আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে বিশেষকরে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি অস্বস্তিকর সম্পর্কের কারণে উত্তর কোরিয়া দেশটি সাম্প্রতিক সময়গুলোতে প্রায়শই খবরের শিরোনাম হয়ে থাকে। অবাক করা বিষয় হল উত্তর কোরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয় সম্পর্কে খুব কম লোকই জানেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এর পুরো নাম হ’ল ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অফ উত্তর কোরিয়া।
এই লেখাটি পাঠকদের উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করে সাহায্য করতে পারে।
এক নজরে উত্তর কোরিয়া
- অফিসিয়াল নামঃ ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অফ উত্তর কোরিয়া
- রাজধানীঃ পিয়ংইয়াং
- জনসংখ্যাঃ ২,৫৩,৮১,০৮৫ (২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী)
- সরকারী ভাষাঃ কোরিয়ান
- মুদ্রা: উত্তর কোরিয়ান ওন(কেপিডাব্লু)
- সরকারের ধরনঃ স্বৈরশাসন, একক-দলীয় শাসন ব্যবস্থা
- জলবায়ুঃ গ্রীষ্মে ঘন বৃষ্টিপাত সহ তাপমাত্রা, এবং দীর্ঘ, তীব্র শীত পরিলক্ষিত হয়
- মোট আয়তনঃ ৬৪,৫৪০ বর্গমাইল (১,২০,৫৩৮ বর্গ কিলোমিটার)
- সর্বোচ্চ পয়েন্ট: ৯,০০২ ফুট (২,৭৪৪ মিটার) পাইকতু-সান
আরও পড়ুনঃ- উত্তর এবং দক্ষিন করিয়া, প্রকৃতপক্ষে কিভাবে বিভক্ত হয়েছিল
উত্তর করিয়া সম্পর্কে কিছু তথ্য
১. উত্তর কোরিয়া দেশটি কোরিয়ান উপদ্বীপের উত্তর অংশে অবস্থিত, যা কোরিয়া উপসাগর থেকে জাপানের সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। দেশটি চীনের দক্ষিণে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার উত্তরে অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ৪৬,৫৪০বর্গমাইল (১,২০,৫৩৮ বর্গকিলোমিটার)।
২. উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়া থেকে পৃথক হয়েছে যা কোরিয়ার যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে ৩৮ তম সমান্তরাল রেখা দ্বারা বিভক্ত হয়ে যায়। দেশটি ইয়ালু নদী দ্বারা চীন থেকে পৃথক হয়েছে।
৩. উত্তর কোরিয়ার ভূখণ্ডটি মূলত পাহাড় এবং পাহাড়ি অঞ্চল নিয়ে গঠিত যা গভীর, সরু নদীর উপত্যকাগুলি দ্বারা পৃথক করা হয়েছে। উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ শিখর, আগ্নেয়গিরি বেকডু পর্বত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯,০০২ ফুট (২,৭৪৪ মিটার) এবং যা দেশের উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত। উপকূলীয় সমভূমিগুলি দেশের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত এবং এই অঞ্চলটি উত্তর কোরিয়ার কৃষিক্ষেত্রের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
৪. উত্তর কোরিয়ার জলবায়ু মূলত শীত প্রধান, এবং দেশটির বেশিরভাগ বৃষ্টিপাত গ্রীষ্মকালে হয়ে থাকে।
৫. জুলাই ২০১৮ সালের হিসাবে উত্তর কোরিয়ার জনসংখ্যা ছিল ২৫,৩৩১,০৮৫ জন। উত্তর কোরিয়ায় গড় আয়ু ৭১ বছর।
৬। উত্তর কোরিয়ার প্রধান ধর্মগুলির মধ্যে রয়েছে বৌদ্ধ এবং কনফুসিয়ান (৫১%) ধর্ম। এছাড়া, শমনিজমের (ঝাড়ফুঁকে বিশ্বাসী) মতো ঐতিহ্যবাহী বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা ২৫%, এবং খ্রিস্টান জনসংখ্যা মাত্র ৪%। বাকি উত্তর কোরিয়ানরা নিজেদের অন্য ধর্মের অনুসারী মনে করে। এছাড়াও, উত্তর কোরিয়ায় সরকার নির্ধারিত একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী রয়েছে। উত্তর কোরিয়ার সাক্ষরতার হার ৯৯%।
৭। উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়াং, এবং এটি দেশটির বৃহত্তম শহর। উত্তর কোরিয়া একটি কমিউনিস্ট রাষ্ট্র যার একটি একক আইনসভা সংস্থা রয়েছে এবং এর নাম সুপ্রিম পিপলস অ্যাসেম্বলি। দেশটি নয়টি প্রদেশ এবং দুটি পৌরসভায় বিভক্ত।
৮। উত্তর কোরিয়ার বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান হলেন কিম জং উন, যিনি ২০১১ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর আগে তাঁর বাবা কিম জং-ইল এবং দাদা কিম ইল-সুং উত্তর করিয়ার রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন। বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান যিনি উত্তর কোরিয়ার চিরন্তন রাষ্ট্রপতি হিসাবে মনোনীত হয়েছেন।
৯। উত্তর কোরিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট জাপান থেকে কোরিয়ার মুক্তির সময় স্বাধীনতা অর্জন করে। সেপ্টেম্বর ৯, ১৯৪৮ সালে, উত্তর কোরিয়া গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তখন থেকেই দেশটি একটি পৃথক কমিউনিস্ট দেশ হয়ে ওঠে এবং কোরিয়ান যুদ্ধের সমাপ্তির পরে, উত্তর কোরিয়া একটি বদ্ধ সার্বভৌম দেশ হয়ে ওঠে। বাইরের প্রভাবকে সীমাবদ্ধ করতে “স্বনির্ভরতার” উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে উত্তর কোরিয়া।
১০. উত্তর কোরিয়া স্বনির্ভরতার দিকে মনোনিবেশ করা এবং বাইরের দেশগুলির সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বন্ধ থাকায় এর ৯০% এর বেশি অর্থনীতি সরকার নিয়ন্ত্রণ করে এবং উত্তর কোরিয়ায় উত্পাদিত ৯৫% পণ্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্প দ্বারা উত্পাদিত হয়।
এর ফলে দেশে উন্নয়ন ও মানবাধিকার সম্পর্কিত সমস্যা দেখা দিয়েছে। উত্তর কোরিয়ার প্রধান ফসল হ’ল চাল, বাজরা এবং অন্যান্য শস্য। তবে দেশটি সামরিক অস্ত্র, রাসায়নিক উপাদান এবং কয়লা, লোহা আকরিক, গ্রাফাইট এবং তামা জাতীয় খনিজ খনির উপর জোর দেয়।
তথ্যসূত্রঃ- https://en.wikipedia.org/wiki/North_Korea
https://www.aljazeera.com/topics/country/north-korea.html