পৃথিবীর মহাসাগরগুলো কি একত্রিত, না অঞ্চলভেদে ৫টি অংশে বিভক্ত?

আপনি একবার চিন্তা করুন তো, পৃথিবীতে কতগুলো মহাসগর রয়েছে? উত্তর অনেকগুলোই হতে পারে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর মহাসাগরগুলো সব একত্রে সংযুক্ত। তারা সত্যই একটি “বিশ্ব সমুদ্র” হিসেবে বিশ্বময় বিচরন করছে এবং এ জলরাশি পৃথিবী পৃষ্ঠের প্রায় ৭১ শতাংশ জুড়ে রয়েছে।

কোন প্রকার বাধা ছাড়াই সমুদ্রের এক অংশ থেকে অন্য অংশে পানি প্রবাহিত হয়। এ গ্রহের মোট জল সরবরাহের দিক দিয়ে প্রায় ৯৭ শতাংশ জল সমুদ্রগুলোই সরবরাহ করে থাকে।

 

ভূগোলবিদরা বহু বছর ধরে বিশ্বের মহাসাগরকে চার ভাগে (আটলান্টিক মহাসাগর, প্রশান্ত মহাসাগর, ভারত মহাসাগর এবং আর্কটিক মহাসাগর) বিভক্ত করে রেখেছিলেন। এই মহাসাগরগুলি ছাড়াও, তারা সমুদ্র, উপসাগর এবং মোহনা সহ লবণাক্ত জলের উৎসগুলোকে আরও অনেক ছোট ছোট ভাগে বর্ণনা করেছেন।

২০০০ সাল অবধি পঞ্চম মহাসাগরের কোন অস্তিত্ব না থাকলেও, এ সময়ের পরে বিজ্ঞানীরা ৫ম মহাসগর হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে এন্টার্কটিকার চারপাশের জলরাশিকে নামকরণ করে, দক্ষিণ মহাসাগর হিসেবে। নিচের আলোচনায় আমরা এই ৫টি মহাসগর বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চলেছি। 

 

০১। প্রশান্ত মহাসাগর

প্রশান্ত মহাসাগর এখন পর্যন্ত বিশ্বের বৃহত্তম মহাসাগর, যার আয়তন ৬,০০,৬০,৭০০ বর্গ মাইল (১৫,৫৫,৫৭,০০০ বর্গ কিমি)।

সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক (The World Factbook হলো যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স (সিআইএ) এজেন্সি কর্তৃক প্রণীত একটি গবেষণাভিত্তিক রেফারেন্স বই যা বাৎসরিকভাবে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রসমূহের গবেষণামূলক বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করে।) অনুসারে, এটি পৃথিবীর ২৮ শতাংশ এলাকা জুড়ে এবং পৃথিবীর প্রায় সমস্ত ভূমি অঞ্চলের সমান।

প্রশান্ত মহাসাগর পশ্চিম গোলার্ধের দক্ষিণ মহাসাগর, এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে অবস্থিত। এটির গড় গভীরতা ১৩,২১৫ ফুট (৪,০২৮মিটার), এবং এর গভীরতম বিন্দুটি জাপানের কাছে মারিয়ানা ট্রেঞ্চের চ্যালেঞ্জার ডিপ নামক স্থানে।

এই অঞ্চলটির গভীরতা ৩৫,৮৪০ ফুট (১০,৯২৪ মিটার) এবং এ স্থানটি বিশ্বের গভীরতম স্থান। প্রশান্ত মহাসাগর শুধুমাত্র তার আকারের কারনেই বিখ্যাত নয়, সেই সাথে এটি অনুসন্ধান ও অভিবাসনের একটি প্রধান ঐতিহাসিক রুট ছিল বলে বিভিন্ন অভিযাত্রীদের কাছেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

 

০২। আটলান্টিক মহাসাগর

আটলান্টিক মহাসাগর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসগর। এটির আয়তন ২,৯৬,৩৭,৯০০ বর্গমাইল (৭,৬৭,৬২,০০০ বর্গ কিমি)। এটি পশ্চিম গোলার্ধে আফ্রিকা, ইউরোপ এবং দক্ষিণ মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত। আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে বাল্টিক সাগর, কৃষ্ণ সাগর, ক্যারিবিয়ান সাগর, মেক্সিকো উপসাগর, ভূমধ্যসাগর এবং উত্তর সাগরের মতো লবনাক্ত জলাশয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

আটলান্টিক মহাসাগরের গড় গভীরতা ১২,৮৮০ ফুট (৩,৯২৬ মিটার)। এর গভীরতম বিন্দু ২৮,২৩১ ফুট (৮,৬০৫ মিটার) যা পুয়ের্তো রিকো ট্রেঞ্চ নামে পরিচিত।

আটলান্টিক মহাসাগর বিশ্বের আবহাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ (সমস্ত মহাসাগর হিসাবে) কারণ শক্তিশালী আটলান্টিক হারিকেনগুলি প্রায়শই আফ্রিকার কেপ ভার্দে উপকূলে সৃষ্টি হয় এবং ভয়ংকর আকার ধারন করে আগস্ট থেকে নভেম্বর অবধি ক্যারিবিয়ান সাগরের দিকে অগ্রসর হয়, এবং আঘাত হানে।

 

০৩। ভারত মহাসাগর 

ভারত মহাসাগর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সমুদ্র এলাকা এবং এর আয়তন ২,৬৪,৬৯,৯০০ বর্গমাইল (৬,৮৫,৬৬,০০০ বর্গ কিমি) এ মহাসাগর আফ্রিকা, দক্ষিণ মহাসাগর, এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে অবস্থিত। ভারত মহাসাগরের গড় গভীরতা ১৩,০০২ ফুট (৩,৯৬৩ মিটার) এবং জাভা ট্রেঞ্চ হল এর গভীরতম বিন্দু বা গভীরতম স্থান। এ ট্রেঞ্চের গভীরতা ২৩,৮১২ ফুট (৭,২৫৮ মিটার)।

ভারত মহাসাগরের জলরাশির মধ্যে আন্দামান, আরব, ফ্লোরস, জাভা এবং লোহিত সাগর যেমন বিদ্যমান, পাশাপাশি বঙ্গোপসাগর, গ্রেট অস্ট্রেলিয়ান বাইট, অ্যাডেন উপসাগর, ওমান উপসাগর, মোজাম্বিক চ্যানেল এবং পার্সিয়ান উপসাগরও এর মধ্যে অবস্থিত।

ভারত মহাসাগর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চলে আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটানোর জন্য দায়ী, এছাড়া এ অঞ্চলে ঢোকার ঐতিহাসিক চোকপয়েন্টগুলির (সংকীর্ণ আন্তর্জাতিক নৌপথ)  কারণে ভারত মহাসগর পরিচিত।

 

০৪। দক্ষিণ মহাসাগর

অন্যান্য মহাসাগরের থেকে দক্ষিণ মহাসাগরকে পরে নির্ধারণ করা হলেও বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মহাসাগর এটি । ২০০০ সালে, আন্তর্জাতিক জলবিদ্যুৎ সংস্থা (International Hydrographic Organization) পঞ্চম মহাসাগর এর সীমানা নতুনভাবে নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এটি করতে গিয়ে প্রশান্ত মহাসাগর, আটলান্টিক এবং ভারত মহাসাগর থেকে সীমানা/অঞ্চল নেওয়া হয়েছিল।

দক্ষিণ মহাসাগরটি অ্যান্টার্কটিকার উপকূল থেকে ৬০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। এটির আয়তন মোট ৭৮,৪৮,৩০০ বর্গমাইল (২,০৩,২৭,০০০ বর্গ কিমি) এবং গড় গভীরতা ১৩,১০০ থেকে ১৬,৪০০ ফুট (৪,০০০ থেকে ৫,০০০ মিটার) পর্যন্ত।

 

দক্ষিণ মহাসাগরের গভীরতম বিন্দুর নাম এখনো নির্ধারণ করা হয়নি, তবে এ মহাসাগরের দক্ষিণ স্যান্ডউইচ পরিখার দক্ষিণ প্রান্তের গভীরতা ২৩,৭৩৭ ফুট (৭,২৩৫ মিটার) নির্ধারণ করা হয়েছে। অ্যান্টার্কটিক সার্কেলের কারেন্ট(স্রোত) বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র স্রোত হিসেবে পরিচিত, যা পূর্ব দিকে প্রবাহিত এবং এর দৈর্ঘ্যে ১৩,০৪৯ মাইল (২১,০০০ কিলোমিটার)।

 

০৫। আর্কটিক মহাসাগর

আর্কটিক মহাসাগরকে আবার উত্তর মহাসাগরও বলা হয়ে থাকে। আর্কটিক মহাসাগরের আয়তন ৫৪,২৭,০০০ বর্গমাইল (১,৪০,৫৬,০০০ বর্গ কিমি) এবং এটি ৫ম বৃহত্তম মহাসাগর। এটি ইউরোপ, এশিয়া এবং উত্তর আমেরিকার মধ্যে বিস্তৃত। এর জলের বেশিরভাগ অংশটি আর্কটিক সার্কেলের উত্তরে অবস্থিত। এর গড় গভীরতা ৩,৯৫৩ ফুট (১,২০৫ মিটার)।

আর্কটিকের গভীরতম বিন্দু হল ফ্রেম বেসিন, যার গভীরতা ১৫,৩০৫ ফুট (৪,৬৬৫ মিটার)। বছরের বেশিরভাগ সময়, আর্কটিক মহাসাগরের বেশিরভাগ অংশটি চলমান মেরু আইসপ্যাক দিয়ে ঢাকা পরে থাকে যা গড়ে দশ ফুট (তিন মিটার) পুরু।

তবে, পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে মেরু অঞ্চলগুলি উষ্ণতর হয় এবং গ্রীষ্মের মাসগুলিতে বরফের বেশিরভাগ অংশ গলে যায়। উত্তর-পশ্চিম প্যাসেজ এবং উত্তর সি রুটটি ঐতিহাসিকভাবেই বাণিজ্য ও অনুসন্ধানের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসাবে পরিচিত।

 

তথ্যসুত্রঃ- https://www.thoughtco.com/

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top