আপনি যখন পৃথিবীর মানচিত্রের দিকে তাকাবেন, এবং সেখানে পৃথিবীর বড় দেশ কোনটা সেটা যদি খুঁজতে থাকেন। তাহলে আমি নিশ্চিত আপনি রাশিয়ার দিকেই তাকিয়ে আছেন। কিন্তু যখন আপনি বড় দেশগুলোর একটি তালিকা প্রস্তুতের কথা ভাববেন, এবং এটা যদি ম্যাপে খুঁজতে থাকেন তবে আপনাকে একটু দ্বিধার মধ্যে পরতেই হবে। কেননা শুধুমাত্র মানচিত্র দেখে আপনি কখনই বড় দেশ গুলো সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারনা পাবেন না।
আপনি ভাবলে অবাক হবেন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ রাশিয়ার প্রতিবেশী, তবে এটি রাশিয়া থেকে মাত্র দুই-তৃতীয়াংশই বড়। আপনাদেরকে পৃথিবীর এমন ১০ টি দেশ সম্পর্কে এখানে জানাতে চলেছি, যে দেশ গুলো আয়তনের দিক দিয়ে সবচেয়ে বড়।
১। রাশিয়া
রাশিয়া, ১৯৯১ সালে সভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পর যার জন্ম। সভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পূর্বে এটি পৃথিবীর মোট ভু-ভাগের এক পঞ্চমাংশ জায়গা জুরে বিস্তৃত ছিল। ১৯৯১ সালের পর যেসব দেশ নতুন জন্ম নিয়েছে, ৯ম শতাব্দির পর থেকে তাদের শিকর কিন্তু এ রাশিয়াতেই অবস্থিত।
এক নজরে রাশিয়া
- আয়তন: ৬৫,৯২,৭৭১ বর্গ মাইল
- জনসংখ্যা: ১৪,৪৩,৫৫,৪১৫ জন (প্রায়)
- রাজধানী শহর: মস্কো
- স্বাধীনতার তারিখ: ২৪ আগস্ট, ১৯৯১
- প্রাথমিক ভাষা: রাশিয়ান (অফিসিয়াল), তাতার, চেচেন
- প্রাথমিক ধর্ম: রাশিয়ান অর্থোডক্স, মুসলিম
- জাতীয় প্রতীক: ভালুক, দ্বিগুণ মাথা .গল
- জাতীয় রঙ: সাদা, নীল এবং লাল
- জাতীয় সংগীত: “গিমন রসসিস্কয় ফেদারাস্তি” (রাশিয়ান ফেডারেশনের জাতীয় সংগীত)
২। কানাডা
একটা কথা প্রচলিত আছে যে ব্রিটিশরা সব সময়ই অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকে। এটা কেন বললাম? দেখুন পৃথিবীর ২য় বৃহত্তম দেশ কানাডা, আর সেখানেও তাদের পদচারনা এক সময় ছিল সমান তালে। কানাডার আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্র প্রধানের দায়িত্তে আছেন স্বয়ং রানী ২য় এলিজাবেথ।
তবে, এটি অবাক হওয়ার মতো বিষয় নয় কারণ একসময় কানাডা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। এ দেশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পৃথিবীর দীর্ঘতম আন্তর্জাতিক সিমানা ভাগ করে নিয়েছে।
এক নজরে কানাডা
- আয়তন: ৩৮,৫৪,০৮২ বর্গ মাইল
- জনসংখ্যা: ৩,৫৩,৬২,৯০৫ জন
- রাজধানী শহর: অটোয়া
- স্বাধীনতার তারিখ: ১ জুলাই, ১৮৬৭
- প্রাথমিক ভাষা: ইংরেজি এবং ফরাসী (অফিসিয়াল)
- প্রাথমিক ধর্ম: ক্যাথলিক, প্রোটেস্ট্যান্ট
- জাতীয় প্রতীক: ম্যাপেল পাতা, বিভার
- জাতীয় রঙ: লাল এবং সাদা
- জাতীয় সংগীত: “ও, কানাডা”
৩। যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর ৩য় বৃহত্তম দেশ। আসলে আলাস্কা রাজ্য যদি আমেরিকার অংশ না হতো তবে কখনই দেশটি আয়তনে এ অবস্থায় যেতে পারতনা। ৩০ শে মার্চ, ১৮৬৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়ান সাম্রাজ্যের কাছ থেকে আলাস্কাকে ৭.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রতি একর প্রায় দুই সেন্টে ($ ৪.৭৪ / কিমি ২) কিনেছিল।
১৯৫৯ এটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৯ তম রাজ্য হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এবং ক্যালিফোর্নিয়ার থেকেও বড় আলাস্কার আয়তন ৬,৬০,০০০ বর্গমাইলেরও বেশি।
এক নজরে যুক্তরাষ্ট্র
- আয়তন: ৩,৭১৭,৭২৭,বর্গ মাইল
- জনসংখ্যা: ৩২,৩৯,৯৫,৫২৮ জন
- রাজধানী শহর: ওয়াশিংটন, ডিসি
- স্বাধীনতার তারিখ: ৪ জুলাই, ১৭৭৬
- প্রাথমিক ভাষা: ইংরেজি, স্প্যানিশ
- প্রাথমিক ধর্ম: প্রোটেস্ট্যান্ট, রোমান ক্যাথলিক
- জাতীয় প্রতীক: টাক ঈগল
- জাতীয় রঙ: লাল, সাদা এবং নীল
- জাতীয় সংগীত: “দ্য স্টার-স্প্যান্ডলড ব্যানার”
৪। চীন
বিশ্বের বৃহত্তম মানব-নির্মিত কাঠামো, মহাপ্রাচীরর দেশ চিনের রাজধানী, বেইজিং। চিন পৃথিবীর ৪র্থ বৃহত্তম দেশ হলেও, জনসংখ্যার দিক দিয়ে কিন্তু ১ নম্বরে রয়েছে। ১৩৭ কোটির বেশি জনসংখ্যার এ দেশে নানা ভাষা, জাতি, বর্ণ, ধর্মের মানুষ আয়তনে এশিয়ার বৃহৎ এ দেশটিতে বসবাস করে।
এক নজরে চিন
- আয়তন: ৩৭,০৪,৪২৬ বর্গ মাইল
- জনসংখ্যা: ১৩৭,৩৫,৪১,২৭৮ জন
- রাজধানী শহর: বেইজিং
- স্বাধীনতার তারিখ: ১ অক্টোবর, ১৯৪৯
- প্রাথমিক ভাষা: ম্যান্ডারিন চাইনিজ (অফিসিয়াল)
- প্রাথমিক ধর্ম: বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম
- জাতীয় প্রতীক: ড্রাগন
- জাতীয় রঙ: লাল এবং হলুদ
- জাতীয় সংগীত: “ইয়িয়ংজুন জিনসিংকু” (স্বেচ্ছাসেবীদের মার্চ সংগীত)
৫। ব্রাজিল
ফুটবল প্রিয় মানুষের কাছে বিশেষ করে বাঙ্গালীদের নিকট এ দেশটিব নাম আসলেই মনে এক ধরনের আবেগ কাজ যে করে এ কথা কেও অস্বীকার করতে পারবে না। সাম্বা নাচ, আর আমাজানের দেশ এ ব্রাজিল। দক্ষিন আমেরিকার আয়তন এবং জনসংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় দেশ ব্রাজিল।
একসময় পর্তুগীজ দের আগমনে সমৃদ্ধ হওয়া এ দেশটির ভাষাও পর্তুগীজ, এবং আপনি যদি এ দেশটির দিকে তাকান তবে বিভিন্ন বর্ণের মানুষ দেখতে পাবেন। এখানেও সে পর্তুগীজ ধারাই বহন করছে।
এক নজরে ব্রাজিল
- আয়তন: ৩২,৮৫,৬১৮ বর্গ মাইল
- জনসংখ্যা: ২০,৫৮,২৩,৬৬৫ জন
- রাজধানী শহর: ব্রাসিলিয়া
- স্বাধীনতার তারিখ: ৭ সেপ্টেম্বর, ১৮২২
- প্রাথমিক ভাষা: পর্তুগিজ (সরকারী)
- প্রাথমিক ধর্ম: রোমান ক্যাথলিক, প্রোটেস্ট্যান্ট
- জাতীয় প্রতীক: দক্ষিন ক্রস নক্ষত্রমণ্ডল
- জাতীয় রঙ: সবুজ, হলুদ এবং নীল
- জাতীয় সংগীত: “হিনো ন্যাসিয়োনাল ব্রাসিলিও” (ব্রাজিলিয়ান জাতীয় সংগীত)
৬। অস্ট্রেলিয়া
ভৌগলিক অবস্থান ছাড়াও সিডনি, মেলবোর্ন এবং গ্রেট বারিয়ার রিফ অস্ট্রেলিয়াকে সারা পৃথিবীতে অন্যতম জনপ্রিয় স্থান হিসেবে পরিচিত করার দিক দিয়ে অনেক বড় ভুমিকা পালন করেছে। রাজধানি ক্যানবেরা হলেও, অনেক কম মানুষ আছে যারা এর কথা ভালভাবে জানে।
অস্ট্রেলিয়া সমগ্র মহাদেশ দখলকারী একমাত্র দেশ। কানাডার মতো এটিও কমনওয়েলথ অফ নেশনস-এর অন্তর্ভুক্ত। ৫০ টিরও বেশি প্রাক্তণ ব্রিটিশ কলোনি এখানে বিদ্যমান ।
এক নজরে অস্ট্রেলিয়া
- আয়তন: ২৯,৬৭,১২৪ বর্গমাইল
- জনসংখ্যা: ২,২৯,৯২,৬৫৪ জন
- রাজধানী শহর: ক্যানবেরা
- স্বাধীনতার তারিখ: ১ জানুয়ারি, ১৯০১
- প্রাথমিক ভাষা: ইংরেজি
- প্রাথমিক ধর্ম: প্রোটেস্ট্যান্ট, রোমান ক্যাথলিক
- জাতীয় প্রতীক: সাউদার্ন ক্রস নক্ষত্রমণ্ডল, ক্যাঙ্গারু
- জাতীয় রঙ: সবুজ এবং সোনার
- জাতীয় সংগীত: “অ্যাডভান্স অস্ট্রেলিয়া মেলা”
৭। ভারত
পৃথিবীর বৃহত্তম ৪র্থ দেশ চিনের থেকে আয়তনে অনেক ছোট হলেও ভারতের জনসংখ্যা প্রায় চিনের কাছাকাছি। পৃথিবীর বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারত। ঐতিহাসিক ভাবে ভারত একসময় বর্তমান অবস্থানের থেকে আয়তনে বড় থাকলেও ব্রিটিশ শাসনের শেষ সময়ে ভারত বিভাগের ফলে এটি বর্তমান অবস্থা ধারন করে।
এক নজরে ভারত
- আয়তন: ১২,৬৯,০০৯ বর্গমাইল
- জনসংখ্যা: ১২৬,৬৮,৮৩,৫৯৮ জন
- রাজধানী শহর: নয়াদিল্লি
- স্বাধীনতার তারিখ: ১৫ আগস্ট, ১৯৪৭
- প্রাথমিক ভাষা: হিন্দি, বাংলা, তেলেগু
- প্রাথমিক ধর্ম: হিন্দু, মুসলিম
- জাতীয় প্রতীক: অশোকের সিংহ রাজধানী(অশোক স্তম্ভ), বেঙ্গল টাইগার; পদ্ম ফুল
- জাতীয় রঙ: জাফরান, সাদা এবং সবুজ
- জাতীয় সংগীত: “জন-গণ-মন” (আপনি সকলের মনের শাসক)
৮। আর্জেন্টিনা
ব্রাজিলের মতো এ দেশটিও বাঙ্গালির মনে এক আবেগের অভূতপূর্ব স্থান করে আছে। মারাদনার দেশ আর্জেন্টিনা। দক্ষিন আমেরিকার আয়তন এবং জনসংখ্যার দিক দিয়ে এ দেশটির অবস্থান ২য় এবং পৃথিবীর ৮ম বৃহত্তম দেশ আর্জেন্টিনা। এই দুই দেশের মধ্যে গ্রহের বৃহত্তম জলপ্রপাত ইগুয়াজু অবস্থিত।
এক নজরে আর্জেন্টিনা
- আয়তন: ১০,৬৮,০১৯ বর্গ মাইল
- জনসংখ্যা: ৪,৩৮,৮৬,৭৪৮ জন
- রাজধানী শহর: বুয়েনস আইরেস
- স্বাধীনতার তারিখ: জুলাই ৯, ১৮১৬
- প্রাথমিক ভাষা: স্প্যানিশ (অফিসিয়াল), ইতালিয়ান, ইংরেজি
- প্রাথমিক ধর্ম: রোমান ক্যাথলিক
- জাতীয় প্রতীক: মে মাসের সান
- জাতীয় রঙ: আকাশে নীল এবং সাদা
- জাতীয় সংগীত: “হিমনো ন্যাসিয়োনাল আর্জেন্টিনা” (আর্জেন্টিনার জাতীয় সংগীত)
৯। কাজাকস্থান
সভিয়েত ইউনিয়নের কথা ভুলে যাননি তো। ঠিক ধরেছেন ১৯৯১ সালে সভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পরেই এ দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। ভাবতে পারছেন নিশ্চয় সভিয়েত ইউনিয়ন কত বড় ছিল। এটি বিশ্বের বৃহত্তম ল্যান্ড-লকড জাতি।
এক নজরে কাজাকস্থান
- আয়তন: ১০,৪৮,৮৭৭ বর্গমাইল
- জনসংখ্যা: ১৮,৬০,৩৫৩ জন
- রাজধানী শহর: আস্তানা
- স্বাধীনতার তারিখ: ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৯১
- প্রাথমিক ভাষা: কাজাখ এবং রাশিয়ান (অফিসিয়াল)
- প্রাথমিক ধর্ম: মুসলিম, রাশিয়ান অর্থোডক্স)
- জাতীয় প্রতীক: সোনার ঈগল
- জাতীয় রঙ: নীল এবং হলুদ
- জাতীয় সংগীত: “মেনিন কাজাখস্তিম” (আমার কাজাখস্তান)
১০। আলজেরিয়া
পৃথিবীর দশম বৃহত্তম দেশটি আফ্রিকা মহাদেশের বৃহত্তম দেশ। যদিও আরবি এবং বারবার সরকারী ভাষা হলেও ফরাসি ভাষাও বহুলভাবে বলা হয় কারণ আলজেরিয়া প্রাক্তন ফরাসী উপনিবেশ ছিল। ১৯৬২ সালে ফরাসিদের থেকে স্বাধীন হবার পর থেকেই এখানে ইসলাম ধর্মের প্রাধান্য দেখা যায়।
এক নজরে আলজেরিয়া
- আয়তন: ৯১৯,৩৫২ বর্গ মাইল
- জনসংখ্যা: ৪,০২,৬৩,৭১১ জন
- রাজধানী শহর: আলজিয়ার্স
- স্বাধীনতার তারিখ: ৫ জুলাই, ১৯৬২
- প্রাথমিক ভাষা: আরবি এবং বারবার (অফিসিয়াল), ফরাসি
- প্রাথমিক ধর্ম: মুসলিম (সরকারী)
- জাতীয় প্রতীক: তারা এবং ক্রিসেন্ট, ফেনেক শিয়াল
- জাতীয় রঙ: সবুজ, সাদা এবং লাল
- জাতীয় সংগীত: “কাসামান” (আমরা অঙ্গীকার)
তথ্যসুত্রঃ- https://en.wikipedia.org/
https://www.thoughtco.com/