “গেস্টাপো,” বা হিটলারের গোপনীয় পুলিশ বাহিনী ছিল)। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনকে বিচারের জন্য চিকিত্সকরা অযোগ্য মনে করেছিল।

অন্যদিকে বিচার শুরুর আগেই আর একজন আত্মহত্যা করেছিলেন। হিটলার এবং তার শীর্ষ দুই সহযোগী, হেনরিক হিমলার এবং জোসেফ গোয়েবেলসকে বিচারের আওতায় আনার আগে ১৯৪৫ সালের বসন্তে তারা উভয়েই আত্মহত্যা করেছিলেন। আসামিদের তাদের নিজস্ব আইনজীবী বাছাই করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। 

অভিযুক্ত জার্মান ও বিচারকরা চারটি ভিন্ন ভাষায় কথা বলার সাথে সাথে বিচার প্রক্রিয়াতে একটি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের সূত্রপাত ঘটিয়েছিল। আর এটা ছিল চারটি ভাষার তাত্ক্ষণিক অনুবাদ। আইবিএম প্রযুক্তি সরবরাহ করে এবং আন্তর্জাতিক টেলিফোন এক্সচেঞ্জের পুরুষ এবং মহিলাদের নিয়োগ করে ইংলিশ, ফরাসী, জার্মান এবং রাশিয়ান ভাষায় হেডফোনগুলির মাধ্যমে অন স্পট অনুবাদ করা হয়েছিলো।

শেষ পর্যন্ত, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল তিনজনকে আসামী করে দোষী সাব্যস্ত করে। অনুপস্থিত বারোজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং অন্য দশজনকে কারাবাসের সাজা দেওয়া হয়েছিল। মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিতদের মধ্যে দশ জনকে ১৯৪৬ সালের ১৬ অক্টোবর ফাঁসি দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।

হিটলারের মনোনীত উত্তরসূরি এবং “লুফটফ্যাফ” (জার্মান বিমানবাহিনী) এর প্রধান হারমান গয়েরিং এর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগের রাতে তিনি সায়ানাইড ক্যাপসুল দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। 

পরবর্তী বিচার: ১৯৪৬-১৯৪৯

Nuremberg_Trials
Nuremberg_Trials

শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পরে নুরেমবার্গে ১২ টি অতিরিক্ত ট্রায়াল অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৪৬ সালের ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল ১৯৪৯ অবধি চলমান এই বিচারগুলি পরবর্তী নুরেমবার্গ প্রসিডিং হিসাবে একত্রে নথিভুক্ত করা হয়। এগুলো প্রথম বিচারের চেয়ে একটু পৃথক হয়েছিল। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ট্রাইব্যুনালের পরিবর্তে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে পরিচালিত হয়েছিল যা প্রধান প্রধান নাৎসি নেতাদের ভাগ্য নির্ধারণ করেছিল। এই পরিবর্তনের কারণ ছিল, চারটি মিত্র শক্তির মধ্যে ক্রমবর্ধমান মত-পার্থক্য, যা যৌথ বিচার প্রক্রিয়াকে অসম্ভব করে তুলেছিল। যদিও পরবর্তী বিচারগুলি নুরেমবার্গের প্যালেস অফ জাস্টিসে একই জায়গায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

এই কার্যক্রমে ডক্টরস ট্রায়াল (৯ ডিসেম্বর, ১৯৪৬ থেকে আগস্ট ২০, ১৯৪৭) অন্তর্ভুক্ত ছিল, যেখানে ২৩ জনকে আসামি করা হয়েছিল মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য। এ সময় যুদ্ধবন্দীদের উপর মেডিকেল পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছিলো।

বিচারক বিচারে (৫ মার্চ থেকে ডিসেম্বর ৪, ১৯৪৭), ১৬ জন আইনজীবী এবং বিচারককে তৃতীয় রাইখের নির্ধারিত আইন প্রয়োগ করে বর্ণগত বিশুদ্ধতা আনয়নের ক্ষেত্রে নাৎসি পরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছিল। জার্মান শিল্পপতিদের দাস শ্রম ব্যবহার এবং দখলকৃত দেশসমূহকে লুণ্ঠনের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিলো। 

যুদ্ধবন্দীদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার অভিযোগে অভিযুক্ত উচ্চ পদস্থ সেনা কর্মকর্তা এবং এসএস অফিসারদের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে বন্দীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ আনা হয়। পরবর্তী নুরেমবার্গের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া ১৮৫ জনের মধ্যে ১২ জন আসামীকে মৃত্যুদণ্ড, ৮ জনকে কারাগারে প্রেরণ এবং অতিরিক্ত ৭৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে ইউএসএইচএমএম জানিয়েছিল। যদিও কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে এর বেশ কিছু সংশোধন করে।

আরও পড়ুনঃ- হাইনরিখ হিমলার, হলোকাস্ট এর মুল নায়ক এবং এস এস নেতা।

নূরেমবার্গ ট্রায়ালের ভবিষ্যৎ ফল

Nuremberg_Trials2
Nuremberg_Trials2

নূরেমবার্গ ট্রায়ালে যাদের বিচার করা হয়েছিলো, তারা ছাড়াও আরও বড় অপরাধীরা নূরেমবার্গের বিচার বাব্যস্থার বাইরে থাকায় এটি অনেক ক্ষেত্রে বিতর্কিত হয়েছিল। তত্কালীন মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হরলান স্টোন এই কার্যক্রমটিকে একটি “পবিত্র জালিয়াতি” এবং একটি “উচ্চ-স্তরের লিঞ্চিং পার্টি” হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। তৎকালীন মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের সহযোগী বিচারপতি উইলিয়াম ও ডগলাস বলেছেন, নুরেমবার্গে মিত্ররা “নীতিমালার পরিবর্তে ক্ষমতা প্রয়োগ করেছিল”।

তা সত্ত্বেও, বেশিরভাগ পর্যবেক্ষক বিচারগুলি আন্তর্জাতিক আইন প্রতিষ্ঠার এক ধাপ এগিয়ে বিবেচনা করেছিলেন। নুরেমবার্গের বিচারগুলি জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশন (১৯৪৮) এবং মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা (১৯৪৮), পাশাপাশি আইন ও শুল্ক সম্পর্কিত জেনেভা কনভেনশন (১৯৪৯) এর দিকে পরিচালিত করেছিল। 

এছাড়াও, আন্তর্জাতিক সামরিক ট্রাইব্যুনাল টোকিওর জাপানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য একটি কার্যকর নজির স্থাপন করেছিল (১৯৪৬-১৯৪৮)। নাজি নেতা অ্যাডল্ফ আইচমানের ১৯৬১ সালের বিচার এবং পূর্বের যুগোস্লাভিয়া (১৯৯৩) এবং রুয়ান্ডায় (১৯৯৪) সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের জন্য ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছিলো এ ট্রাইবুনালের ভবিষ্যৎ ফল।

 

তথ্যসূত্রঃ- https://www.history.com/topics/world-war-ii/nuremberg-trials

https://en.wikipedia.org/wiki/Nuremberg_trials

https://encyclopedia.ushmm.org/content/en/article/the-nuremberg-trials

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top