ইতিহাসে এমন কিছু আবিষ্কার আছে যা মানব জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। আর, এমনই একটি আবিষ্কার হল গান পাউডার। চীনে আবিষ্কার হওয়া এ বস্তুটি ছিল একটি দুর্ঘটনার ফসল।
পৌরাণিক কাহিনীর বিপরীতে, এটি কেবল আতশবাজি ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত হয় নি, আবিষ্কারের সময় থেকেই এটি সামরিক কাজে ব্যবহার করা শুরু হয়েছিল। অবশেষে, এই গোপন অস্ত্রটি মধ্যযুগেই বিশ্বের বাকী অংশের নিকট ফাঁস হয়ে যায়, এবং গান পাউডার পরিচিতি পায় ধ্বংসকারী একটি বস্তু হিসেবে।
যেভাবে গান পাউডার আবিষ্কার হয়েছিলো
চিনের প্রাচীন আলকেমিস্টরা (মধ্য যুগীয় রসায়নবিদ) প্রায় শতাব্দী ব্যাপী চেস্টার ফলে, মানব জীবনের একটি অমৃত আবিষ্কার (আসলেই সঠিক কি?) হিসেবে গানপাউডার আবিষ্কার করে। অনেকগুলি ব্যর্থ চেস্টার পরে তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সল্টপিটার(যব ক্ষার) তৈরি করে, যা পটাসিয়াম নাইট্রেট নামেও পরিচিত।
৮৫০ খ্রিস্টাব্দের কোন এক সময়, তাং রাজবংশের এক উদ্যোগী আলকেমিস্ট (যার নাম ইতিহাসে হারিয়ে গেছে) ৭৫ অংশ লবণের সাথে ১৫ শতাংশ কাঠকয়লা এবং ১০ ভাগ সালফার মিশ্রিত করে একটি নতুন বস্তু আবিষ্কার করে, কিন্তু আবিস্কারটি পরীক্ষার এক পর্যায়ে এই মিশ্রণটিতে কোনভাবে আগুনের শিখার সংস্পর্শে আসার পরে একটি ফ্ল্যাশ করে এটি বিস্ফোরিত হয়েছিল।
এই অনভিপ্রেত ঘটনায়, বেশ কিছু ক্ষতি সাধন হলেও, চীনা রসায়নবিদ্গন একটি মারাত্মক বস্তু যে আবিষ্কার করেছেন, সে বিষয়ে তাদের কোন সন্দেহ ছিলোনা। সেই যুগের একটি তথ্য অনুসারে জানা যায়, “ধোঁয়া ও আগুনে আলকেমিস্টদের হাত এবং মুখ পুড়ে যায় এবং এমনকি যেখানে যারা কাজ করছিল তারা সহ পুরো বাড়িটিও পুড়ে যায়।”
গান পাউডারের প্রথম ব্যবহার
বহু বছর ধরে পশ্চিমা ইতিহাসের বহু বইয়ে বলা হয়েছে যে, চীনারা এই আবিষ্কারটি কেবল আতশবাজি হিসেবে ব্যবহারের জন্যই তৈরি করেছিল, তবে এটি সত্য নয়। সং রাজবংশের সামরিক বাহিনী ৯০৪ সালে তাদের শত্রুর বিরুদ্ধে গানপাউডার একটি ডিভাইসের মাধ্যমে প্রথম ব্যবহার করেছিল।
ইতিহাসে এ অস্ত্রগুলিকে “উড়ন্ত ফায়ার” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এক ধরণের তীরের মাথায় গানপাউডার বেঁধে তাতে আগুন ধরিয়ে শত্রু উপর নিক্ষেপ করা হতো।
সে সময় এটির ব্যাবহার শত্রু পক্ষকে ভীত সন্ত্রস্ত করে তোলে, তারা মনে করতে থেকে, এটি কোন এক ভয়ঙ্কর যাদু। এছাড়া গানপাউডারের অন্যান্য ব্যাবহারের মধ্যে ছিল, আদিম হ্যান্ড গ্রেনেড, বিষাক্ত গ্যাসের শেল, শিখার আগুন এবং ল্যান্ডমাইনস।
প্রথমে এটি একটি ফাকা বাঁশের টুকরোকে টিউব আকারে ব্যাবহার করা হলেও, পরবর্তীতে গানপাউডার বিভিন্ন ধাতব বস্তুর মাধ্যমে ব্যাবহার শুরু হয়। ১১২৭ খ্রিস্টাব্দের একটি যুদ্ধ চিত্র থেকে এটা বোঝা যায় যে, সামরিক ক্ষেত্রে এটি ব্যাবহার প্রথম হয়েছিলো চীনে।
মধ্য শতাব্দীর শুরু থেকে থেকে একাদশ শতাব্দীর শেষের দিক পর্যন্ত সময়ে, গান পাউডার অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বন্দুক আবিষ্কারের প্রযুক্তি উদ্ভাবন সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হয়ে চীন ১০৭৬ সালে বিদেশীদের কাছে সল্টপেটর বিক্রি নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। তবুও, এ অদ্ভুত পদার্থের জ্ঞান সিল্ক রোড ধরে ভারত, মধ্য প্রাচ্য এবং ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে।
১২৮০ সালের দিকে এ বিস্ফোরক মিশ্রণটি প্রথম পশ্চিমের দেশগুলোতে প্রকাশিত হয় এবং সেই সাথে চীনের গোপন রহস্য ফাঁস হয়ে যায়।
অনেক চীনা উদ্ভাবনই শতাব্দীকাল ধরে, মানব সংস্কৃতিতে/ইতিহাসে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। কাগজ, চৌম্বকীয় কম্পাস এবং রেশমের মতো আবিস্কারগুলি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে এই আবিষ্কারের কোনওটিই গানপাউডারের মতো এতোটা প্রভাব ফেলেনি, ভাল এবং খারাপের দিক দিয়ে গানপাউডার ছিল ইতিহাসের এক অতি অবাক করা আবিষ্কার ।
তথ্যসুত্রঃ- https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_Chinese_inventions
https://www.shenyun.com/blog/view/article/e/vsCaJlGyWY0/chinese-inventions
https://www.ducksters.com/history/china/inventions_technology.php