দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, ব্রিটিশ রাজপরিবারের সবচেয়ে মূল্যবান রত্নগুলি নাৎসিদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য উইন্ডসর ক্যাসলের (Windsor Castle) ভূগর্ভস্থ একটি কক্ষে লুকিয়ে রাখা হয়েছিলো। এ বিষয়ে সম্প্রতি একটি নতুন তথ্যচিত্র প্রকাশিত হয়েছে।
শক্তিশালী জার্মান লুফটওয়াফের (German Luftwaffe) বিমান হামলার শিকার হয়ে রাজা ৬ষ্ঠ জর্জ (King George VI) প্যালেস স্টাফদের লন্ডন টাওয়ার থেকে ব্রিটিশ রাজ পরিবারের সর্বাধিক মূল্যবান ক্রাউন জুয়েলস (Crown Jewels) সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। জার্মান আক্রমণ থেকে এ সম্পদগুলো আড়াল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। এগুলি একটি বিস্কুট রাখার সাদামাটা টিনের বাক্সে রাখা হয়েছিল।
ইউ.কে. টাইমস (U.K. Times) এর মতে, রত্নগুলি সরিয়ে ফেলা এবং লুকানোর বিষয়টি সম্পর্কে অনেক আগে থেকেই একটি গুজব রটেছিল। সম্ভবত সবচেয়ে নিরাপদ লুকানোর জায়গাটি উইন্ডসর ক্যাসেল বলে মনে করা হয়েছিলো। এটি ইংল্যান্ডের বার্কশায়ার কাউন্টির রাজকীয় আবাসস্থল।
যদিও অনেকেই সে সময় বলেছিল যে রত্নগুলি দেশের বাইরে, বিশেষকরে কানাডায় সরিয়ে ফেলা হয়েছিল এবং সেখানকার একটি ভল্টে রাখা হয়েছিল। আবার এমনও মনে করা হয়েছিলো, এগুলো ওয়েলসের কোন একটি গুহায় লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। বিশেষকরে ডেভনশায়ার জেলের নিচে গোপন টানেলে।

তবে ক্রাউন জুয়েলস সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি খুব গোপন রাখা হয়েছিল। বিষয়টা এতটাই গোপনীয় ছিল যে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ (তখনকার এক কিশোরী রাজকন্যা) এ অমূল্য রত্নগুলি কোথায় রাখা হয়েছে সে বিষয়টি একেবারেই জানতো না। তিনি বিবিসির একটি অনুষ্ঠানের চিত্রগ্রহণের সময় সরস বিবরণে এ বিষয়টি স্বীকার করেন। এ সময় তিনি রাজ গ্রন্থাগারিক ের নিকট থেকে কিছু চিঠি পড়েছিলেন।
চিঠিতে উল্লেখ ছিল, তৎকালীন রাজ গ্রন্থাগারিক স্যার ওভেন মোর্শহেড, কুইন মেরি (রাজা ৬ষ্ঠ জর্জের মা) কে বলেছিলেন যে কীভাবে তিনি রাজ্য উদ্বোধনের বক্তব্য রাখার সময় রাজকীয় দন্ডটির সর্বাধিক মূল্যবান রত্নগুলি সরিয়ে নিয়েছিলেন।
সংসদের রয়্যাল কালেকশন ট্রাস্টের বর্ণনা অনুসারে ১৯৩৭ সালে জর্জ ষষ্ঠের রাজ্যাভিষেকের জন্য তৈরি, চিত্তাকর্ষক মুকুটটিতে ২৮৬৮ টি হীরা এবং বিভিন্ন বর্ণের পাথর সহ নানা রকম মূল্যবান পাথর সেট করা হয়েছিল। এছাড়া মুকুটটিতে ১৭ টি নীলা পাথর, ১১টি পান্না এবং ২৬৯টি মুক্তো ব্যাবহার করা হয়েছিলো।
বিশ্বাস করা হয়, প্রিন্স অফ ওয়েলস এডওয়ার্ডকে ১৩৬৭ সালে স্প্যানিশ রাজা ব্ল্যাক রুবি পাথরটি দিয়েছিলেন এবং পরে পঞ্চম হেনরির দ্বারা অ্যাগিনকোর্টের যুদ্ধের সময় তিনি তাঁর হেলমেটে পাথরটি পরেছিলেন। সেন্ট এডওয়ার্ডস, একাদশ শতাব্দীর অ্যাংলো-স্যাকসনদের হাত থেকে নীলা পাথরটি রক্ষার জন্য বাথ অলিভার একটি বিস্কুটের টিনের বাক্সে সেটি লুকিয়ে রেখেছিলেন।
যাইহোক, প্রাসাদ কর্মীরা German Luftwaffe এর হাত থেকে এ সম্পদ রক্ষার জন্য রাতের বেলা উইন্ডসর ক্যাসেলের সুরক্ষিত প্রবেশপথগুলির নীচে একটি গভীর গর্ত খুঁড়েছিলেন। ব্রুস ইউ কে টাইমসকে বলেছিলেন, “যখন নাৎসি বিমানগুলো রাতের বেলা ঊরে যেত,” তখন তারা এগুলিকে তারপলিন দিয়ে আড়াল করতো।
ইস্পাত দরজা সহ বিশেষভাবে নির্মিত একটি চেম্বারের ভিতরে, তারা রত্নগুলোকে বিস্কুট টিনে রেখে তালাবন্ধ করে দিয়েছিলো। চেম্বারটিতে একটি ট্র্যাপডোর ছিল, যার মাধ্যমে এখানে প্রবেশ করা যেত, এবং এটি আজও বিদ্যমান রয়েছে।
ক্রাউন জুয়েলসকে সুরক্ষিত রাখা ছাড়াও, ব্রিটেন এবং বিশ্বের জন্য একটি স্বস্তির খবর ছিল যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ৬ষ্ঠ কিং জর্জ সিংহাসনে ছিলেন। তার ভাই, প্রাক্তন রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড, যিনি আশেপাশের বেশ কিছু সংকট নিরসনে ব্যর্থ হয়ে ১৯৩৬ সালে বিদায় রাজ্যভার থেকে বিদায় নিয়েছিলেন।
শেষ পর্যন্ত ক্রাউন জুয়েলস এর কোন রকম দুর্ঘটনা ছাড়াই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়। রাজা ষষ্ঠ জর্জ ১৯৫২ সালে অপ্রত্যাশিতভাবে মারা যান, এবং তাঁর ২৭ বছর বয়সী কন্যা ব্রিটিশ রাজ সিংহাসনে বসেন।
তথ্যসূত্রঃ- https://www.history.com/news/british-royals-hid-crown-jewels-from-nazis-in-a-cracker-box
https://en.wikipedia.org/wiki/Crown_Jewels_of_the_United_Kingdom