অরুনিমা সিনহা প্রথম ভারতীয় এবং ব্রিটেনের ট্ম হুইটেকার এর পরে একমাত্র শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যাক্তি যিনি পা হারানোর পরেও, শুধুমাত্র নিজের মানুষিক শক্তির জোরে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন।
অরুনিমা সিনহার জন্ম হয় ২০ জুলাই ১৯৮৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌতে। তার বাবা ছিলেন ইন্ডিয়ান আর্মির একজন সদস্য এবং মা হেলথ ডিপার্টমেন্ট এ চাকরি করতেন। সাইক্লিং, ফুটবলের পাশাপাশি তিনি ভিষন ভলিবল খেলতে পছন্দ করতেন এবং ইন্ডিয়ার জাতীয় স্তরের ভলিবল খেলোয়াড় হিসেবে বিশেষ খাতিও ছিল তার।
এভাবে সব ঠিকঠাক মতই চলছিল, কিন্তু ২০১১ সালে এ সব কিছুর ছন্দ পতন ঘটে। ট্রেনে লক্ষ্ণৌ যাওয়ার পথে একদল ডাকাত হামলা করে বসে। এ সময় অরুনিমার জিনিস পত্র ছিনতাই করার সময় তিনি বাঁধা দিলে, তাকে ডাকাতরা ধাক্কা দিয়ে ট্রেন থেকে নিচে ফেলে দেয়, তিনি অন্য একটি ট্রেন ট্র্যাকে গিয়ে পরেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই আর একটি দ্রুতগতির ট্রেন তার পায়ের উপর দিয়ে চলে যায়।
হাস্পাতালে জেগে ওঠার পরে তিনি আবিস্কার করেন যে, তিনি একটি পা হারিয়েছেন। মানুষিক ভাবে বিপর্যস্ত অরুণিমা তখন ভেবে পাচ্ছিলেন না, তিনি এখন কি করবেন। একদিকে তার জীবনটা বিপর্যস্ত হয়ে গেছে, অন্য দিকে তার ভলিবল ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেল, এভাবে প্রচন্ড হতাশায় একেবারেই ভেঙে হয়ে পরেছিলেন। চার মাস চিকিৎসা নেয়ার পরে একটি বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় তিনি একটি কৃত্রিম পা সংজোযন করেন।
অরুনিমার অর্জনঃ
চিকিৎসা চলাকালিন সময়ে যখন অরুনিমা একদমই মানুষিকভাবে বিপর্যস্ত, তখন একজন মানুষ অনেক দূরে থেকেই তাকে অনুপ্রেরনা জুগিয়েছিলেন। আপনারা অনেকেই তাকে চিনবেন হয়তো।
এ বাক্তিটির নাম যুবরাজ সিং, যিনি আরুনিমার এক্সিডেন্টের কিছুদিন আগেই ক্যান্সার থেকে ফিরে এসে ভারত কে ২য় বারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন করতে সবচেয়ে বড় ভুমিকা পালন করেছেন।
অরুণিমা ভেবেছিলেন যুবরাজ সিং যদি ক্যান্সার থেকে ফিরে এসে বিশ্বকাপ জেতাতে পারে তবে তিনিও ভিন্ন দিক দিয়ে বিশ্ব জয় করতে পারবেন। হাসপাতালে থাকা কালিন সময়েই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি পর্বত আরোহন করবেন।
কৃত্তিম পা নিয়েই তিনি উত্তর প্রদেশের নেহেরু ইন্সটিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং-এর প্রাথমিক কোর্সে ভর্তি হন এবং ভালো রেজাল্ট করেন। এর পর তিনি আর থেমে থাকেন নি। কৃত্তিম পা নিয়েই বিভিন্ন পর্বত আরোহন করতে থাকেন।
তিনি আফ্রিকার কিলিমাঞ্জেরো, ইউরোপের আল্পস, অস্ট্রেলিয়ার মাউন্ট কসচুস্ক, দক্ষিন আমেরিকার আকঙ্কাগুয়া পর্বত মালা জয় করেন। অরুণিমার ভিশন একাগ্রতা ছিল যে তিনি এভারেস্ট জয় করবেন।
এ লক্ষে তিনি বাচেন্দ্রী পালের সাথে যোগাযোগ করেন এবং তার তত্ত্বাবধানে উত্তরকাশীতে ২০১২ সালে টাটা ষ্টীল এডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
বাচেন্দ্রি পাল ছিলেন প্রথম ভারতীয় মহিলা যিনি এভারেস্ট পর্বতশৃঙ্গ জয় করেছিলেন। ২১ মে ২০১৩ সাল, সকাল ১০.৫৫ মিনিট বিশ্বের প্রথম প্রতিবন্ধী মহিলা হিসেবে এভারেস্টের চুড়ায় উঠেন।
অনেক সুস্থ মানুষ যেখানে উঠতে গিয়ে নিজের জীবনটাই হারিয়েছিলেন, সেখনে কৃত্তিম একটি পা নিয়ে ৫২ দিনের পরিশ্রমের ফসল হিসেবে তিনি এ খ্যাতি অর্জন করেন। পা হারানোর ২ বছরের মাথায় এমন অর্জন স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বে বিরল। এ কৃতিত্ব স্বরূপ ২০১৫ সালে অরুনিমা সিনহা কে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সন্মান, পদ্মশ্রী পুরষ্কার প্রদান করা হয়।
তিনি শুধু এখানেই থেমে থাকেন নি, ২০১৯ সালে এন্টার্কটিকা মহাদেশের সর্বচ্চ পর্বত শৃঙ্গ ভিনসেন্ট পর্বত জয় করেছেন।
জীবন কখনো থেমে থাকে না, আমরা জীবনকে থামিয়ে রাখার চেস্টা করি মাত্র। ভয়কে জয় করে সামনে এগোলে আলোর দেখা পাওয়া যাবেই।
তথ্যসূত্রঃ- https://economictimes.indiatimes.com/news/politics-and-nation/arunima-sinha-worlds-first-woman-amputee-to-climb-the-highest-peak-of-antarctica/arunimas-determination-paid-off/slideshow/67382702.cms
https://www.bbc.com/news/world-asia-india-22751294