Andrea Bocelli

আন্দ্রেয়া বোসেলি (Andrea Bocelli), চোখের অন্ধকার যার জীবনের আলো নেভাতে পারেনি

আন্দ্রেয়া বোসেলির (Andrea Bocelli) জন্ম ইতালিতে ১৯৫৮ সালে। তিনি ছিলেন একাধারে গায়ক, গান রচয়িতা, অপেরা গায়ক, রেকর্ড প্রযোজনা কারি। সঙ্গিতের এ মহান স্রষ্ঠার জন্মটাই ছিল ভীষণ  চ্যালেজ্ঞের। মায়ের পেটে থাকতেই ডাক্তার তার  মা কে বলেছিল গর্ভপাত করানোর জন্য, কারন ডাক্তার আশংকা করেছিল এ সন্তান প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেবে।

কিন্তু তার মায়ের প্রচণ্ড বিরোধীতার মুখে এটা আর সম্ভব হয়নি। তবে ডাক্তারের কথা সত্যি হয়েছিল। বোসেলি জন্ম গ্রহণ করার সময়ই চোখের গ্লুকমা সমস্যা নিয়ে জন্মেছিলেন।

দুর্ভাগ্য যেন তার ছোট বেলা থেকেই পেয়ে বসেছিল। ছোট বেলায় একটি ফার্ম হাউজে তিনি তার ভাইয়ের সাথে বড় হতে থাকেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে ফুটবল খেলার সময় চোখে আঘাত পান এবং  congenital glaucoma য় আক্রান্ত হয়ে পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যান। এ সময় তিনি মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন, ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করেও তার চোখের দৃষ্টি ফেরাতে সক্ষম হননি, এভাবেই তিনি সারা জীবনের জন্য অন্ধ হয়ে যান।

কিন্তু প্রতিভা কখনো অন্ধত্তের কাছে বাধা হতে পারে না। ছোট বেলা থেকেই সঙ্গিতের প্রতি ভীষণ আগ্রহ ছিল তার। পরিবারের ছোট ছেলে হিসেবে মায়ের কাছে খুব আদরের ছিলেন তিনি, গানের প্রতি ছেলের আবেগ দেখে মা বলেছিলেন এ সঙ্গিতই তোমাকে শান্তি দেবে।

 

আন্দ্রেয়া বোসেলির (Andrea Bocelli) গায়ক হয়ে ওঠা

ঈশ্বর যেন মায়ের কথাগুলো শুনেছিল, মাত্র  ৬ বছর বয়সে আন্দ্রেয়া বোসেলি (Andrea Bocelli) পিয়ানো বাজানো শুরু করেন, তারপর বাশি, ড্রাম, গিটার , সাক্সফন সহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শিখেছিলেন। তাঁর আয়া ওরিয়ানা তাকে ফ্রাঙ্কো কোরেলির প্রথম রেকর্ড উপহার দিয়েছিল। মাত্র ৭ বছর বয়সে সঙ্গিতের বিভিন্ন স্বর গুলো আয়ত্তে আনতে শুরু করেছিলেন তিনি।

১৪ বছর বয়সে ভায়ারেগজিওয়ের মারঘেরিতা ডি অরোতে “ও ওল মিয়ো” দিয়ে প্রথম গানের প্রতিযোগিতা জিতেছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি একটি গানের প্রতিযোগিতায় প্রথম সাফল্য অর্জন  করেছিলেন: ‘ও একমাত্র মিয়ো’ পরিবেশন করে। মায়েস্ট্রো লুসিয়ানো বেত্তারিনী) এর সাথে গান গাওয়া অনুশিলনের পরে, বোসেলি তাঁর শিল্পী ফ্রাঙ্কো কোরেলির কাছে গিয়েছিলেন, যিনি সর্বদা তাকে সহযোগিতা করেছেন।

নানা প্রতিকুলতার মধ্যদিয়ে তার শৈশব কাটছিল, বাবার ব্য়াবসায় নিজেকে সামিল করেছিলেন। এর মধ্য দিয়েই তিনি ১৯৮০ সালে মাধ্যমিক স্কুল এর পড়া শেষ করেন এবং তারপরে পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। আভাব অনটনের মধ্য দিয়ে জীবন চালাতেন তিনি। পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য তিনি সন্ধ্যায় বিভিন্ন বারে পিয়ানো বাজাতেন।

 

প্রিয় পাঠক, তিনি যে অন্ধ সেটা ভুলে যাননি তো! এ অন্ধত্ত্ব নিয়েই আন্দ্রেয়া বোসেলি (Andrea Bocelli) তার জীবনে সংগ্রাম করে গিয়েছেন প্রতিনিয়ত। ১৯৮৭ সালে তার স্ত্রীর সাথে দেখা হয়। এর মধ্য দিয়েই তিনি আইন পাস করেন এবং ১ বছর আইন কাজে নিয়োজিত ছিলেন এবং সেই সাথে তিনি তার সঙ্গিত চর্চা পুরদমে চালিয়ে গিয়েছেন। 

 

১৯৮২ সাল থেকে বোসেলির শাস্ত্রীয় এবং পপ সংগীতের দুটি একক স্টুডিও অ্যালবাম বের হয়, এছাড়া তিনটি দুর্দান্ত হিট অ্যালবাম এবং নয়টি সম্পূর্ণ অপেরা রেকর্ড করেছিলেন তিনি, যার ৯০ মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী রেকর্ড গড়েছে।

 

তিনি ক্রসওভার পারফর্মার হিসাবে সাফল্য অর্জন করেছেন, ক্লাসিকাল সংগীতকে আন্তর্জাতিক পপ চার্টের শীর্ষে নিয়ে এসেছেন।

 

সংগীতে আন্দ্রেয়া বোসেলির (Andrea Bocelli) অবদান

১৯৯৮ সালে, বোসেলি পিপল ম্যাগাজিনের ৫০ জন সুন্দরতম ব্যক্তির মধ্যে একজন ছিলেন। ১৯৯৯ সালে, তিনি গ্র্যামি পুরষ্কারে সেরা নতুন শিল্পীর জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। “দ্য প্রার্থনা” হ’ল ক্যালিওন ফর অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রের জন্য সেলিন ডিওনের সাথে তাঁর যুগল পারফরমেন্স, যা সেরা অরিজিনাল গানের জন্য গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার পেয়েছিল এবং সেই সাথে সেরা অরিজিনাল গানের জন্য একাডেমি পুরস্কারে মনোনীত হয়েছিলেন তিনি।

 

Andrea Bocelli with selin dion
Andrea Bocelli with selin dion

 

সেলিন ডিয়ন, বোসেলি কে নিয়ে সুন্দর একটি উক্তি করছিলেন, তিনি বলেছিলেন  “if God would have a singing voice, he must sound a lot like Andrea Bocelli,” আসলে তিনি যথার্থ বলেছিলেন।

 

আন্দ্রেয়া বোসেলির সেরা কিছু এ্যালবাম ঃ-

  • Il mare calmo della sera (1994)
  • Bocelli (1995)
  • The Merry Widow (1999)
  • Sacred Arias (1999)
  • Cieli di Toscana (2001)
  • Amore (2006)
  • My Christmas (2009)
  • Night in Central Park (2011)
  • Passione (2013)
  • Cinema (2015)
  • Sì (2018)

 

মার্কিন ক্লাসিক্যাল অ্যালবামের চার্টে আন্দ্রেয়া বোসেলির শীর্ষ তিনটি গান স্থান করে নেয়ার কারনে, স্যাক্রেড আরিয়াস অ্যালবাম  প্রকাশের সাথে সাথে তিনি তাঁর ধ্রুপদী সঙ্গিতের কারনে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের একটি তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন।

 

বোসেলিকে ২০০৬ সালে ইতালীয় প্রজাতন্ত্রের অর্ডার অফ মেরিটের গ্র্যান্ড অফিসার করা হয়েছিল এবং লাইভ থিয়েটারে তাঁর অবদানের জন্য ২ মার্চ ২০১০ তে হলিউডের ওয়াক অফ ফেমের তারকা দিয়ে তাকে ভূষিত করা হয়। 

আন্দ্রেয়া বোসেলি ইউরোপ , আমেরিকাতে অনেক সিঙ্গেল এবং ডুয়েট কনসার্ট করেছেন। 

একজন মানুষ যে নিজের আলো হীন জীবনের মাঝেও সারা পৃথিবীতে তার সঙ্গিতের মাধ্যমে আলো ছড়িয়েছেন। 

 

“ আমরা উপরে হয়তো একজন মানুষের জীবনে চড়ে বেরিয়েছি, তার সফলতার গল্প শুনেছি, কিন্তু একটু গভীরে গেলে তার জীবনের কঠিন সংগ্রামগুলো কিন্তু আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়নি। তিনি সফলতা কিভাবে পেয়েছেন সেটা হয়তো আমাদের ভাবাবে, এবং সাথে সাথে এটাও বলবে আলো ছাড়া অন্ধকারেও যুদ্ধ করা যায় এবং জয় এখানেও আসে ”। 

 

তথ্যসূত্রঃ-  https://en.wikipedia.org/wiki/Andrea_Bocelli

                   https://www.andreabocelli.com/diary/

 https://www.britannica.com/biography/Andrea-Bocelli

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top